(দ্বিতীয় ভাগ)
কিশোরীবালিকা রখনো এমন আদিমতার শিকার পিতৃতন্ত্রের নানা প্রান্তে। তার দেহ যেমন অক্ষত পেতে চায় অনেক সমাজ, আবাবা অনেক দর্শনবিজ্ঞান মনে করে সহজাতভাবেই তার দেহ বিকলাঙ্গ। প্লাতো ও তাঁর অনুসারীরা মনে করতেন নারীর শরীর নিকৃষ্ট পুরুষের শরীর থেকে; এবং উনিশশতকে অটো ভিনিঙ্গার নামের এক জর্মন বালক লিঙ্গ ও চরিত্র নামে একটি বই লিখে দেখায় কতো নিকৃষ্ট নারীর দেহ ও চরিত্র। ফ্ৰয়েড গভীর প্রভাবিত ছিলেন তার দ্বারা, এবং তারই নারীধারণাকে তিনি দিয়েছিলেন ছদ্মবৈজ্ঞানিক রূপ। ভিনিঙ্গার বইটি লিখে অল্প বয়সেই আত্মহত্যা করে, তবে তার লেখায় রূপ পায় তরুণীর দেহ ও চরিত্র সম্পর্কে পুরুষের আদিম ঘৃণা। তার চোখে নারী অভিন্ন তার দেহ ও তার অবচেতন কামের সাথে; তাই নারী পাশব। তার মতে, ‘যে-পুরুষ নারী সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করে তার পক্ষে নারী সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করা অসম্ভব; পুরুষ নারীকে ঘৃণা করে, বা তারা কখনো নারী সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবে না’। তার সিদ্ধান্ত [দ্র গ্রিয়ার (১৯৭০, ১০৫)] :
‘একটি সম্পূর্ণ নগ্ন নারীদেহ এমন অনুভূতি সৃষ্টি করে যেনো তার অভাব রয়েছে কোনো কিছুর, তার রযেছে এমন অসম্পূর্ণতা যা সৌন্দর্যের সাথে অসমঞ্জস।… নারীকে আকৃষ্ট করে কামের বিকশিত চিহ্নগুলো; সে বিকর্ষণ বোধ কবে মনের উন্নত গুণাবলির প্রতি। নারী মৌলিকভাবে লিঙ্গপূজারী।‘
তরুণের যৌনপ্রবর্তনা তার শারীর শক্তিরই প্ৰকাশ, সম্ভোগ করে সে উপলব্ধি করতে চায় পৌরুষ। তরুণী তার কামনার ভেতরে পোষণ করে লজ্জা। কেননা সে জানে। সে সম্ভোগ করবে না, তাকে সম্ভোগ করবে। পুরুষ; সে হবে পুরুষের খাদ্য। যুবক তার কামের সাফল্যে গৌরব বোধ করে, একের পর নারী সম্ভোগ করার জন্যে বোধ করে ব্যগ্ৰতা; এতে তার কোনো লজ্জা নেই। কিন্তু তরুণী লজ্জায় কুঁকড়ে থাকে, সম্ভোেগ তার জন্যে নয়। তার কামের সাফল্যের অর্থ হচ্ছে নিজের শরীরকে পুরুষের সম্ভোগের বস্তু ক’রে তোলা। তার সারা দেহ তার কাছে বিব্রতকর।
প্ৰতি মাসের রক্তক্ষরণের ফলে নিজের দেহকে তার নিজের কাছে মনে হয় বিরক্তিকর। ঋতুস্রাব তার এক প্ৰতিবন্ধকতা। প্রতি মাসে তার জীবনে একটা ব্যাঘাতের মতো দেখা দেয় ওই রক্ত। এটা তার জীবনে সৃষ্টি করে বিভীষিকা, যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে তার চেতনা জুড়ে। সে সন্দেহ করে নিজের দেহকেই, ভয়ে ভয়ে থাকে নিজের দেহ নিয়ে; নিজের দেহকে মনে করে অসুস্থ। যদিও ঋতুস্রাব এতো বিকল করার মতো ব্যাপার নয, তবু তার মনোজগতে এটা এমন বিকলন ঘটিযে দেয় যে তার সম্পূর্ণ মহাজগতই হয়ে ওঠে বিকল। নারী হওয়ার অস্বস্তি ধ্বংস ক’রে দেয় নারীর শরীর। তবে নারীর শরীর তার জন্যে প্রতিবন্ধকতা, কেননা চারপাশ চায় তার শরীর তার জন্যে হোক প্রতিবন্ধকতা। এমন শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্যে কোনো পেশা থেকে দূরে থাকার দরকার পড়ে না। এ-সময় দু-এক দিন সে অসুস্থ থাকতে পারে, কিন্তু এটা কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। এ-সময়ে অধিকাংশ নারীই তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজ ক’রে থাকে। কিন্তু ধর্ম বলে সে অশুচি, সমাজ বলে সে রুগ্ন।
সমাজ নারীর জন্যে নিষিদ্ধ ক’রে রাখে। বাইরের সমস্ত কাজ। এখন দেশে দেশে নারী বাইরের অনেক কাজ করছে, তবু অনেক দেশ রয়েছে যেখানে নারীর জন্যে বাইর সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যে-সব দেশে নারী বাইরে কাজ করতে পারছে, সেখানেও নারীর জন্যে রাখা হয় বিশেষ ধরনের কাজ। এমন কোনো কাজে নেই, যা অসম্ভব নারীর পক্ষে; কিন্তু সমাজ তাকে কাজ না দিয়ে, তার জন্যে কাজ নিষিদ্ধ করে, প্রমাণ করে সে অনুপযুক্ত বা নিকৃষ্ট। সমাজ সব দিকে তার বিকাশের পথ বন্ধ ক’রে দিয়ে প্রমাণ করে যে তার পক্ষে বিকাশ অসম্ভব। সুপরিকল্পিতভাবে সমাজ তাকে ঠেলে দেয় হীনমন্যতাগূঢ়ৈষার দিকে। মেধা, মননশীলতা, সৃষ্টিশীলতার কথা ধরা যাক।
প্রচলিত লোকবিশ্বাস হচ্ছে যে কৈশোর থেকে মেয়েদের হ্রাস পেতে থাকে মেধা, মননশীলতা, সৃষ্টিশীলতা। এ-লোকবিশ্বাস কি সত্য বা সত্য হ’লে কী কারণ রয়েছে। এর পেছনে? স্বীকার ক’রে নেয়া যাক যে বর্তমান সমাজব্যবস্থায় এটা সত্য; কিন্তু এর কারণ কি? এর কারণ নারীর জৈবসংগঠনে খুঁজলে পাওয়া যাবে না, পাওয়া যাবে সমাজসংস্থায়। এর কারণ মেয়েদের উৎসাহ দেয়া হয় না। এসব ব্যাপারে; আগে নিষেধ করা হতো, এখন নিষেধ করা না হ’লেও তাদের অনুপ্রাণিত করা হয় না। ভাইটির জন্যে সব সুযোগের ব্যবস্থা করা হয়, তার পড়াশুনোয় যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে তা দেখে পিতামাতা, এমনকি বোনটিও। বোনটির কাছে আশা করা হয় না মেধা, মননশীলতা, সৃষ্টিশীলতা; সে বিজ্ঞানী, দার্শনিক, কবি হবে এ তো আশা করাই হয় না, এমনকি সে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আমলা হবে তাও আশা করা হয় না।
তার কাছে। আশা করা হয় নারীত্ব, তার কাছে দাবি করা হয় সে হবে নারী। যে-মেয়েটি লেখাপড়া করছে, তার কাছে ভালোভাবে লেখাপড়া চাওয়া হয় না, চাওয়া হয় লেখাপড়ার সাথে সে ভালোভাবে আয়ত্ত করবে নারীর কাজগুলো। লেখাপড়া তার কোনো কাজে আসবে না, কাজে আসবে নারীর কাজগুলো। এমন প্রত্যাশা করা হয় যার কাছে, সে কী ক’রে হবে মেধাবী, মননশীল, সৃষ্টিশীল? বাসার কিশোর বা তরুণ পুত্রটির পড়াশুনো ছাড়া আর কোনো কাজ নেই, তার জীবনে আছে প্রমোদের ব্যবস্থাও। তাকে কেউ কুটোটিও নাড়তে বলে না; কিন্তু বাসার কিশোরী বা তরুণী কন্যাটিকে করতে হয় গৃহপরিচারিকার ক্লান্তিকর কাজগুলো।
ঘরকন্নার কাজগুলো হচ্ছে সবচেয়ে ক্লান্তিকর কাজ। একই কাজের পুনরাবৃত্তি চলে তাতে সারা জীবন ভরে, আর যে জড়িয়ে পড়ে ওই কাজে তার জীবন হয় ক্লান্তিকর পুনরাবৃত্তির পুনরাবৃত্তি। যে-তরুণী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে, তাকে জানতে হবে চমৎকার মাছ ভাজী; যে-কিশোরী বিদ্যালয়ে যাচ্ছে, তাকে শিখতে হবে চমৎকার শেলাই। বাসার কিশোর আর তরুণটির কাছে তা আশা করা হয় না, কিন্তু কিশোরীতিরুণীর কাছে দাবি করা হয়। ছেলেটি তার বিছানা গুছিয়ে না রাখলে মা খুশি হয়, দেখতে পায় একটি পুরুষের জন্ম হচ্ছে; কিন্তু মেয়েটি বিছানা না গোছালে একটি নারীর মৃত্যু দেখে মা আতংকিত হয়ে পড়ে।
এমন দাবি করা হয় যার কাছে তার পক্ষে মেধাবী, মননশীল, সৃষ্টিশীল হওয়া অসম্ভব। মা মেয়ের বড়ো শুভাখী, কিন্তু মা-ই মেয়ের ওপর চাপিয়ে দেয় পারিবারিক কাজের বোঝা। এতে তার কোনো অশুভ উদ্দেশ্য নেই, খুবই শুভ তার উদ্দেশ্য; মা জানে তার মেয়ের জীবন সৃষ্টিশীলতার নয়, সমাজ তাকে ওই অধিকার দেয় নি, ওই অধিকার দিয়েছে পুত্ৰকে। সমাজের বিশ্বস্ত পুলিশের মতো কাজ করে চলে মা: এবং মেয়েটিকে বন্দী করে ফেলে। কিন্তু এ-মা-ই ছেলেটিকে দেয় স্বাধীনতা। মেধাবী মেয়েটির থেকে অনেক বেশি যত্ন নেয়া হয় নির্বোধ ছেলেটির, এবং একদিন দেখা যায় নির্বোধ ছেলেটি ছাড়িয়ে গেছে মেধাবী মেয়েটিকে।
যে-কিশোরী প্রথম হয় মাধ্যমিক পরীক্ষায়, পনেরো বছর পর সেও দেখতে পায় তার থেকে অনেক সাফল্য লাভ করেছে তার সাথের সাধারণ মেধার ছেলেরা; কেননা সে ক্রমশ ছেড়ে দিয়েছে উচ্চাভিলাষ, কিন্তু ছেলেরা সমাজের প্রেরণায় ও চাপে হয়েছে উচ্চাভিলাষী। উচ্চাভিলাষের জন্যে স্বাধীনতা দরকার, কিন্তু তরুণীর জীবনে তা নেই।
সামাজিক সমস্ত প্ৰথা তরুণীর স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। অনেক দেশ আছে, যেখানে মেয়েদের জন্যে পথ নিষিদ্ধ, তারা পথে বেরোতে পারে না; বেরোলে নিজেদের ঢেকে রাখতে বাধ্য হয় বোরখার মধ্যযুগীয় অন্ধকারে; এবং অবরোধের অন্ধকারের মধ্যে কাটে তাদের জীবন। আরবদেশগুলো এখনো মেয়েদের ঢেকে রাখছে। এ-অন্ধকারে। বাঙলাদেশে বিশশতকের কয়েক দশক জুড়ে তারা থেকেছে অবরুদ্ধ। পিতৃতন্ত্রের মধ্যে মুসলমান পিতৃতন্ত্র রখনো হিংস্রভাবে রক্ষণশীল; ইরান-মধ্যপ্রাচ্যের তরুণীরা জানে না স্বাধীনতার একটি বিন্দুর স্বাদ কেমন [দ্র ফাতিমা (১৯৭৫, ১৯৮৪), নওঅল (১৯৮০)]। ফাতিমা মেরনিসসির বোরখা পেরিয়ে (১৯৭৫) ও মুসলমানের অবচেতনায় নারী (১৯৮৪), এবং নওঅল এল সাদাওয়ির হাওয়ার লুকোনো সুখ-এ (১৯৮০) ভয়াবহ বিবরণ মেলে মুসলমান তরুণীদের জীবনবিভীষিকার।
তাদের তুলনায় বাঙালি কিশোরীতিরুণীরা অনেক স্বাধীন; তবে ওই স্বাধীনতা ছেলেদের স্বাধীনতার তুলনায় তুচ্ছ। বাঙলাদেশে মেয়েরা রাস্তায় বেরোতে পারে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতার মধ্যে; তাদের বেরোনোয় কোনো নিষেধ নেই, কিন্তু পথে পথে তারা দেখে নিষেধ। পাড়ার মাস্তান তাকে দেখে শিস দেয়, মুদি মন্তব্য করে, ধার্মিকেরাও তার বুকের দিকে নির্লজের মতো তাকায়। সে একা নির্দিষ্ট কিছু এলাকা ছাড়া যেতে পারে না, তাকে স্বাধীনতা শিক্ষা দেয়ার জন্যে পথেঘাটে ধানখেতের আলে ওৎ পেতে আছে শিশ্নধারীরা। কিশোরীতিরুণী বাঙলাদেশে স্বাধীনতা ভোগ করে ধর্ষণকারীর উদ্যত শিশ্নের ছায়ার নিচে, তারা স্বাধীনতা ভোগ করে ক্যামুকের অ্যাসিডের ধারাপাতের বিভীষিকার নিচে। তারা রাস্তায় বেরোয় যেনো পথের দু-দিকে দেখার মতো কিছু নেই, যেনো গন্তব্য ছাড়া তারা আর কিছু জানে না।
সমাজ তাদের জানিয়ে দেয় তাদের পথে বেরোনোর অনুমতি দেয়া হয়েছে, কিন্তু পথের স্বাধীনতা দেয়া হয় নি। ছেলের জন্যে পথই গন্তব্য, কিন্তু কিশোরীতিরুণীর জন্যে পথ গন্তব্য নয়। তাই তাদের সব সময় চলতে হয় নিয়ন্ত্রিত ভঙ্গিতে, দণ্ডিত নাগরিক হিশেবে; ঘরে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও বাইরে আত্মনিয়ন্ত্রণ করে করে শুকিয়ে যায়। তাদের স্বতস্ফুৰ্ততা। তাদের ভেতরে বেড়ে ওঠে মানসিক চাপ, সারা শরীর জুড়ে দেখা দেয় ক্লান্তি অবসাদ। তরুণী হয়ে ওঠে। ক্লান্তি অবসাদের রক্তমাংসস্তুপ।
অবসাদে পরিবৃত থাকে তরুণীর শরীর ও জীবন। তাই তরুণীরা একে অন্যকে ক্লান্ত অবসন্ন ক’রে তোলে সহজে, দুটি ক্লান্ত শরীরপ্রাণ বেশিক্ষণ পরস্পরকে সজীব রাখতে পারে না। তারা পছন্দ করে, দরকার বোধ করে তরুণের সাহচর্য। সমাজ তাদের বুঝিয়ে দেয় তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তাদের বাধা দেয় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠতে। কিন্তু তারা পারে না। স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠতে, কোনো কিছুই একলা করতে পারে না, পারলেও তাদের দ্বিধা থেকে যায়। অস্বয়ংসম্পূর্ণতার অশক্তি তাদের ভেতরে বাড়িয়ে তোলে ভীরুতা, দ্বিধাগ্ৰস্ততা, যা দেখা দেয়। তাদের কাজে ও জীবনে। কামিনী রায়ের ‘করিতে পারি না কাজ/ সদা ভয় সদা লাজ / সংশয়ে সংকল্প সদা টলে’ মহিলা কবি ও কিশোরী ও তরুণীর কথা, কিশোর বা তরুণের কথা নয়।
সমাজ তাদের বুঝিয়ে দেয়, তারাও মনে করে অসামান্য কোনো সাফল্য অর্জন তাদের জন্যে নয়; ওসব ছেলেদের জন্যে। তাই তারা উচ্চাভিলাষ পোষণ করতেও ভয় পায়, পরিহাব ক’রে চলে সব উচ্চাভিলাষ। তারা বিশ্বাস করতে থাকে যে ছেলেরা উৎকৃষ্ট, তারা যা পারে না তা অবশ্যই পারে ছেলেরা, পারতেই হবে ছেলেদের। সমাজ ছেলেদেব ওপর বিশ্বাস করে, তরুণীরাও বিশ্বাস করে ছেলেদের সমাজ তাদের ওপর আস্থাহীন, তারাও আস্থাহীন নিজেদের ওপর। এমন আত্মবিশ্বাসহীনতা যাদের, তাদের বিকাশ অসম্ভব; তারা অবিকশিত থাকতে বাধ্য। এর পরিণতি আলস্য আর নিম্নমাঝারিত্ব, কোনো কিছু ভালোভাবে করতে না পারা। তরুণী বিশ্বাস করে সে যা পারে না, তা অবশ্যই পারে তরু%; পারতেই হবে তরুণকে।
নিজে না পারার জন্যে সে অস্বস্তি বোধ করে না, কিন্তু তা যদি না পারে ছেলে তবে সে বোধ করে অস্বস্তি 1 ছেলেরা যে ছেলে। কিশোরীতিরুণীকে সমাজ দীক্ষা দিয়েছে এমন পরাজয়ী মনোভাবে। তার পরাজয়ী মানসিকতার কারণ তরুণী জানে তার ভবিষ্যৎ তার হাতে নয়; তার মনোভাব এমন যে কী হবে এতো সাধ্যসাধনা করে যেখানে তার ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ নির্ভর করছে অন্যের ওপর। এটা এক দিকে যেমন নিয়তির কাছে আত্মসমৰ্পণ, তেমনই প্রতিবাদও। সমাজে যেহেতু পুরুষই সব, তাই সে চায় পুরুষই তার হয়ে রক্ত বাষ্প ক’রে অর্জন করুক সাফল্য।
তরুণীর পরাজয়ী মানসিকতার মূলে নিজের নিকৃষ্টতার বোধ কাজ করে না, সে মনে করে না যে সে সহজাতভাবেই নিকৃষ্ট, বরং তার প্রতিবাদী মনোভাবই জন্ম দেয় তার এ-বোধ : তাকে যে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হবে, সমাজ যে চায় সে নির্ভর করবে: কোনো পুরুষের ওপর, এটা তার পক্ষে সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে; এবং সে স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেয় সাফল্যলাভের সব ইচ্ছে। তার কোনো যোগ্যতা সমাজের চোখে গুরুত্বপূর্ণ নয়, পুরুষ তাকে তার যোগ্যতার জন্যে মূল্যবান ভাবে না; তার মূল্য ততোটাই যতোটা সে হয়ে ওঠে। পুরুষেব স্বপ্লের আদলে। মেয়েরা শিখে ফেলে যে পুরুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্যে তাকে ছেড়ে দিতে হবে তার অধিকার, পুরুষ তখনই খুশি হয় যখন সে ছেড়ে দেয় নিজের সব যোগ্যতালাভের বাসনা।
পুরুষ মেধাবী নারী পছন্দ করে না; তারা ভয় পায় নারীর সাহস, মেধা, যোগ্যতাকে । পুরুষের আকর্ষণ নির্বোিধ রূপসীর প্রতি, তাই তরুণীকে হয়ে উঠতে হয় নির্বোিধ, কিন্তু রূপসী । রূপই তার একমাত্র যোগ্যতা। রমণীয় হওয়ার অর্থ দুর্বল, নিরর্থক, অনুগত হওয়া। তরুণীকে চেপে রাখতে হয় তার সমস্ত স্বতস্ফুৰ্ততা, তার বদলে আয়ত্ত করতে হয় রূপ। যদি সে কোনো সক্রিয়তা দেখায়, তবে তা নষ্ট ক’রে দেয় তার নারীত্ব, তার আবেদন; অক্রিয়তাই তার সৌন্দর্য। তরুণীর ব্যক্তিসত্তা ও নারীসত্তার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি ক’রে রেখেছে সমাজ।। কৈশোর যে তার জন্যে বিশেষ সংকটের কাল, তার কারণ এতো দিন সে ছিলো স্বায়ত্তশাসিত, কিন্তু কৈশোরে পৌছে তাকে ত্যাগ করতে হয় তার স্বায়ত্তশাসন। মানুষ হিশেবে সে হয়ে উঠতে চায় সক্রিয়, স্বাধীন, প্রধান; কিন্তু সমাজ চায় সে হবে অক্রিয় সামগ্ৰী।
সক্রিয় সত্তা ও অক্রিয় সামগ্ৰী হয়ে ওঠার বিরোধে কিশোরী দুলতে থাকে আশা ও ভয়, কামনা ও ঘূণার মধ্যে। নারী হওয়ার জন্যে তাকে মেনে নিতে হবে অধীনতা, করতে হবে আত্মসমর্পণ। এ-সমস্যা বিভিন্ন কিশোরীর মধ্যে সৃষ্টি করে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া। যে-বালিকা দীক্ষিত হয়ে গেছে নারী ভূমিকায়, সে সহজে মেনে নেয় অধীনতা; কিন্তু যে-বালিকা দীক্ষিত হয় নি, তার পক্ষে অধীনতা মেনে নেয়া কঠিন হয় । তবে সে এড়াতে পারে না তার সামাজিক নিয়তিকে । সে কিছুটা প্রতিবাদের সাথে স্বীকার ক’রে নেয় তার নারীত্ব। তখন সে হয়ে ওঠে অক্রিয়, হয়ে উঠতে চায় রূপসী, জাগিয়ে তোলে মেয়েলিপনা; মন দেয় রূপচর্চায়। সে তখন নিজের বিব্রতকর স্তন দুটিকে আর লুকিয়ে রাখে না, সে-দুটি নিয়ে আর অস্বস্তি বোধ করে না; সে-দুটিকে মনে করে নিজের সম্পদ, ক’রে তোলে আকর্ষণীয়। সে নিজেকে দেখতে শুরু করে আয়নায়, মুগ্ধ হতে থাকে নিজের রূপে, সে জানে তার যা মূল্য তা ওই রূপের জন্যে; নিজের শরীরে সে খোজে এক নারীকে ।
কাম মানুষের সমান বয়সী। কাম উপভোগের শক্তি তরুণীর অনেক বেশি তরুণের থেকে, কিন্তু তার উপভোগ নিষিদ্ধ; তরুণীকে তার কামবাসনা চরিতাৰ্থ করার জন্যে হয়ে উঠতে হয় শিকার । পুরুষতন্ত্র তাকে মনে করে কামসামগ্ৰী, অনেক উপভোগ্য বস্তুর মতো সেও বস্তু। তাই তরুণী বস্তু বা সামগ্ৰী হয়ে ওঠে, নিজেকে সে মনে করে বস্তু, এবং নিজের নতুন সত্তাকে দেখে বিস্ময়ের চোখে । নিজের শরীরে সে দেখতে পায় এক অচেনা শরীর; যেনো অচেনা এক নতুন দেহ দখল করেছে তার চেনা শরীরকে । নিজের শরীর তাকে বিহ্বল ক’রে তোলে, বিস্মিত হয়ে শরীরের দিকে দিকে দেখে অভাবিত বন্যা। যৌবন কোনো তরুণীকে ক্ষমা করে না, ভিখিরি বালিকার দেহকেও প্লাবিত করে নির্দয়ভাবে; যা সে চায় নি, যার মূল্য সে দিতে পারবে না তা তাকে নিতেই হয়। চিত্রাঙ্গদার মতো। হতভাগ্য খুবই কম তরুণী, তাদের দেবতার কাছে বর চাইতে হয় না: কিন্তু তারা সবাই শিউরে ওঠে চিত্রাঙ্গদার মতোই অভাবিতকে নিজের শরীরে দেখে ।
চিত্রাঙ্গদা নতুন শরীর পায় বর হিশেবে, সেটিকে সে নিজের মনে করে নি; নিজের শরীরে নিজের শক্রকে দেখে সে চিৎকার করে উঠেছে, ‘কোন মহাবাক্ষসীরে দিয়াছ বাঁধিয়া /অঙ্গসহচরী করি ছায়ার মতন।’ কিন্তু তরুণী নিজের নতুন শরীরে কোনো রাক্ষসীকে নয়, দেখে এক দেবীকে। সে তার নতুন শরীরকে আদর করে, মুগ্ধ হয় নিজের আঙুল বাহু উরুর দিকে তাকিয়ে, নিজে মোহিত হয় নিজের দু-স্তনের সৌন্দর্যে। শুরু হয় তরুণীর একলা নির্জন অন্তরঙ্গ সংগোপন দিবাস্বপ্নের কাল। দিবাস্বপ্ন কিশোরকিশোরী, তরুণতরুণী, এবং যে-কোনো সৃষ্টিশীল মানুষের প্রাত্যহিক বাস্তবতা।
দিবাস্বপ্নে মানুষ সৃষ্টি করে এমন এক বাস্তবতা যা সে কোনো দিন পাবে না, পেলে হয়তো ক্ষুন্ন বোধ করবে। তরুণী নিজের সাথে নিজে কথা বলে, অজস্র স্বপ্নের মধ্যে বাস করে। সে তখন তার নিজের স্বপ্নে বিভোর, তার ওই স্বপ্ন এতো মূল্যবান যে তা প্ৰকাশ করা যাবে না। কারো কাছে, প্রকাশ করলে বাস্তবের নোংরা ছোয়ায় স্বপ্নের সোনা হয়ে উঠবে। আবর্জনা। তাই তার মধ্যে জন্মে গোপন করার প্রবণতা, সব কিছু সে গোপন করতে চায়, তার সমগ্র স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে সে পুরে ব্যাখতে চায় এক গোপন চন্দনকাঠের সিন্দুকে।
কিশোরীতিরুণীর দিবাস্বপ্ন পেরিয়ে যায় বাস্তবতার সমস্ত সীমা, ডুবে যায় সে রুগ্ন দিবাস্বপ্নে। তরুণীর দিবাস্বপ্ন হচ্ছে সে যা পায় নি, কখনো পাবে না, এমনকি কখনো পেতে চাইবে না, তার ক্ষতিপূরণ। কিন্তু দিবাস্বপ্ন কখনো বাস্তবতার বিকল্প হয়ে উঠতে পারে না; দিবাস্বপ্ন যদি সীমা পেরিয়ে যায়, তা মানুষকে অসুস্থ ক্লান্ত করে তোলে। প্রতিটি তরুণী দিবাস্বপ্নক্কান্ত। একলা নির্জন দিবাস্বপ্ন তাকে ভরে তুলতে পারে না, স্বপ্ন স্থগিত হয়ে যাওয়ার পরই সে দেখে সে পড়ে আছে বাস্তবের আবর্জনার ওপর- নিঃসঙ্গ। সে তখন খোজে বান্ধবী, নিজের একান্ত দ্বিতীয় সত্তাকে। অনেক মেয়ে পরস্পরকে দেখায় নিজেদের নগ্ন দেহ, তুলনা করে নিজেদের স্তনের, শরীরের বিভিন্ন ভাঁজের, আবিষ্কার করে পরস্পরের দেহবিশ্ব। প্রতিটি মেয়ের, এবং ছেলের, মধ্যেই রয়েছে সমকামীপ্রবণতা; তরুণীর ওই প্রবণতার মূলে রয়েছে তার আত্মপ্রেম।
তরুণীরা পরস্পরের শরীরে খুঁজে পায় নারীত্ব। কিন্তু তরুণী জানে সমকামী সম্পর্ক অস্থায়ী; এবং অনেক তরুণী এ-সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার সুযোগও পায় না, অনেকে পেয়েও গ্রহণ করে না। প্রচণ্ড বিধিনিষেধের খড়গ ঝোলে তার ওপর; সমগ্র পিতৃতন্ত্র তাকে নিষেধ করে ওই সম্পর্কে যেতে। কেননা পুরুষই তার নিয়তি। তখন তার চোখে মোহনীয় হয়ে ওঠে পুরুষ। তবে পুরুষ তাকে মুগ্ধ করে, আবার সন্ত্রস্তও করে। যে-পুরুষ তাকে সন্ত্রস্ত করে, সে তাকে বাদ দিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে রাজপুত্রের। এখন চারদিকে রাজপুত্রের ভিড়; একালে রাজপুত্রেরা জন্মেছে সিনেমার অভিনেতা, গায়ক, খেলোয়াড় ইত্যাদি হয়ে। তরুণী তাদের স্বপ্ন দেখে; স্বপ্ন দেখে অন্য এলাকার কোনো বিখ্যাত পুরুষেরও। তার এ-স্বপ্ন বিশুদ্ধ স্বপ্ন, সে স্বপ্ন দেখে স্বপ্ন দেখার জন্যেই; বাস্তবে ওই পুরুষকে পাওয়ার জন্যে নয়। সে বাস্তব অভিজ্ঞতাকে এড়িয়ে বাস করে কল্পনায়, সে একাকার করে দেয় বাস্তবতা আর কল্পনাকে। তরুণী কামনা করতে থাকে শ্ৰেষ্ঠ পুরুষ, যার কাছে সে আত্মসমৰ্পণ করতে পারে।
আত্মপ্রেম থেকে আত্মসমৰ্পণ হচ্ছে সমকামী প্রবণতা থেকে মর্ষকামিতার জগতে প্ৰবেশ। নারী সহজাত মর্ষকামী বলে নারীকে নিন্দিত ক’রে দিয়েছেন ফ্রয়েড; তবে নারী সহজাত মর্ষকামী নয়। পুরুষেরও রয়েছে মর্ষকামিতা। পুরুষতন্ত্র নারীকে দীক্ষা দিয়েছে। মর্ষকামে, যন্ত্রণাসম্ভোগে; বাধ্য করেছে মর্ষকামে। পুরুষতন্ত্র যে-সমস্ত নারীকে প্রশংসাপত্ৰ দিয়েছে, তারা সবাই তা কিনেছে মর্মান্তিক মর্ষকামিতার মূল্যে : তারা পুরুষের জন্যে সব ত্যাগ করেছে, জীবন উৎসর্গ করেছে, অজস্র পীড়ন সহ্য করেছে, এবং পুরুষতন্ত্র তাদের স্বীকার করে নিয়েছে আদর্শ নারীকাঠামোরূপে।
পুরুষতািন্ত্র তরুণীকে শিখিয়েছে। পুরুষের জন্যে দুঃখ স্বীকারই প্ৰেম, অবিরাম আত্মোৎসৰ্গই নারীত্ব। প্রেমে যে পড়ে সে-ই মর্ষকামী, তার কাজ যন্ত্রণায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠা। তরুণী অসংখ্য উপাখ্যানে শোনে আদর্শ প্রেমিকদের দুঃখ স্বীকারের কাহিনী, সেও মনে মনে হয়ে ওঠে এক আদর্শ প্রেমিক, যে প্রিয়তমের জন্যে সইবে অনন্ত দুঃখ। সে কল্পনা করে পিতামাতা সমাজসংসারকে অস্বীকার ক’রে সে বেরিয়ে পড়েছে প্রেমিকের হাত ধ’রে, তাদের জন্যে আর কিছু নেই, আছে শুধু প্রেম আর অবিরাম দুঃখ। সে দুঃখের পর দুঃখকে জয় করতে থাকে, প্রেমিককে রক্ষা করে সমস্ত বিপদ থেকে, এবং সুখ পায় প্রেমিকের বুকে মুখ রেখে। সে হয়ে ওঠে আরেক আদর্শ প্রেমিকা, নারী, যার নাম চিরকাল মনে রাখবে ইতিহাস।
কিশোরতরুণও এমন অপরাজিত প্রেমের স্বপ্ন দেখে, তবে তার স্বপ্লটি বিপরীত; সে দেখে প্রেমিকাটি তার জন্যে সব ত্যাগ ক’রে এসেছে, তার বুকে স্থান পেয়ে ধন্য হয়েছে। কিশোর প্রেমিকেরা কিশোরী প্রেমিকার চোখে বার বার জল দেখতে চায়, জল দেখে খুব সুখ পায়; কিশোরীরাও চোখকে সমুদ্রের মতো ভরে তুলতে জানে। তরুণীকে সমাজই তৈরি করেছে মর্ষকামী ক’রে, কারণ সে নারী হবে; এবং তার জীবন হবে ধারাবাহিক মর্ষকামিতা। তার জৈব সংকেতের মধ্যে নেই এ-ব্যাধি, রয়েছে সামাজিক সংকেতে।
কাল্পনিক প্রেম থেকে বাস্তব প্রেমে যেতে ভয় পায় অনেক তরুণী; যখন স্বপ্লের পুরুষ সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন সন্ত্রস্ত হয় অনেকে। তরুণী পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়, চায় পুরুষের অনুরাগ, কিন্তু ধরা পড়তে চায় না। বয়ঃসন্ধির সাথে সে লজ্জা বোধ করতে শেখে, পুরুষতন্ত্র তাকে লজ্জা বোধ করতে বলে; সে লজ্জা আর ছেনালিপনাকে একাকার ক’রে দেয়। তার লজ্জা সবখানি লজ্জা নয়, তার লজ্জা হচ্ছে উল্টোনো লজ্জাহীনতা। সে চায়। তার দিকে তাকাক পুরুষ, কিন্তু তার দিকে কোনো পুরুষ তাকালে সে একই সাথে সুখ পায় ও আহত হয়। সে চায় তার সৌন্দর্যে পুরুষ মুগ্ধ হোক, কিন্তু যখন তারা তাকায় তার পায়ের দিকে, তার নিতম্বের দিকে, তার স্তনের দিকে, তখন সে লজ্জা পায়।
তরুণী পুরুষের কামনা জাগিয়ে দিতে চায়, কিন্তু যখন দেখে সে কামনা জাগিয়ে দিয়েছে পুরুষের, তখন গুটিয়ে নেয় নিজেকে। সে স্পর্শ পেতে চায়, কিন্তু স্পর্শ পেলে প্রকাশ করে বিরক্তি। পৃথিবী জুড়ে তরুণীর জীবনেব মূল লক্ষ্য একটি স্বামী পাওয়া; এবং অধিকাংশ সমাজে এখনো তার জন্যে স্বামীটি সংগ্রহ করে অভিভাবকেরা। সে নিজেকে নিজের পছন্দ মতো সমৰ্পণও করতে পারে না, সমৰ্পণ করে অন্যরা। তাই তরুণী স্বাধীন সত্তা হিশেবে বিকশিত করতে পারে না নিজেকে। কোনো কোনো সমাজে তরুণী নিজের ভবিষ্যতকে নিতে পারে নিজের হাতে, তারা নিরন্তর পুরুষভাবনা থেকে মুক্তি পায়, কিন্তু অধিকাংশ সমাজে আজো তা অসম্ভব। দিন দিন তা আরো অসম্ভব ক’রে তোলা হচ্ছে।
বাঙলাদেশে তার কানে যে-অশ্লীল গানটি নিয়মিত বাজানো হয়, তা হচ্ছে বিয়ে, বিয়ে, বিয়ে। বিয়েতে মুক্তি নেই তরুণীর, তার মুক্তি নিজের স্বাধীন সত্তায়। কিন্তু পরিবার ও সমাজ তার সত্তা বিকাশের জন্যে উৎসাহী নয়, উৎসাহী তাকে অবিকশিত ক’রে দিতে। আমাদের সমাজের প্রায় সবাই এখন কাজ করছে কিশোরীতিরুণীর বিকাশের বিরুদ্ধে; সমাজনীতি আর রাজনীতি কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে। তারা এখন আর বিকশিত ও স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখছে না, দেখছে। বন্দী হওয়ার বন্দী থাকার স্বপ্ন।