(প্রথম ভাগ)
বালিকার পরিণতি কিশোরী, কিশোরীর পরিণতি তরুণী; তাদের বিপন্ন পরিণতি নারী। পিতৃতন্ত্রের নানা প্রান্তে তাদের বিকাশের মধ্যে, যদি একে বিকাশ বলতে পারি, রয়েছে মিল : তাদের জৈব বিকাশে মিল রয়েছে পৃথিবী জুড়ে; কিন্তু বিভিন্ন দেশ, সমাজ, শ্রেণী কিশোরীতিরুণীদের একইভাবে বাড়তে দেয় না। বাড়া নয়, বলা যায়, রুদ্ধ করে রাখা হয় তাদের বিকাশ। বাঙালি আর মার্কিন কিশোরীর মধ্যে জৈব মিল স্পষ্ট, কিন্তু সমাজ তাদের এমন পৃথক ক’রে রাখে। যেনো তারা ভিন্ন গ্রহ বা প্রজাতির। আরবি কিশোরী জৈবিকভাবে বাঙালি আর মার্কিন কিশোরীর মতোই বাড়ে, তবে তার ওপর সামাজিক বোঝা এতো ভারী এতো নির্মম যে তার মনই শুধু নয়, বিকৃত হয়ে যায় তার দেহও। তাদের সবার পরিণতি নারী; সব দেশেই নারী বিপন্নতার মধ্যে বেড়ে ওঠা মানুষ, এবং বহু দেশে তাবা পুবোপুরি পর্যাদস্ত।
একই দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর কিশোরীতিরুণীর মধ্যেও রয়েছে মিল-অমিল; চাষী আর আমলার মেয়ের জৈবিক বিকাশ অভিন্ন, কিন্তু তারা এতো ভিন্ন শ্রেণীর যে তারা পরস্পরের সম্পূর্ণ অপরিচিত। তবু তারা একই পংক্তির। ধনী পরিবারের কিশোরীটির সাথে ওই পরিবারের কিশোরটির যতোটা মিল, তার চেয়ে অনেক মিল তার দরিদ্র চাষী পরিবারের কিশোরীটির সাথে; তারা শিকার একই সামাজিক নিয়তির। সব নারী, সব কিশোরীতিরুণীর ভাগ্য একই পীড়নের সুতোয় গাথা! সমাজ কিশোরীর দিকে ওৎ পেতে থাকা বাঘ একটু বিচূতি ঘটলে বাঘ লাফিয়ে পড়ে তার ওপর। সমাজ তার দেহকে যেভাবে বাড়া৩ে চায়, তাকে সেভাবে বাড়াতে হয়। দেহ; সমাজ যেভাবে স্বপ্ন দেখাতে চায় তরুণীকে, সেভাবে স্বপ্ন দেখতে হয় তাকে। তারা সমাজনিয়ন্ত্রিত প্ৰাণী, খাচার মধ্যে তারা বাড়তে থাকে আদর্শ নারী হওয়ার জন্যে। বাঙালি নারীরা তাদের আত্মজীবনীতে বারবার ‘খাচা’ আর “পিঞ্জার’-এর কথা বলেছেন, পাখির রূপকে দেখেছেন নিজেদের; কিন্তু তারা পোষা পাখি ছিলেন না, ছিলেন পোষােজন্তু।
সমাজ পোষােজন্তুটিকে বলে নারী। তার দেহ আছে; যে-দেহটি সে নিজের ব’লে পেয়েছে, সেটি তাকে বিব্রত করে, তাকে মাঝে মাঝেই অসুস্থ করে; তবে কিশোরী ওই দেহ, তরুণী ওই দেহ। তার দেহও সমাজেরই বিবেচনার বস্তু; তার দেহ পরিখের কর পরখ করতে থাকে অনেক সমাজ। অনেক সমাজে কিশোরী বুঝতেই পারে না। কীভাবে সে বেড়ে উঠেছে, তরুণী হয়েছে; তার আগেই তার দেহ কোনো বর্বর অত্যাচারে বিকৃত হয়ে যায়। প্রতিটি সমাজ কিশোরীতিরুণীর জন্যে বের করেছে সামািজীকিকরণের বিশদ বিধিমালা, যার লক্ষ্য তাকে পিতৃতন্ত্রের আদর্শকাঠামোর আদলে শিশুস্বভাবের নারী ক’রে তোলা।
সামাজিকীকরণের ফলে বদলে যেতে থাকে বালিকা, ভিন্ন হয়ে যেতে থাকে বালকের থেকে; সে খাপ খাইয়ে নিতে থাকে তার লিঙ্গভূমিকার সাথে, তবু সে তার স্বাধীনতা স্বায়ত্তশাসন হারিয়ে ফেলে না। যেই সে পৌঁছে কৈশোরে, তার ভবিষ্যৎ বাসা বাঁধে তার শরীরে; দ্য বোভোয়ারের (১৯৪৯, ৩৫১) ভাষায়, ‘বয়ঃসন্ধির সাথে ভবিষ্যৎ শুধু ঘনিয়ে আসে না; তার শরীরে বাসা বাধে; পরিগ্রহ করে চরম মূর্ত বাস্তব রূপ।’ ভিন্ন হয়ে যায় কিশোরকিশোরী। কিশোর সক্রিয়ভাবে এগিয়ে যায় প্রাপ্তবয়স্কতার দিকে; তার ভবিষ্যৎ তার জন্যে চমৎকারভাবে সৃষ্টি ক’রে রেখেছে সমাজ, সেখানে সে প্রবেশ করে স্বায়ত্তশাসিত মানুষরূপে; কিন্তু কিশোরী অপেক্ষা করতে থাকে, তার জীবন হয়ে ওঠে অনন্ত অপেক্ষা। কৈশোর বালিকার জন্যে ক্রাস্তিকাল; এ-সময়ে তার কোনো বিশেষ লক্ষ্য নেই, সে জানে না তার জীবনের উদ্দেশ্য। কিশোরী তরুণী হয়ে ওঠে, তার শরীরের বিপজ্জনক সুন্দর পরিবর্তন ঘটে, কিন্তু সে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারে না।তার জীবনে।
তরুণীর সময় কাটে অবসাদগ্ৰস্ত প্ৰতীক্ষায়। সে প্রতীক্ষা করে পুরুষের তার জীবন সে নিজে সৃষ্টি করতে পারে না, সমাজ সে-ব্যবস্থা রাখে নি; সমাজ উদ্ভাবন করেছে তাকে রুদ্ধ করার সমস্ত বিধি। তার জন্যে রেখেছে একটি প্রতীক্ষার মহাসামগ্ৰী : পুরুষ। তার জীবনের সারকথা সংহত একটি শব্দে : পুরুষ। কিশোরীকে, তরুণীকে সমাজ একটিই স্বপ্ন দিয়েছে; পুরুষ। কিশোরও স্বপ্ন দেখে নারীর, কিশোরও কামনা করে নারী; তবে তা তার জীবনের খণ্ডাংশ। নারী তার জীবনের নিয়তি নয়, নারীর মধ্যে সে দেখে না জীবনের পূর্ণতা। যুবক নিজের জীবনের পূর্ণতার স্বপ্ন দেখে বাস্তব সাফল্যে, নারী ওই সাফল্যের একটি অংশ; কিন্তু তরুণীর জীবনের সারকথা পুরুষ, যে পূর্ণ ক’রে তুলবে তার জীবন। এটা কোনো জৈব বিধান নয়; প্রকৃতি তাকে প্রতীক্ষার জন্যে প্রস্তুত করে নি, কিন্তু সমাজ তার জন্যে পুরুষের প্রতীক্ষাকে ক’রে তুলেছে অবধারিত।
তরুণী থাকে অবসাদগ্ৰস্ত অস্তিত্বের মধ্যে বন্দী। তার কোনো লক্ষ্য নেই উদ্দেশ্য নেই; সে নিরর্থক প্রাণী। তাকে ওই নিরর্থকতার বন্দীত্ব থেকে যে উদ্ধার করবে, সে পুরুষ। সমাজব্যবস্থা পুরুষকে দিয়েছে ত্ৰাতার ভূমিকা। সব পুরুষ সমান শক্তিশালী, সমান ঐশ্বৰ্যশালী নয়; কিন্তু পুরুষ হওয়াই ঐশ্বৰ্য। পুরুষ শক্তিশালী, ধনী; তার হাতে আছে সুখের চাবি, সে স্বপ্নের রাজপুত্র। বালিকা বয়স থেকেই বালিকা দেখে পুরুষ উৎকৃষ্ট; পুরুষ। আয় করে টাকা। যে টাকা আয় করে সে-ই প্ৰভু। সমাজ নারীর পায়ের নিচ থেকে সরিয়ে রেখেছে আর্থনীতিক ভিত্তিটি, যার ওই ভিত্তি নেই। সে কখনো দাঁড়াতে পারে না।
কিশোরতরুণী জানে সে কখনো টাকা আয় করবে না, যে-সব কাজ সে শিখছে মায়ের পুণ্য আদর্শ অনুসাবণ করে সে-সবের কোনো আর্থ মূল্য নেই। তার কাজের আর্থ মূল্য নেই, তাই তারও মূল্য নেই! সে ব্যক্তি হয়ে উঠবে না, প্ৰভু হয়ে উঠবে না। সমাজের সব কিছু তাকে বুঝিয়ে দেয় তার জন্যে সবচেয়ে ভালো কোনো পুরুষের অস্থাবর সম্পত্তি হওয়া। তার চাহিদা সামগ্ৰী হিশেবে। যে-মেয়ের জন্যে ঘন ঘন পাত্র আসে, তাকে নিয়ে গর্ব বোধ করে বাবামা; যাকে বউ করার জন্যে প্রতিযোগিতা পড়ে যোগ্যদের মধ্যে, অন্য মেয়েরা ঈর্ষা করে তাকে; কারণ পুরুষ পাওযাই তার জীবনের সাফল্য।
বিয়ে নারীর শ্রেষ্ঠ পেশা। তরুণীর জন্যে অন্যান্য পেশার থেকে এটা বেশি সম্মানজনক, এবং কম শ্রমসাধ্য; একটি দেহই তাকে এর যোগ্য ক’রে তোলে। বিয়ে তাকে দেয় সামাজিক মর্যাদা, এর মাধ্যমে তৃপ্ত হয় তার কাম ও মাতৃত্বম্পুহা। স্বামী পাওয়াই তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণতম কাজ। এ-কাজ সে নিজে বেছে নেয় নি, এ-কাজকে সে নিজের জন্যে স্থির করে নি; সমাজই নির্ধারণ ক’রে দিয়েছে।
বিয়ে তার শ্রেষ্ঠ ও একমাত্র পেশা; কিন্তু এর জন্যে তাকে মূল্যও দিতে হয় প্রচুর। পুরুষ কোনো পেশার জন্যে এমন মূল্য দেয় না। সে একটি পেশার জন্যে উৎপাটিত করে নিজের অস্তিত্ব, তার যা কিছু পরিচিত আপন ছিলো তাদের থেকে সে সরিয়ে নেয় নিজেকে। সে মেনে নেয় নির্বাসন। সে নিজেকে সরিয়ে নেয় বাপের বাড়ি থেকে, পিতামাতার অধিকার থেকে, তার পরিচিত প্রিয় দৃশ্যগুলো থেকে। সে সক্রিয় বিজয়ীর বেশে ঢোকে না তার ভবিষ্যতে। সে শুধু নিজেকে সমর্পণ করে এক নতুন প্রভুর অধিকারে। সে যে নিজেকে সমর্পণ করে একটি পুরুষের কাছে, এর তাৎপর্য বের করার চেষ্টা করেছে।
পুরুষতন্ত্ৰ : এর তাৎপর্য নারী নিকৃষ্ট পুরুষের থেকে, তার পুরুষের সমান হওয়ার শক্তি নেই। তাই সে অসম প্ৰতিযোগিতায় না নেমে নিজেকে সমর্পণ করে পুরুষের পায়ে, যার রয়েছে জয়ী হওয়ার শক্তি। বিয়ে পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব আর নারীর নিকৃষ্টতার প্রমাণ। নারী নিজেকে সমর্পণ করে, তবে তার সমর্পণের মূলে কোনো জৈব কারণ নেই; প্রকৃতি তাকে পুরুষের অধীনে থাকার জন্যে সৃষ্টি করে নি। সমাজই তাকে তৈবি করেছে এমনভাবে। সমাজ তার জন্যে নির্ধারিত করে রেখেছে এমন ভবিষ্যৎ, যার কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বিয়ে তাকে কিছুটা স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু তার বিবাহিত জীবন এক নিরন্তর সংকট; পুরুষেব স্বেচ্ছাচারিতার শিকার।
বয়ঃসন্ধি বদলে দেয়। বালিকার দেহ। এর আগে বালকবালিকার শরীরে থাকে সমান শক্তি, প্রাণবন্ততাও থাকে সমান; কিন্তু বয়ঃসন্ধি বালিকাকে জন্ম দেয় নতুন করে। তার দেহ হয়ে ওঠে আগের থেকে ভঙ্গুর, এক ঠুনকো অবয়ধের অধিকারী হয় সে, তার কামপ্রত্যঙ্গগুলো সহজে বোধ করে আহত, আর বুকের দু-পাশে দুটি বিব্রতকর। ফলের মতো দেখা দেয় অদ্ভুত, বিপত্তিকর স্তন। পুরুষের চোখে স্তন সুন্দর, তার শরীরের ওই স্ফীত পিণ্ড দুটি পুরুষের চোখে জাগায় তীব্র আবেদন; কিন্তু কিশোরী তা নিয়ে থাকে বিরত। অস্বস্তি তাকে ঘিরে ধরে, আগের জামা তাকে পীড়া দিতে থাকে; সে দৌড়েতে গেলে ওগুলো দোলে, ব্যায়াম করতে গেলে দোলে।
তার বুকে যন্ত্রণা হয়ে যা ফুলে ওঠে তা স্তন, যা তার নিজের কোনো কাজে লাগে না; একদিন পুরুষ ও-দুটি মথিত করে, শিশু শোষণ করে। কিশোরী হয়ে ওঠে দুর্বল, কমতে থাকে। তার পেশির শক্তি, সে হারিয়ে ফেলে তৎপরতা। একই বয়সে কিশোর অর্জন করে পেশি, অর্জন করে তৎপরতা। এমন একটি প্রক্রিয়া দেখা দেয় তার শরীরে, যা কখনো বোধ করে না পুরুষ; তা তার ঋতুস্রাব। পশ্চিমে একে এক সময় বলা হতো “অভিশাপ’, যা কিশোরীর কাছে আসলেই অভিশাপ মনে হয়। অধিকাংশ সমাজেই এর জন্যে তাকে প্রস্তুত ক’রে তোলা হয় না, তাই হঠাৎ অনভিপ্রেতি রক্তের প্রবাহ তাকে ভীত ক’রে তোলে।
কিশোরী বোধ করে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, তলপেটে ব্যথা। ব্যাহত হয়ে পড়ে তার স্বাভাবিক জীবনধারা, তার শরীর হয়ে ওঠে তার জন্যে সমস্যা। সব ধর্মই শেখায় যে এটা অশুচি অপবিত্র, যদিও এতে নেই কোনো অশুচিতা অপবিত্রতা, তবুও কিশোরী নিজের অশুচিতা ও যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যায়। দ্য বোভোয়ার (১৯৪৯, ৩৫৩) বলেছেন, ‘সমগ্র মহাজগতকে তার মনে হয় এক দুৰ্বহ ভার। দুৰ্বহ ভারগ্রস্ত, নিমজ্জিত, সে নিজের কাছেই নিজে হয়ে ওঠে। অপরিচিত, কেননা বাকি সমগ্র জগতের কাছেই সে অপরিচিত।’ মাসে মাসে একই অগ্ৰীতিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি তাকে পাগল ক’রে তুলতে পারে; তবে কিশোরী জানে তাকে বেঁচে থাকতে হবে এ নিয়ে।
কৈশোরে, বছর তেরোর দিকে, বিকাশ ঘটে বালকের ইচ্ছাশক্তি। এ-সময় প্রকাশ ঘটতে থাকে তাদের আক্রমণাত্মক প্রবণতা, শরীর দিয়ে তারা পরখ ক’রে দেখতে চায় চারপাশ, জয়ের বাসনা দেখা দিতে থাকে শরীরের প্রতিটি কাজে; বালকেরা প্রতিযোগিতায় নামে। শারীরিক শক্তি হয়ে ওঠে বালকের জীবনের প্রধান সত্য; কিন্তু ওই বয়সেই, এবং তারো আগে, বালিকা নিজেকে গুটিয়ে নেয় শক্তির এলাকা থেকে। সমাজ তার মনে শক্তি চায় না, শরীরে শক্তি চায় না, সমাজের চোখে অপ্রয়োজনীয় তার অস্থি আর পেশি। তার কাছে সমাজ চায় কোমল মেদ।
অধিকাংশ সমাজে ছোটো বালিকাদের জন্যেও নেই কোনো খেলাধুলো; এবং কৈশোরে পৌঁছে যা অবশিষ্ট থাকে, তাও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। বাঙালি বালিকা কোনো খেলার সুযোগ পায় না, তবু তারা মাঝে মাঝে দৌড়োনোর সুযোগ পায়, কিশোরীর জন্যে তাও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমাদের সহপাঠিনীরা মারাত্মক খেলোয়াড় ছিলো, দৌড়ে ওদের সাথে পেরে ওঠা ছিলো কঠিন; কিন্তু একদিন ওরা বাড়ির ভেতর ঢুকে যায়। আমরা মাঠে খেলে চলেছি, ওরা উকি দিয়ে চলেছে আমাদের দিকে। এর পর ওরা আমাদের দেখে লাজা পেয়েও পিছলে পড়তো, মনে হতো। ওরা হাঁটতেও ভুলে গেছে। কিশোরী শক্তি, পেশি, গতির এলাকা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ঢ়োকে ঘিরে, ঘর তার দেহকে শিথিল অবসন্ন করে তোলে। তারা হয়ে ওঠে অন্তঃপুরিকা, পুরনারী, পুরলক্ষ্মী, পুরাঙ্গনা, পুরবালা, অসূৰ্যম্পশ্যা।
কিশোরীতিরুণীর শরীর বিকশিত হয় না। সক্রিয়ভাবে, তাদের দেহ অক্রিয়ভাবে ভোগ করে বিভিন্ন ব্যাপার। শরীর’ শব্দটিতে রয়েছে এক ধরনের সক্রিয়তা; তাই এক সময় নারীর শরীর বোঝাতে এ-শব্দটি ব্যবহৃতই হতো না : ব্যবহৃত হতো দেহ, দেহলতা, দেহবল্লরী, তনু, তনুলতার মতো অপেশল শব্দ। তাদের ক’রে দেয়া হয় সীমাবদ্ধ, তারা যেতে পারে না। সীমার বাইরে; তরুণের জীবনের প্রাণ প্রতিযোগিতামূলক প্রবণতা, কিন্তু তরুণীর জীবনের কোনো সক্রিয় প্রতিযোগিতা থাকে না। প্রতিযোগিতার এলাকা থেকে নির্বাসিত তারা তুলনা করে, শুধু তুলনা করে। তারা তুলনা করে ছেলেদের সাথে ছেলেদের, তুলনা করে নিজেদের সমস্ত তুচ্ছ বিষয়ের। তুলনা কোনো সক্রিয় কাজ নয়: তুলনা করা সক্রিয় প্রতিযোগিতার বিপরীত। সক্রিয়র কাজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া, জয় লাভ করা, আর অক্রিয় দর্শকের কাজ প্রতিযোগীদের মধ্যে তুলনা করা।
কিশোরীতিরুণী হয়ে ওঠে। জয়পরাজয়কম্পিত মুখরিত পৃথিবীর দর্শক। প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকে জয়পরাজয়, থাকে অন্যদের পরাভূত ক’রে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ; কিন্তু কিশোরীতিরুণী কখনো প্রতিযোগিতায় নামে না। এটাও কোনো রহস্যজনক জৈব ব্যাপার নয়, এটা সম্পূর্ণরূপে সামাজিক। সমাজ চায় না তারা প্রতিযোগিতায় নামুক, তারা মেতে উঠুক জয়পরাজয়ে; সমাজ চায় তারা তাদের আরাধ্য পুরুষদের মধ্যে তুলনা করুক। তরুণীর শারীরিক শক্তির অভাবের ফলে তার মধ্যে জন্ম দেয় ভীরুতা। সে যে শুধু টিকটিকি তেলেপোকাকে ভয পায়, তা নয়; সে ভয় পায় সক্রিয় সব কিছুকেই। পিতৃতন্ত্র খুব পছন্দ করে এটা, নারীর ভয় তার মনে হয় সুন্দর: চরম ভয়ের মধ্যে বাস করারই নারীত্ব।
কিশোরীতিরুণী যেহেতু নিজেদেব শরীরে শক্তি অনুভব করে না, তাই নিজেদের ওপর তারা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে; তারা কখনো রুখে দাঁড়ায় না, মেনে নেয়। তাদের ওপর সব আক্রমণ। তারা যখন আক্রান্ত হয়, তখন তাদের হাতে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও আত্মরক্ষা করতে পারে না; কেননা নিজেদের শক্তিতে তারা অবিশ্বাসী। তারা ছেড়ে দেয় উদ্যমশীলতা, বিদ্রোহের সাহস তাদের থাকে না। তারা দণ্ডিত ভীরুতা ও আত্মসমর্পণে, তারা অবস্থান নেয়। তাদের সমাজনির্ধারিত স্থানে। তারা হয়। বাশমানা, তাদের মনে হয় যা যে-অবস্থায় আছে থাকবে সে-অবস্থায়ই। নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের কথা ভাবনায় আসে না তাদের। শরীর তাদের নিয়তি নয়, তবু শরীরই হয়ে ওঠে তাদের সামাজিক নিয়তি।
কিশোরীতিরুণীর শরীর নিয়েও উদ্বিগ্ন অনেক সমাজ, ওই সমস্ত সমাজ চায় পুরুষের জন্যে তারা প্ৰস্তুত রাখবে একটি অক্ষত দেহ, এমন কাচের পাত্রের মতো যন্তে রাখবে শরীর যাতে তাদের রন্ধের ঝিল্লিটির একটি তত্ত্বও না ছেড়ে। তরুণীকে রক্ষা করতে হবে তার সতীত্ব। পিতৃতন্ত্র তরুণের সততা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়, তরুণের সততা ভিন্ন ব্যাপাের; তরুণীব সতীত্ব হচ্ছে তার অক্ষত সতীচ্ছদ। পিতৃতন্ত্রকে সে শ্রেষ্ঠ যে-উপহারটি দিতে পাবে, তা একটি অটুট সতীচ্ছদ। মধ্যপ্ৰাচ্য ও ৩ার সনিকট অঞ্চলের মুসলমান পিতৃতন্ত্র রখনো তরুণীর সতীত্ব ও সতীচ্ছদের ওপর দেয় বিভীষিকাজাগানো গুরুত্ব, যার ফলে প্রতিটি তরুণী বাস করে দোজখের ভীতির থেকে ভয়ানক ভীতির মধ্যে। ভূমধ্যসাগবীয় পুরুষদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদের একটি হচ্ছে অটুট যোনিচ্ছদসম্পন্ন কুমারী, যাকে এর আগে আর কোনো পুরুষ ছোয় নি।
ফাতিমা মের নিসসি (১৯৮২, ১৮৩) বলেছেন, সেখানে পুরুষের মর্যাদা অবস্থিত নারীর দু-উরুর মাঝখানে। প্রকৃতিকে বশ বা পর্বত জয় ক’রে তারা অর্জন করে না মর্যাদা, তারা নারীদের নিয়ন্ত্রণ করে আয়ত্ত করে মানসম্মান। সেখানে পুরুষ চায় নারীর সতীত্ব, চায় তার অক্ষত সতীচ্ছদ; এবং এ-কামনাকে তারা এতো দূর নিয়ে যায় যে তা হয়ে ওঠে মহাজাগতিক উন্মত্ততা। ওই পুরুষেরা চায় তাদের নারীরা সতী হবে, কিন্তু তারা নিজেরা লিপ্ত হবে। অবৈধ যৌনসম্পর্কে, যাবে কাম থেকে কামে। সতীত্ব ও সতীচ্ছদ নিয়ে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের পুরুষের পরাবাস্তব পাগলামোর বিবরণ দিয়েছেন নওঅল এল সাদাওয়ি তার হাওয়ার লুকোনো মুখ (১৯৮০, ২৪-৩২) বইয়ের ‘সতীত্ব/সম্মান নামক খুব পাতলা ঝিল্লিী’ নামের বমিজাগানো পরিচ্ছেদে।
প্ৰত্যেক আরব বালিকার থাকতে হয় একটি পাতলা পর্দা, যার নাম সতীচ্ছদ। এটা তার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সম্পদ। তবে শুধু সতীচ্ছদ থাকলেই চলবে না, সতীচ্ছদটিকে হ’তে হবে বিশুদ্ধ: বাসর রাতে ওটিকে প্রচুর রক্তপাত ক’রে প্রমাণ করতে হবে যে তার অধিকারিণী ছিলো পরম সতী। বিছানার শাদা চাদরে পড়তে হবে রক্তের দৃষ্টিগ্রাহ্য দাগ। মেয়েটি যদি অভাগিনী হয়, তার থাকতে পারে একটি শক্ত স্থিতিস্থাপক চ্ছদ। ওই চ্ছদটিকে আঙুল বা শিশ্ন দিয়ে ঘাটলেও কোনো রক্ত বেরোবে না। সে প্রমাণ করতে পারবে না। সে সতী। পরদিনই হয়তো তাব লাশ পাওয়া যাবে কোনাে বালুকাস্তুপে। কোনো কোনো মেয়ের চ্ছদ এতো পাতলা হয় যে তা হাঁটতে ফিরতে দৌড়োতে গিয়েই ছিড়ে যেতে পারে, সেও প্রমাণ করতে পারবে না। সে ছিলো সতী । বংশের সম্মানের জন্যে সেও হয়তো লাশ হবে। কোনো কোনো মেয়ের ওই চছদটি নাও থাকতে পারে, সে প্রাকৃতিকভাবেই অসতী!
নওঅল চিকিৎসক, তার কাছে একবার একটি ষোলো বছরের ‘গৰ্ভবতী’ মেয়ে আসে। তিনি দেখেন মেয়েটি গর্ভবতী নয়; তার যোনিচ্ছদে কোনো রন্ধ নেই বলে বছরের পর বছর ধ’রে তার পেটে জমেছে ঋতুস্রাবের রক্ত। তার ভাগ্য ভালো, সে বিবাহিত: অবিবাহিত হ’লে হয়তো পরিবারের নামে তাকে কোরবানি করতো ভাই বা বাবা। এমন ঘটনা মিশরে অনেক ঘটেছে। সুঠু যোনিচ্ছদ নিয়ে জন্মে মাত্র ৪১.৩২% মেয়ে; ১১.২% মেয়ের কোনো চছদই থাকে না, ১৬.১৬% মেয়ের চ্ছদ এতো পাতলা হয় যে ছিড়ে যায় সহজে, আর ৩১.৩২% মেয়ে জন্মে মোটা স্থিতিস্থাপক চ্ছদ নিয়ে নওঅল (১৯৮০, ২৬)]। তাই বাসর রাতে রক্ত ঝরতে পারে ৪১.৩২% মেয়ের, কিন্তু সতীচ্ছদপাগল আরব চায় সব বাসরশয্যা হবে যুদ্ধক্ষেত্রের মতো রক্তাক্ত । সেখানে স্বামী বিছানায় রক্তের দাগ না পেয়ে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে আসে চিকিৎসকের কাছে স্বচ্ছদ আছে কিনা পরীক্ষা করানোর জন্যে, পিতামাতা চায় তাদের মেয়ের জন্যে একটি সতীচ্ছদের সার্টিফিকেটা!
আরব সমাজে তরুণীর দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘প্রত্যঙ্গ’ তার যোনিচ্ছদ; তা তার চোখ, হাত বা পায়ের থেকে অনেক মূল্যবান। মেয়ে একটি হাত বা চোখ হারালে ততোটা দুঃখ পায় না। আবব পিতামাতা, যতোটা পায় তার চচ্ছদটি নষ্ট হ’লে । বাসর রাতে যে-মেয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে প্রমাণ করতে পারে না যে সে সতী, সে তালাক পায়, মৃত্যুও তার প্রায় অবধারিত। এ নিয়ে তৈরি হয় বড়ো কেলেঙ্কারি, নষ্ট হয় বংশের মর্যাদা। পরিবারটি ডুবে যায় অপমানে, যা শুধু ‘মোছা সম্ভব রক্তে’ } তারা বিশ্বাস করে আল্লা মেয়েদের যোনিচ্ছদ দেয় সতীত্ব রক্ষার জন্যে, মেয়েদের দায়িত্ব ওই চািচ্ছন্দ পুরুষকে উপহার দেয়া ।
বাসররাতে সেখানে প্রতিটি বন্ধুকে দিতে হয় রক্তাক্ত সতীত্বের পরীক্ষা। স্বামীটি নিজে শিশ্ন বা আঙুল দিয়ে যোনি খুঁড়ে দেখতে পারে, কিন্তু অনভ্যস্ত যুবকেরা সব সময় ঠিক মতো কাজটি পারে না। তাই মিশরে আছে দায়া’ বা ‘নারী হাজাম’, যাদের কাজ মেয়েদের খৎনা করানো, এবং বাসর রাতে সতীচ্ছদ ছেড়া। তারা দেখতে কুৎসিত, হাতে রাখে বড়ো বড়ো নখ, যা তাদের পেশার জন্যে দরকার। দায়াকে পারিশ্রমিক ছাড়াও বেশ ঘুষ দিয়ে থাকে মেয়ের বাবামা, যাতে সে নখ দিয়ে গভীর ক’রে খুঁড়ে প্রত্যঙ্গটির দেয়াল-চ্ছদ-ওষ্ঠ ছিন্নভিন্ন ক’রে প্রমাণ ক’রে দেয় মেয়ের সতীত্ব। বাসরঘরে ঢোকে দায়া, বাইরে উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে মেয়ের বাবামা আত্মীয়স্বজন। মেয়ের সতীত্বে অসতীত্বে দায়ার কিছু যায় আসে না, সে জানে সতী প্রমাণ হ’লে তার মিলবে প্রচুর টাকা।
সে তার নোংরা আঙুল আর বড়ো নখ ঢুকিয়ে দেয় মেয়ের যোনিতে, মেয়েটির ভাগ্য ভালো হ’লে রক্ত বেরিয়ে আসে সহজে, সে ওই রক্তে ভেজায় শাদা রুমাল। যদি সহজে না বোরোয়, সে তার দীর্ঘ নখ ঢুকিয়ে দেয় মেয়ের যোনির দেয়ালে, খুঁড়ে ফেলে দেয়াল, ফিনকি দিয়ে বেরোয় রক্ত; আর ওই রক্তভেজা রুমাল তুলে দেয় মেয়ের পিতার হাতে। পিতা মেয়ের যোনিরক্তভেজা রুমাল পতাকার মতো উড়িয়ে ঘোষণা করে মেয়ের সতীত্ব, হর্ষধ্বনি দিয়ে ওঠে আত্মীয়স্বজন। মেয়েটি বিছানায় কাতরাতে থাকে, রক্তে তার মহাজগত ভিজে যায়; কিন্তু মরুভূমিকে সে একটি চ্ছদ দিতে পেরে ধন্য বোধ করে। এমনই বর্বর ওই মরুভূমি। সতীচ্ছদ আরব পুরুষদের জাতীয় পতাকা।
চোখের বদলা যেমন চোখ, মিথ্যার বদলা তেমনই মিথ্যা: আর প্রতারণার বদলা প্রতারণা। আরব পুরুষ নিজে যৌনসৎ নয়, কিন্তু চায় সতী; তাই প্রতারণা তার প্রাপ্য। আরব পুরুষ রক্ত চায়, তাকে পেতে হয় রক্তের প্রতারণা। আগে বাসর রাতে মেয়ের যোনিতে ঢুকিয়ে দেয়া হতো মুরগির রক্তের দিলা, এখনো গরিব পরিবারে তা করা হয়; আর ওই বক্তের দাগ দেখে শান্ত হয় আরবের হৃদয়। এখন সেখানে দেখা দিয়েছে। সতীচ্ছদের শল্যসংযোজনা!
শল্যচিকিৎসক এখন সতীত্ব হারানো তরুণীর রন্ধে কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি সতীচ্ছদ জুড়ে দিয়ে তাকে আবার ক’রে তোলে সতী। আরব অঞ্চলে এখন দেখা দিয়েছে কৃত্রিম সতী। এ-সুযোগ নিচ্ছে ধনী পরিবারের মেয়েরা। ১৯৬৮তে সতীচ্ছদ সংযোজনের ব্যয় ছিলো ২০০০ দিবাহাম, এখন নেমেছে ৫০০-১০০০ দিরহামে। সেখানে একটি সাধারণ কৃষক পরিবারের বার্ষিক ব্যয় ৬৫ দিরহাম, একটি মেয়ের রন্ধ শেলাইয়ের ব্যয় ২০০০ দিরহাম! সতীচ্ছদ সংযোজনে ব্যবহৃত হয় অতি আধুনিক পদ্ধতি, কিন্তু এটি সেবা করছে সবচেয়ে আদিম পিতৃতন্ত্রের। ফাতিমার (১৯৮২, ১৮৫) মতে, কৃত্রিম সতীত্ব উদ্ভাবিত হয়েছে, কেননা আরব পুরুষ চায় অসম্ভবকে। তারা নিজেরা বিয়ের আগে নারীদের সতীত্ব হরণ করে, কিন্তু বিয়ের সময় হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে একটি সতী-একটি সতীচ্ছদ!
কৃত্রিম সতীচ্ছদ আরব পুরুষের জন্যে যোগ্য পুরস্কার, শঠকে পুরস্কৃত করতে হয় শঠতা দিয়েই। নওঅল (১৯৮০, ৩০-৩১) আরবদের ওপারস্পরিক প্রতারণার একটি তাৎপৰ্যপূর্ণ ঘটনা বলেছেন। এক দিন একটি মেয়ে তার চিকিৎসালয়ে আসে। সে পাচ মাসের গর্ভবতী, কিন্তু তার সতীচ্ছদ রয়েছে অটুট! মেয়েটি তাঁকে জানায় যে বার বার অগভীর সঙ্গমের ফলে তার গর্ভ ঘটেছে। মেয়েটি তাকে অনুরোধ করে পেট কেটে বাচ্চাটি ফেলে দিতে, যাতে অক্ষত থাকে তার মূল্যবান চ্ছদটি। তিনি রাজি না হওয়ায় মেয়েটি চলে যায়; বহু বছর পর মেয়েটির সাথে তাঁর দেখা হয়, মেয়েটি তাকে জানায় সে অন্য এক ডাক্তার দিয়ে পেট কেটে গর্ভপাত করিয়েছিলো। এখন সে এক সফল প্রকৌশলীর স্ত্রী, তাদের দুটি সন্তান হয়েছে। নওঅল (১৯৮০, ৩১) বলেছেন :
‘কল্পনায় আমি মাঝে মাঝে আমার অদেখা সে-প্রকৌশলীটিকে দেখি, দেখতে পাই বাসর রাতে সে পবিত্র অনুষ্ঠানরূপে তার স্ত্রীর চচ্ছদ ছিন্ন করছে, বুঝে নিচ্ছে যে তার স্ত্রী ছিলো কুমারী; এবং পবিম সুখে সে দেখতে পায় তার স্ত্রীর চচ্ছদটি অটুট বয়েছে। তবে কাছে ওই মেয়েটির পেটের লম্বালম্বি কাটাদাগটি তুচ্ছ, যেমন ওই মেযেটিব হৃৎপিণ্ড বা যকৃৎ বা মস্তিষ্কে একটি কাটা দাগেব কোনো তা ৎপর্য নেই তার কাছে, তবে এক মিলিমিটাব দীর্ঘ ওই চ্ছদে যদি থাকতো একটি ছোটো ছেড়া, তাহলে তা উল্টেপাল্টে দিতো তার সমগ্ৰ জগত।‘