জৈবিকভাবে পুরুষেরা যে নারীদের তুলনায় অধিকতর সহিংস এটা আমরা আগের বিভিন্ন আলোচনা থেকে জেনেছি। কিন্তু কথা হচ্ছে, পুরুষেরা সব বয়সেই একইরকম সহিংসতা প্রদর্শন করে? না তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে ভায়োলেন্স ব্যাপারটা পুরুষদের মধ্যে সার্বজনীন হলেও এর ব্যাপ্তি বয়সের সাথে ওঠানামা করে। যে কোনো দেশেই দেখা গেছে গড়পরতা সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড এবং সহিংসতা পুরুষেরা করে থাকে যখন তাদের বয়স থেকে পনেরো থেকে উনত্রিশের মধ্যে[২৪৭]। তারপর যত বয়স বাড়তে থাকে সহিংসতা কমে আসে। এমনকি সিরিয়াল কিলাররাও একটা নির্দিষ্ট বয়েসের পরে সেভাবে আর হত্যা করে না।
এর কারণটাও স্পষ্ট। কারণ এই বয়সের পরিসীমাতেই পুরুষেরা রিপ্রোডাক্টিভ কম্পিটিশনের চূড়ায় থাকে। আমেরিকায় করা সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে, পনেরো বছর বয়সের দিকে যখন ছেলেদের বয়ঃপ্রাপ্তি শুরু হয় তখনই খুন-খারাবির হার বাড়তে থাকে, বিশ বছরের দিকে একদম শীর্ষে পৌঁছায় এবং ত্রিশ চল্লিশ বছর বয়সে পৌঁছানো পর্যন্ত খুন-খারাবি চলতেই থাকে[২৪৮]। খুন-খারাবির শিকার যারা হন, তারাও বেশি হন বিশ বছর বয়সের দিকেই।
দেখা গেছে প্রতি বছরে আমেরিকায় প্রতি এক লক্ষ জনে খুনের হার দশ থেকে চৌদ্দ বছরে যেখানে মাত্র ১.৬, কিন্তু পনেরো থেকে উনিশ বছরের সময় সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ এ, আর বিশ থেকে চব্বিশ বছর বয়সে তা ১৭.৮[২৪৯]। তারপর পঁচিশ থেকে উনত্রিশ বছর বয়সের পরিসীমায় তা দাঁড়ায় ১৬.৩; বত্রিশ থেকে চৌত্রিশে ১৩.৯; আর পঁয়ত্রিশ উনচল্লিশ বছরের মধ্যে ১২। সেজন্যই ডেভিড বাস তার ‘মার্ডারার নেক্সট ডোর’ গ্রন্থে বলেছেন[২৫০] —
এই সংখ্যাগুলো থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, পুরুষেরা যে সময়টাতে প্রজননগত প্রতিযোগিতার সময়ে প্রবেশ করে, সেই সময়েই খুন-খারাবির প্রকোপ নাটকীয় ভাবে বেড়ে যায়।
আমরা বাংলাদেশে আমাদের বাপ-দাদাদের ঘাড়ত্যাড়া আর রগচটা ছেলেপিলেদের দিকে দেখিয়ে বলতে শুনেছি‘তরুণ বয়স তো, তাই ছেলের রক্ত গরম। দেখবেন বয়স হলে রক্তও ঠান্ডা হয়ে আসবে’। উনারা হয়তো চারপাশের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে এই কথাগুলো বলেন। আসল কারণ হলো, যৌনতার প্রতিযোগিতাসূচক ব্যাপারগুলো যখন কমে আসে, তখন এমনিতেই সহিংসতা আর সেভাবে ব্যবহারে প্রকাশিত হয় না। এটাকেই হয়তো চলতি কথায় ‘রক্ত ঠান্ডা’ হয়ে যাওয়া বলে ভেবে নেওয়া হয়।
ব্যাপারগুলো ‘কমন সেন্স’ হিসেবে জানা ছিল অনেক আগে থেকেই কিন্তু বিবর্তন মনোবিজ্ঞান রঙ্গমঞ্চে আসার আগ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কোনো গবেষণা ছিল না। ১৯৮৩ সালে দুই গবেষক ট্রাভিস হির্শি এবং মাইকেল গডফ্রেসন “Age and Explanation of Crime” নামক প্রবন্ধের মাধ্যমে দেখালেন বয়স এবং অপরাধপ্রবণতার এই ধারাটি সংস্কৃতি নির্বিশেষে একইরকম পাওয়া যাচ্ছে[২৫১]। অর্থাৎ, যে কোনো সংস্কৃতিতেই দেখা যায় বয়ঃসন্ধির সময় থেকেই পুরুষদের মধ্যে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে, আর তা একেবারে শীর্ষে পৌঁছায় যৌবনের প্রারম্ভে, বিশ থেকে ত্রিশের দশকের সময়টায় তা দ্রুতগতিতে কমতে থাকে, আর মধ্যবয়সে তা আনুভূমিক হয়ে যায়। নীচের রেখচিত্রটি দেখলে ব্যাপারটি আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে দু-চারটি ক্ষেত্রে এই গ্রাফের ব্যতিক্রম পাওয়া গেলেও সার্বজনীনভাবে এই গ্রাফের গড়নের সাথে প্রায় সকল অপরাধ-বিশেষজ্ঞই এখন একমত পোষণ করেন[২৫২],[২৫৩]।

অপরাধপ্রবণতা আর প্রতিভা কি তবে এক সূত্রে গাঁথা?
এই অংশের শিরোনাম দেখে অনেকেই হয়তো আঁতকে উঠবেন। কোথায় অপরাধপ্রবণতা আর কোথায় প্রতিভা! কোথায় বাগেররহাট আর কোথায় সদরঘাট! কিন্তু বাগেরহাট থেকে সদরঘাট যাওয়ার রাস্তা যেমন একটু খুঁজলেই পাওয়া যায়, তেমনি অনেক গবেষক মনে করেন অপরাধপ্রবণতার সাথেও প্রতিভার একটা অলিখিত সম্পর্কও পাওয়া যাবে একটু নিবিষ্ট মনে খুঁজলেই। আগের অংশেই অপরাধ প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দেখেছি যে, বয়ঃসন্ধির সময় থেকেই পুরুষদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়তে থাকে, আর তা একেবারে শীর্ষে পৌঁছায় যৌবনের প্রারম্ভে, বিশ থেকে ত্রিশের দশকের সময়টায় তা দ্রুতগতিতে কমতে থাকে, আর মধ্যবয়সে তা আনুভূমিক হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে লক্ষ করেছেন ঠিক একই ধারা পাওয়া যাচ্ছে বয়স এবং মানব প্রতিভার মধ্যেও।
বিভিন্ন বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, শিল্পীদের জীবনী বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে অধিকাংশরই প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে যৌবনের প্রারম্ভেই, আর যৌবনের শেষ হতে না হতেই অতিদ্রুত প্রতিভার মৃত্যু ঘটে যায়। আসলে বয়স হলে প্রতিভাধরদের মাথা যে আগের মতো কাজ করে না, এর অনেক উদাহরণই তুলে ধরা যায়। পল ম্যাকার্টনি সেই কবে বিটলসের সময় জনপ্রিয় ছিলেন, ব্যতিক্রমধর্মী বহু গান লিখে সঙ্গীতপিপাসুদের পাগল করে দিয়েছিলেন ষাট-সত্তুরের দশকে। অবধারিতভাবে তিনি তখন ছিলেন যৌবনের প্রারম্ভে। তার পর বহু বছর পার হয়েছে, গঙ্গা যমুনা দিয়ে বহু জল গড়িয়ে গেছে, তিনি একটিও ‘জনপ্রিয় সঙ্গীত’ দর্শকদের জন্য লিখতে পারেননি। তার অধিকাংশ সময় এখন নাকি ছবি আঁকাতেই কেটে যায়। বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন মহাকর্ষ, আলোর বিচ্ছুরণসহ তার সফল এবং বিখ্যাত আবিষ্কারগুলো তরুণ বয়সেই করে ফেলেছিলেন। আরও পরিষ্কার করে বললে তার ২৪ বছর বয়সের মধ্যেই। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের জীবনীর দিকে তাকাই।
তার প্রায় সবগুলো আবিষ্কারই হয়েছে তাঁর ‘বিস্ময় বছর’ যাকে আমরা অভিহিত করি Annus Mirabilis হিসেবেসেই বছরটিকে কেন্দ্র করে। সে বছরের প্রথমভাগে আইনস্টাইন প্রকাশ করেছিলেন ব্রাউনীয় গতির উপর একটা গবেষণাপত্র যেটি সে সময় দিয়েছিল অণুর অস্তিত্বের বাস্তব প্রমাণ, বানিয়েছিলেন আলোর কনিকা বা কোয়ান্টাম তত্ত্ব, আর সে সময়েই প্রকাশ করেছিলেন সবচাইতে জনপ্রিয় আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বটি (Special Theory of relativity)। তার বিখ্যাত সমীকরণ E=mc2 সেসময় বাজারে এসেছিল একটি অতিরিক্ত (সংযোজনী) তিন পৃষ্ঠার পেপার হিসেবে। একটি পেপারের জন্য আবার পরবর্তীতে পেয়েছিলেন নোবেল। তখন তার বয়স চল্লিশও পেরোয়নি। মূলত সার্বিক অপেক্ষিক তত্ত্ব (General Theory of Relativity) আবিষ্কারের পর আইনস্টাইন আরও পঞ্চাশ বছর বেঁচেছিলেন কিন্তু আর কোনো বড় ধরনের আবিষ্কার করতে পারেননি।
মূলত মধ্যবয়স থেকে শুরু করে বার্ধক্যের পুরোটা সময় জুড়েই আইনস্টাইন চেষ্টা করেছেন কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে অসম্পূর্ণ বা ভুল প্রমাণ করতে আর প্রকৃতি জগতের বলগুলোকে একটিমাত্র সুতায় গাঁথতে। তার সেই উচ্চাভিলাসী চেষ্টা কিন্তু সফল হয়নি। বরং জীবনের শেষ বছরগুলোতে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের মূল ধারার গবেষণা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক ‘নিঃসঙ্গ গ্রহচারী’তে পরিণত হন[২৫৪]। বিজ্ঞানীদের প্রতিভা আর বয়সের সম্পর্ক নিয়ে আইনস্টাইন নিজেই করে গেছেন মজার এক উক্তি[২৫৫] —
যে ব্যক্তি ত্রিশ বছর বয়সের আগে বিজ্ঞানে কোনো অবদান রাখতে পারেনি, সে আর কখনোই পারবে না।
আইনস্টাইনের এই উক্তির সত্যতা আমরা পাই শুধু তার নিজের জীবনেই নয় পাশাপাশি বহু প্রতিভাধরদের জীবনেই। গণিত এবং পদার্থিবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোকে বহুদিন ধরেই ‘ইয়ং ম্যান্স গেম’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে[২৫৬]। গণিতবিদ জন ফন নিউম্যান গণিতে যে অবিস্মরণীয় অবদানগুলো রেখে গেছেন, তার প্রায় সবগুলোই ২৫ বছর বয়সের মধ্যে। এর পর থেকে শুরু হয়েছিল মূলত প্রতিভার পতন[২৫৭]। জেমস ওয়াটসন যে ডিএনএ তথা যুগল সর্পিলের রহস্যভেদ করার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন, তিনিও তা করেছিলেন ২৫ বছর বয়সে (সেই আবিষ্কারটির জন্য ওয়াটসন পরবর্তীতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন)।
তারপর থেকে যত দিন গেছে তার ক্যারিয়ারে আর কোনো সফলতার পালক যোগ করতে পারেননি। এধরনের অনেক উদাহরণই দেয়া যায়। বিল গেটস তরুণ বয়সে ‘কম্পিউটার উইজার্ড’ বালক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, আজকে প্রৌঢ় বয়সে তিনি হাতে কলমে প্রোগ্রামিং টোগ্রামিং বাদ দিয়ে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হয়ে নিরাপদ জীবনযাপন করছেন।
বিভিন্ন সময়ে গবেষকেরা বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের বয়স এবং তাদের জীবনের সাফল্যমণ্ডিত স্বর্ণালি সময়গুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ হাজির করেছেন। এইচ. সি. লেহমান ১৯৫৩ সালেই তার একটি গবেষণায় দেখিয়েছিলেন দুনিয়ার অধিকাংশ সফল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোই মূলত তরুণ বিজ্ঞানীরা করেছিলেন, বয়স্ক বিজ্ঞানীরা নয়[২৫৮]।

১৯৭৯ সালে এস. কোল[২৫৯] এবং ১৯৯১ সালে লেভিন এবং স্টিফেন তাদের গবেষণায় আলাদাভাবে দেখিয়েছেন যে, পিএইচডি করার সময় এবং তার পর-পরই বিজ্ঞানীদের উৎপাদন- শীলতা এবং কর্মমুখরতা হু-হু করে বাড়তে থাকে, আর তারপর থেকেই আবার তা লক্ষণীয়ভাবে কমে আসতে থাকে[২৬০]।
২০০৩ সালে সাতোশি কানাজাওয়া ২৮০ জন প্রোথিতযশা সমসাময়িক বিজ্ঞানীর উপর গবেষণা চালিয়ে দেখান যে, বয়স-অপরাধ রেখচিত্রের মতোই (আগের অংশে আলোচিত) প্রতিভার ক্ষেত্রেও বয়ঃসন্ধির সময় থেকেই পুরুষদের মধ্যে প্রতিভার স্ফুরণ বাড়তে থাকে, আর তা একেবারে শীর্ষে পৌঁছয় যৌবনের প্রারম্ভে, ত্রিশ বছরের পর থেকে তা দ্রুতগতিতে কমতে থাকে, আর তারপরে তা একেবারেই আনুভূমিক হয়ে যায়। তার গবেষণাপত্র থেকে পাওয়া ফলাফল নীচে রেখচিত্রের সাহায্যে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো
অধ্যাপক কানাজাওয়া তার ফলাফল সম্পর্কে গবেষণাপত্রে বলেছেন এভাবে[২৬১] —
Fig presents the distribution of the peak age among the 280 scientists in my sample. It is apparent from the histogram that scientific productivity indeed fades very rapidly with age. Nearly a quarter (23.6%) of all scientists makes their most significant contribution in their career during the five years around age 30. Two-thirds (65.0%) will have made their most significant contributions before their mid-thirties; 80% will have done so before their early forties.
বয়সের সাথে প্রতিভার প্যাটার্নটি শুধু বিজ্ঞানে নয়, শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত কিংবা খেলাধুলার ক্ষেত্রগুলোতেও একই রকম পাওয়া গেছে। যদিও সাহিত্যের সাথে হার্ডকোর গণিত/ বিজ্ঞানের একটু পার্থক্য আছে। সাহিত্যের ক্ষেত্রে দেখা গেছে বহু সাহিত্যিকদেরই প্রতিভার চূড়া স্পর্শ করে মধ্যবয়সে এসে (৪০ থেকে ৫০ বছর বয়েসের মধ্যে) এবং অধিকাংশ সাহিত্যিকেরাই অল্প বয়সে ফুরিয়ে যান না, বরং বহুদিন ধরে সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যেতে পারেন[২৬২]। রবীন্দ্রনাথ তার বার্ধক্যে এসেও অবলীলায় কবিতা গল্প নাটক উপন্যাস লিখেছেন তরুণ-সাহিত্যিকদের সাথে পাল্লা দিয়ে। শওকত ওসমান, সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমানসহ অনেকেই থাকবেন উদাহরণে।
পাশ্চাত্যেও এমন উদাহরণ বিরল নয়। মার্ক টোয়েন কিংবা আলফ্রেড হিচককের মতো সাহিত্যিক কিংবা শিল্পীরা জীবনের প্রান্তসীমাতে এসেও আমাদের জন্য অসাধারণ সাহিত্য বা শিল্পকর্ম উপহার দিয়েছেন। অবশ্য বিপরীত উদাহরণও খুঁজলে পাওয়া যাবে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য মাত্র ২১ বছর বয়সে অকাল প্রয়াণের আগেই তার সমস্ত ক্ষুরধার কবিতাগুলো লিখে ফেলেছিলেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার বিদ্রোহী কবিতাটি লেখেন তার মাত্র ২৩ বছর বয়সে। আসলে নজরুলের সকল সাহিত্যকর্মই তরুণ বয়সের প্রতিভার বিচ্ছুরণ। ১৯৪২ সালে স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হবার পরে পরবর্তী দীর্ঘ চৌত্রিশ বছর কোনো সাহিত্যচর্চা করতে পারেননি, বরং একেবারে পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করেন, এবং সেভাবেই মৃত্যুবরণ করেন।
পশ্চিমেও এ ধরনের উদাহরণ আছে। প্রথম জীবনে অত্যন্ত সফল সাহিত্যিক হিসেবে বিবেচিত হলেও পরবর্তীকালে প্রতিভার স্ফুরণ আর সেভাবে দেখা যায়নি। এমনি একজন আমেরিকান সাহিত্যিক ছিলেন জে. ডি. স্যালিঙ্গার (J. D. Salinger), যিনি তরুণ বয়সে The Catcher in the Rye উপন্যাস লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন, কিন্তু জীবনের শেষ তিন দশক ধরে আক্ষরিক অর্থে কিছুই প্রকাশ করতে পারেননি। তবে ক্ষেত্রবিশেষে বিচ্ছিন্নভাবে ফলাফল যা-ই পাওয়া যাক না কেন, গড়পড়তা রেখচিত্রের আকার এবং ট্রেন্ড মোটামুটি একইরকম পাওয়া গেছে। সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রকর এবং সাহিত্যিকদের বয়স-প্রতিভার তুলনামুলক রেখচিত্র নীচে দেওয়া হলোঃ

উপরের রেখচিত্রগুলো নিয়ে খুব বেশি জটিল আলোচনায় না ঢুকেও কেবল সাদা চোখেই বলে দেয়া যায় যে, বয়স-অপরাধ রেখচিত্রের (Age-crime curve) সাথে বয়স-প্রতিভা রেখচিত্রের (Age-genius curve) অদ্ভুত ধরনের মিল পাওয়া যাচ্ছে। দুটোর ক্ষেত্রেই দেখা যায় মূলত বয়ঃসন্ধির পর থেকেই গড়পড়তা এ বৈশিষ্ট্যগুলোর স্ফুরণ ঘটতে থাকে, শীর্ষে পৌঁছয় যৌবনের প্রারম্ভে, আর মধ্যবয়সের পর থেকে তা দ্রুতগতিতে কমতে থাকে। হয়তো সাধারণ পাঠকদের কাছে পুরো ব্যাপারটি কাকতালীয় মনে হতে পারে, কিন্তু বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন জৈববৈজ্ঞানিক কারণেই এদের মধ্যে একটা অলিখিত সম্পর্ক থেকে যায়।
আমরা আগের আলোচনা থেকে কিছুটা আলামত পেয়েছি যে, বয়ঃসন্ধি বা পিউবার্টির সময় থেকেই সবার মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে, তারা অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হয়, কারো কারো মধ্যে সহিংসতা বৃদ্ধি পায়, কারো বা মধ্যে প্রতিভা। জৈবিকভাবে চিন্তা করলে, বয়ঃসন্ধির আগে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের কোনো প্রজননগত উপযোগিতা নেই। কারণ সেই প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবকে প্রজননগত সফলতায় স্থানান্তরিত করা সেই সময় সম্ভব হয় না।
কিন্তু বয়ঃসন্ধিকাল স্পর্শ করার সাথে সাথে প্রতিযোগিতামূলক অভিব্যক্তিগুলো যেন ধাবমান অশ্বের মতোই দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। যখন থেকে দেহ সর্বোপরি প্রজননের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠে তখন থেকেই প্রতিটি প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র (সেটা সহিংসতাই হোক, অথবা হোক বিশেষ দিকে প্রতিভাময় দীপ্তি) স্ফুরিত হতে থাকে তীব্র বেগে। মধ্যবয়সের পর সেই আকাঙ্ক্ষা স্তিমিত হয়ে আসে জৈবিক নিয়মেই। অর্থাৎ, এই তত্ত্ব অনুযায়ী[২৬৩] —
অপরাধপ্রবণতা আর মেধা দুটোই আসলে তারুণ্যের প্রতিযোগিতামূলক অভিব্যক্তির ফসল, আদিম শিকারি-সংগ্রাহক পরিস্থিতিতে যার চূড়ান্ত নিয়ামক ছিল প্রজননগত সাফল্য। এই ধারার প্রভাব আজকের সমাজেও একটু চেষ্টা করলেই লক্ষ করা যাবে। মারামারি কাটাকাটি এবং সহিংসতায় কম পরিমাণে নিজেকে নিয়োজিত করে বরং বহু পুরুষ তার উদ্দীপনাকে কাজে লাগায় প্রতিভার নান্দনিক (কেউ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, কেউ সংগীত সাধনা, কেউ খেলাধুলা, কেউ শিল্প সাহিত্য সৃষ্টি, কেউবা অর্থোপার্জন) বিকাশে। আসলে এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে সে নিশ্চিত করে অধিক নারীর দৃষ্টি, এবং সময় সময় তাদের অর্জন এবং প্রাপ্তি।
প্রতিভা ব্যাপারটাকে কেবল সঙ্গমী মননের অভিব্যক্তি ভাবতে হয়তো অনেকেরই মন সায় দেবে না। কিন্তু আমরা আগের অংশের আলোচনায় দেখেছি যে, অর্থ-প্রতিপত্তি আর ক্ষমতায় বলীয়ান পুরুষেরাই বেশি পরকীয়ায় আসক্ত হন। আমরা দেখেছি যে, কেতাদুরস্ত কাপড়চোপড়, দামি গাড়ি, বাড়ি, ঘড়ি এমনকি কথাবার্তা, চালচলন, স্মার্টনেস, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক বা সামাজিক ক্ষমতা বা প্রতিপত্তি সবকিছুকেই পুরুষেরা ব্যবহার করে নারীকে আকর্ষণের কাজে। তাহলে প্রতিভাই বা তালিকা থেকে বাদ যাবে কেন? নিজের প্রতিভাকে কীভাবে নারীদের আকর্ষণের কাজে ব্যবহার করা যায় তার জলজ্যান্ত উদাহরণ বিজ্ঞানী সম্রাট আলবার্ট আইনস্টাইন।
প্রতিভাধর এই বিজ্ঞানী শুধু বিজ্ঞানের জগতেই অসাধারণ ছিলেন না, নারীলিপ্সায়ও ছিলেন অনন্যসাধারণ। মেরী, মিলেইভা, এলসা, আইলস, বেটি নিউম্যান, মার্গারেট লেনবাখ, টনি মেন্ডেল, হেলেন ডুকাসকত নারী যে এসেছে তার জীবনে, কোনো ইয়ত্তা নেই। একবার আবার একই সাথে প্রেম করেছেন মা (এলসা) এবং মেয়ের (আইলস) সাথে একই সময়ে, এমন উদাহরণও আছে। আইনস্টাইনের প্রেমময় জীবন নিয়ে ড. প্রদীপ দেব একবার একটি চমৎকার প্রবন্ধ লিখেছিলেন মুক্তমনায় ‘প্রেমিক আইনস্টাইন’ শিরোনামে[২৬৪]। সেই প্রবন্ধটি পাঠ করলে পাঠকেরা বুঝতে পারবেন কীভাবে নিজের প্রতিভা, যশ এবং খ্যাতিকে আইনস্টাইন প্রতিটি ক্ষণে ব্যবহার করেছেন নারীদের আকর্ষণের উদ্দেশ্যে।

একাধিক নারীপ্রীতির ব্যাপারটা শুধু আইনস্টাইনের একচেটিয়া ছিল ভাবলে ভুল হবে। বহু বিখ্যাত বিজ্ঞানীরাই নিজের প্রতিভার স্ফুরণ ঘটিয়েছিলেন নারীসঙ্গ কামনায়, কিংবা আরও পরিষ্কার করে বললে অনেক সময় নারীসঙ্গের মাধ্যমে। অরভিন শ্রোডিংগারের নাম আমরা প্রায় সবাই জানি। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা কেউ পড়ে থাকলে তিনি শ্রোডিংগারের সমীকরণ পড়েছেনই। শ্রোডিংগার গত হয়েছেন সেই কবে, কিন্তু ‘শ্রোডিংগারস ক্যাট’ জীবিত না মৃত এতদিন বাদেও পদার্থবিজ্ঞানের জগতে দার্শনিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে, সেই নোবেল বিজয়ী শ্রোডিংগার তার জগদ্বিখ্যাত তরঙ্গ সমীকরণটি তৈরি করেছিলেন যখন তিনি তার এক রক্ষিতাকে নিয়ে নির্জনে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। একটিমাত্র রক্ষিতা থাকলে তাও না হয় কথা ছিল, তিনি আবার পুরোটা সময়েই আরেক নারীর সাথে সম্পর্ক রেখেছিলেন, যিনি তার এক বন্ধু আর্থার মার্চের (Arthur March) স্ত্রী। আর এগুলোর বাইরে তার নিজের স্ত্রী তো ছিলই।
বিজ্ঞানীদের বাইরে প্রতিভাধর কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, আর খেলোয়াড়দের মধ্যে নারীলিপ্সার ব্যাপারটা এতটাই প্রকাশ্য যে এটা নিয়ে আলদা করে কিছু লেখার কোনো মানে হয় না। তারপরেও কিছু মজার ব্যাপার উল্লেখ করতেই হয়। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর কথা আমরা সবাই জানি। তিনি তার কর্মবহুল জীবনে ১৪৭, ৮০০টির মতো নান্দনিক চিত্রকলা আমাদের উপহার দিয়েছেন। সংখ্যায় এবং সৌকর্যে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন তার সমসাময়িক চিত্রশিল্পীদের। সংখ্যার ব্যাপারটিই এখানে মুখ্য নয়, যেটা সবচেয়ে গণ্য হিসেবে পিকাসোর ক্ষেত্রে উঠে এসেছিল তা হলো তিনি কেবল একই ধরনের ছবি একঘেয়েভাবে এঁকে যাননি। সবসময়ই ছবি নিয়ে পুরনো প্রথা ভেঙে নতুন ধারা এবং রীতি তৈরি করেছেন নিজস্ব আমেজে। পিকাসোর জীবনের নীল যুগ, গোলাপী যুগ, কিউবিস্ট যুগ, সারেলিস্ট যুগপ্রভৃতি যুগস্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে দীপ্যমান হয়ে আছে।
সেটা থাকুক তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ঐতিহাসিকেরা পিকাসোর কর্মময় জীবন আর চিত্রকল্পের ধারাগুলো নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে কৌতূহলোদ্দীপক একটি ব্যাপার লক্ষ করলেন তার প্রতিটি সৃজনশীল যুগ তৈরি হয়েছিল একেকজন নতুন রক্ষিতাকে ঘিরে[২৬৫]। বলাবাহুল্য পিকাসো এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু নন। মোজার্ট, লুইস ক্যারল, রুশো, দালি, ফিটজেরাল্ড, জেমস জয়েস, নীটসে, দান্তে প্রমুখ প্রতিভাধরদের জীবনের সাথে নারীসঙ্গ ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। অনেকের বিরুদ্ধে আছে বিকৃত যৌনরুচির অভিযোগও। সেগুলোতে না হয় নাইবা গেলাম এখানে।
আর খেলোয়াড়দের মধ্যে? এই তো কিছুদিন আগেই (ফেব্রুয়ারি, ২০১০) প্রতিভাধর গলফ খেলোয়াড় ‘বিবাহিত’ টাইগার উডসের প্রায় একডজন ‘পরনারীর’ সাথে যৌন সম্পর্ক থাকার কেলেঙ্কারি নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। এর আগে বিখ্যাত বাস্কেটবল খেলোয়ার ম্যাজিক জনসন সারা জীবনে ১০০০ জন নারীকে তার বিছানায় নিতে পেরেছেন এই মর্মে ঘোষণা দিয়ে পত্রপত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন। প্রকাশ্যে এসব কিছু থেকে অনেকেই অনুমান করেন যে, খ্যাতিমানদের প্রতিভা, অপরাধীদের সহিংসতা এবং তাদের প্রজননগত চাহিদা বা সাফল্য এ সবকিছুই হয়তো আসলে একসূত্রে বাঁধা।
এই অধ্যায়ের উপরের দিকের একটি অংশে (কেন ক্ষমতাশালী পুরুষেরা বেশি পরকীয়ায় আসক্ত হয়?) যে সতর্কবাণী দেয়া হয়েছে সেই সতর্কবাণী কিন্তু এখানেও প্রযোজ্য। উপরের আলোচনা থেকে কেউ যদি ধরে নেন, প্রতিভাধর হলেই সবাই স্ত্রীকে ফেলে পরকীয়ায় কিংবা পরনারীতে আসক্ত হবেন কিংবা নারীলোলুপ হয়ে যাবেন, তা কিন্তু ভুল হবে। বহু প্রতিভাধরেরাই কিন্তু নারীলোলুপ নন। প্রতিভা নারীলিপ্সার কারণ নয়, বড়জোর বলা যায় কারো কারো ক্ষেত্রে একটা অচেতন বৈবর্তনিক কৌশল। জিওফ্রি মিলার, ম্যাট রিডলী, সাতোসি কানাজাওয়া সহ অনেক বিবর্তনবাদী মনোবিজ্ঞানীই প্রতিভা, চৌকষতা, বুদ্ধিমত্তা এ বৈশিষ্ট্যগুলোকে যৌনতার নির্বাচন বা সেক্সুয়াল সিলেকশনের ফল বলে রায় দিয়েছেন।
প্রতিভার উদ্ভব আর বিকাশে যৌনতার নির্বাচন ব্যাপারটা কাজ করে থাকলে বিপরীত লিঙ্গের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে নির্বাচিত হবার ব্যাপারটিও অবধারিতভাবেই বিবর্তনের ইতিহাসে কাজ করেছিল। আদিম সমাজে হয়তো প্রতিভার নির্বাচন কাজ করত খুব ছোট স্কেলে। যে ব্যক্তি তার উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে নিখুঁত এবং ধারালো অস্ত্র বানাতে পেরেছিল এবং গোত্রকে দিয়েছিল অধিক শিকার এবং মাংসের নিশ্চয়তা, তারা হয়ে উঠেছিল গোত্রের হার্টথ্রব। এ ধরনের প্রতিভাধর আদিম প্রকৌশলীরা নারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিল অধিক মাত্রায়। ফলে তারা শয্যাসঙ্গী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। একইভাবে পুরুষেরাও নারীদের বিভিন্ন প্রতিভাকে নির্বাচিত করেছিল, করেছিল বুদ্ধিমত্তা, স্মার্টনেস এবং সর্বোপরি সৌন্দর্যকেও। সেজন্যই নারীরা আজও সৌন্দর্যের প্রতি সচেতন থাকে (বিলিয়ন ডলারের কসমেটিক্স ইন্ডাস্ট্রি মূলত এই চাহিদাকে মূল্য দিয়েই টিকে আছে), কারণ পুরুষেরা সুন্দরী নারীর প্রতি লালায়িত হয়।
তবে আধুনিক সমাজে প্রতিভার সমীকরণটা অনেক জটিল হয়ে গেছে। এটা ঠিক প্রতিভাধরদের পুরুষদের প্রতিভা কেবল নারীদের আকর্ষণের জন্য এটা ঢালাওভাবে বলা ঠিক নয়, কিংবা আরও ভালোভাবে বললে ‘পলিটিকালি কারেক্ট’ নয়, কিন্তু বিবর্তনের ইতিহাসের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে ‘দৃষ্টি আকর্ষণের’ ব্যাপারটা একেবারে ফেলে দেয়া যাবে না। আর অনেক প্রতিভাধর পুরুষেরা যে নিজেদের প্রতিভাকে নারীলিপ্সার কাজে ব্যবহার করেছেন এবং এখনও করছেন, সেটা আমার এ লেখার উদাহরণগুলোতেই বোধ করি স্পষ্ট করা হয়েছে। শক্তিমত্তার পাশাপাশি আজ পুরুষদের বুদ্ধিমত্তা, প্রতিভা দিয়ে নারীরা আকৃষ্ট হন, (এটা বৈবর্তনিক প্রবৃত্তির কারণেই অনেক সময় ঘটে, ব্যক্তিবিশেষের সচেতন ইচ্ছা অনিচ্ছার ব্যাপারটি এখানে মুখ্য নয়), যার কারণে বহু নারীই প্রতিভাবানদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আকৃষ্ট হবার পরে তা গ্রহণ বা বর্জনের ব্যাপারটা ব্যক্তিবিশেষের বিবেচনার উপরেই থেকে যায় অবশ্য।
এর একটি চমৎকার উদাহরণ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর প্রতিভাময় জীবন। দুরারোগ্য মোটর নিউরোন রোগে আক্রান্ত এই প্রতিভাধর বিজ্ঞানীর কেবল মস্তিষ্কইটাই কর্মক্ষম এবং তিনি ডান হাতের দু আঙুল ছাড়া আর কিছু নাড়াতে পারেন না, তারপরেও পক্ষাঘাতগ্রস্ত এই বিজ্ঞানী স্বীয় প্রতিভায় আকর্ষণ করতে পেরেছেন একাধিক নারীকে, এবং বর্তমানে তৃতীয় স্ত্রীর সাথে সুখী জীবনযাপন করছেন।
আরেকটি ব্যাপারও পরিষ্কার করা প্রয়োজন। উপরের আলোচনা থেকে কেউ যদি ধরে নেন, প্রতিভা কেবল পুরুষদেরই একচেটিয়া, সেটাও ভুল একটি উপসংহারে পৌঁছানো হবে। প্রতিভা শুধু ছেলেদেরই থাকে না, থাকে মেয়েদেরও। আর মেয়েদের প্রতিভার ব্যাপারটাও কিন্তু একইভাবে যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমেই নির্বাচিত হয়েছিল, এবং হয়েছিল একইভাবে পুরুষদের জৈবিক চাহিদাকে মূল্য দিতে গিয়ে। তবে কিছু ক্ষেত্রে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা প্রতিভার বিকাশে নারী পুরুষে। বহু প্রতিভাধর পুরুষের প্রতিভা যেমন স্বতঃস্ফুর্তভাবে নারী সঙ্গ পেয়ে বিকশিত হয়েছিল, নারীদের ক্ষেত্রে প্যাটার্নটি ঠিক সেরকম নয়। নারীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রতিভাময় মুহূর্তের সূচনা ঘটে যখন সে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে জড়ায় বা জড়ানোর আভাস পায়[২৬৬]।
বিখ্যাত কবি এলিজাবেথ ব্যারেট ব্রাউনিং এর কথা বলা যায় এ প্রসঙ্গে। গবেষকেরা বলেন, তার প্রতিভার দীপ্তি শিখর স্পর্শ করেছিল যখন তিনি রবার্ট ব্রাউনিং এর কাছ থেকে প্রেমের সাড়া পেয়েছিলেন, এবং দীর্ঘমেয়াদি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকে যাচ্ছিলেন। ‘পর্তুগিজের সনেট’, যাকে সমালোচকেরা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে মনোনীত করেছেন, সে সময়েরই লেখা! অবশ্য চেষ্টা করলে যে এই ধারার ব্যতিক্রম পাওয়া যাবে না যে তা নয়। তসলিমা নাসরিনের কথাই ধরা যেতে পারে।
তসলিমা তার যৌবনে বহু পুরুষের সান্নিধ্যেই এসেছেন, আর দশটা মেয়ের তুলনায় অনেক বেপরোয়া জীবন অতিবাহিত করেছেন, ঠিক সেসময়ই তার কলম থেকে বেরিয়েছিল ক্ষুরধার লেখনীগুলো পত্রিকার কলাম, গল্প, উপন্যাস আর কবিতা। তার মানে এই নয় যে, মেয়েরা কেবল শান্ত, সুন্দর এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে থাকলেই কেবল ভালো লিখতে পারে। ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ সময়েও দুর্দান্ত লেখা বেরিয়ে আসে, নারী পুরুষ সবারই। যদিও তসলিমাকে নিয়ে গবেষণারত কোনো গবেষক আমাদের দেখিয়ে বলতেই পারেন, তার অনিন্দ্যসুন্দর এবং কালজয়ী কবিতাগুলোর বেশিরভাগই তসলিমা লিখেছিলেন, যখন তিনি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সাথে দীর্ঘমেয়াদি রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে ছিলেন, তা সেই সম্পর্কে যতই টানাপোড়েনের আলামত থাকুক না কেন।
ভালোবাসা কারে কয়
২৪৭.↑ Alfred Blumstein, Youth Violence, Guns, And The Illicit-Drug Industry, Journal of Criminal Law and Criminology (Northwestern), Guns and Violence Symposium, vol 86, no. 1, 1995:10
২৪৮.↑ John M. MacDonald, The Murderer and His Victim, Charles C. Thomas, Publisher Ltd, 1986
২৪৯.↑ David Lester, Questions and Answers about Murder, Charles Press Pubs, 1991
২৫০.↑ David M. Buss, The Murderer Next Door, পূর্বোক্ত, পৃঃ ২৩।
২৫১.↑ Travis Hirschi and Michael Gottfredson, Age and the Explanation of Crime, American Journal of Sociology, v89 n3 p552-84 Nov 1983
২৫২.↑ Alfred Blumstein, পূর্বোক্ত।
২৫৩.↑ Margo Wilson and Martin Daly, পূর্বোক্ত।
২৫৪.↑ অভিজিৎ রায়, আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী, অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০০৫ (পিরবিধত সংsরণ ২০০৬)
২৫৫.↑ A person who has not made his great contribution to science before the age of thirty will never do so. -Albert Einstein (Brodetsky, 1942, p. 699)
২৫৬.↑ Mukerjee, M. Explaining everything. Scientific American, 274, 88–94, 1996.
২৫৭.↑ W. Poundstone, Prisoner’s dilemma. New York: Anchor, 1992, p 16.
২৫৮.↑ H. C. Lehman, Age and achievement . Princeton: Princeton University Press, 1953.
২৫৯.↑ S. Cole, Age and scientific performance. American Journal of Sociology, 84, 958–977, 1979.
২৬০.↑ S. G. Levin, & , P. E. Stephan, Research productivity over the life cycle: Evidence for academic scientists. American Economic Review, 81, 114–132, 1991.
২৬১.↑ Satoshi Kanazawa, Why productivity fades with age: The crime–genius connection, Journal of Research in Personality 37, 257–272, 2003
২৬২.↑
গবেষক ডেভিড গ্যালেনসনের মতে পদার্থবিজ্ঞান...
২৬৩.↑ Alan S. Miller and Satoshi Kanazawa, Why Beautiful People Have More Daughters: From Dating, Shopping, and Praying to Going to War and Becoming a Billionaire– Two Evolutionary Psychologists Explain Why We Do What We Do, Perigee Trade; Reprint edition, 2008
২৬৪.↑ প্রদীপ দেব, প্রেমিক আইনস্টাইন, মুক্তমনা