একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বহু বছর ধরে মেয়েদের দমন করে রাখা হয়েছে সামাজিক ভাবেই। তাদের ভোটাধিকার, বাইরে কাজ করার অধিকার, নারী শিক্ষা সহ সকল অধিকারগুলো খুব সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা। মেয়েদেরকে পর্যাপ্ত সময়ও কিন্তু দিতে হবে উঠে আসতে হলে। তা না করে কেবল পরিসংখ্যান হাজির করে যদি সিদ্ধান্তে উপনীত হয় কেউ যে, নারীরা প্রযুক্তি বিজ্ঞান কিংবা গণিত নিয়ে পড়াশোনা করতে অক্ষম, তা ভুল উপসংহারের দিকে আমাদের নিয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে আমেরিকায় আফ্রিকান-আমেরিকান কমিউনিটির কথা বলা যেতে পারে। কালোদের খুব কমই শিক্ষায়তনে যায়, বা গেলেও বড় একটা অংশ ঝরে পড়ে।
চাকরি ক্ষেত্রেও যে খুব বেশি কালো চোখে পড়ে তা নয়। এখন যে কেউ উপসংহারে পৌছিয়ে যেতে পারে কালোদের বুদ্ধিসুদ্ধি কম তাই বোধ হয় সাদাদের সাথে পেরে ওঠে না। কিন্তু এই উপসংহারে পৌঁছোনো কি ঠিক হবে? মোটেই নয়। আসলে বহু বছর ধরে কালোরা আমেরিকায় নিগৃহীত, নিপীড়িত ছিল। তাদের দাস বানিয়ে রাখা হয়েছিল যুগের পর যুগ, তাচ্ছিল্য করে ‘নিগ্রো’ বা ‘নিগার’ হিসেবে অভিহিত করা হতো। এই ধারা থেকে বেরিয়ে এসে উঠে দাঁড়াতে হলে তাদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে, তারপরে না তুলনার প্রশ্ন।
বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর অধিকাংশই নৈতিকতা কেন্দ্রিক। সমালোচকদের কেউ কেউ বিবর্তন মনোবিজ্ঞানকে অভিযুক্ত করেছেন ‘প্রগতির অন্তরায়’ হিসেবে কেউ বা বাতিল করতে চেয়েছেন ‘অনৈতিক’ হিসেবে। অবশ্য বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা এর জবাব দিয়েছেন কী বনাম উচিত এর হেত্বাভাস (“Is” vs. “Ought” fallacy)-এর ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে। এ ব্যাপারগুলো নিয়ে এই বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। শেষ অধ্যায়ে এসেও এটি একইভাবে প্রাসঙ্গিক। প্রথমত বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের কাজ হচ্ছে কেন সমাজ বা মানব প্রকৃতির বড় একটা অংশ কোনো একটা নির্দিষ্ট ছকে আবদ্ধ থাকে সেটা ব্যাখ্যা করা, সমাজ কিরকম হওয়া ‘উচিত’ তা নয়[৩৩৬]।
অর্থাৎ মানুষ তার নীতি নৈতিকতা বা সমাজ টিকিয়ে রাখার জন্য কী করবে না করবে, তা নিয়ে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের কোনো মাথাব্যথা নেই। আর তাছাড়া কোনো কিছু ‘ন্যাচারাল’ বা প্রাকৃতিক মনে হলে সেটা সমাজেও আইন করে প্রয়োগ করতে হবে বলে যদি কেউ ভেবে থাকেন, সেটা কিন্তু ভুল হবে। এটা এক ধরনের হেত্বাভাস, এর নাম, ‘ন্যাচারিলিস্টিক ফ্যালাসি’। প্রকৃতিতে মারামারি কাটাকাটি আছে। সিংহের মতো এমন প্রাণীও প্রকৃতিতে আছে যারা নিজের বাচ্চাকে খেয়ে ফেলে। কাজেই এগুলো তাদের জন্য ‘প্রাকৃতিক’। কিন্তু তা বলে এই নয় সে সমস্ত ‘প্রাকৃতিক’ আইনগুলো মানবসমাজেও প্রয়োগ করতে হবে।
বিবর্তননীয় মনোবিদ্যা থেকে পাওয়া প্রকল্প থেকে আমরা বলতে পারি কেন পুরুষের মন প্রতিযোগিতামূলক হয়ে বেড়ে উঠেছে, কিংবা অনুমান করতে পারি যে পুরুষদের একাংশ কেন মেয়েদের চেয়ে স্বভাবে বহুগামী, কিন্তু তা কোনোভাবেই যুদ্ধ বা হানাহানিকে ন্যায্যতা প্রদান করে না কিংবা বহুগামিত্বকে আইন করে দিতে বলে না।
মানুষ নিজ প্রয়োজনেই যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন করে, সামাজিক ভাবে কিংবা ধর্মীয়ভাবে বিয়ে করে, বাচ্চা না নেওয়ার জন্য কিংবা কম নেওয়ার জন্য পরিবার-পরিকল্পনা করে, কিংবা একগামী সম্পর্কে আস্থাশীল হয় যেগুলোর অনেক কিছুই প্রকৃতিতে বিরল। ম্যাট রীডলি তার ‘রেড কুইন’ বইয়ে বলেন —
অনেক মানুষ নিজের খারাপ আচরণকে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের সাহায্যে ‘ন্যায্যতা’ দেয়ার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারে, আবার অনেকে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানকে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাইবেন এই ভেবে যে, এটি যৌনতার ক্ষেত্রে একধরনের অসাম্য সৃষ্টি করে স্থিতিশীলতাকে ‘অবদমন’ করতে চাচ্ছে। কিন্তু বিবর্তন মনোবিজ্ঞান এগুলোর কোনোটিই কিন্তু করে না। আসলে সে উচিত অনুচিৎ প্রশ্নে থেকে যায় বরাবরের মতোই নীরব। বিবর্তন মনোবিজ্ঞান এখানে মানবপ্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করতে এসেছে, কোনো নীতি নৈতিকতার বিহিত করতে নয়।
খুন করা ‘প্রাকৃতিক’ এই অর্থে যে, আমাদের খুব কাছের প্রাইমেটরাই নিয়মিতভাবে একে অপরের উপর আগ্রাসন চালিয়ে হত্যা করে থাকে, আপাতভাবে আমাদের পূর্বপুরুষেরাও এটি যথেষ্ট পরিমাণেই করেছিল। ঘৃণা, হত্যা, সহিংসতা, নিষ্ঠুরতা-এ ব্যাপারগুলো মোটাদাগে আমাদের প্রকৃতিরই অংশ, এবং প্রতিটি ব্যাপারকেই উপযুক্তভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব। প্রকৃতি চরিত্রগতভাবে একগুঁয়ে বা গোয়ারগোবিন্দ কিছু নয়, বরং অনেক নমনীয়।
আরেকটি বিষয়ও কিন্তু মনে রাখতে হবে এ প্রসঙ্গে, বিশেষত যারা প্রকৃতির ধুয়া তুলে মেয়েদের গৃহবন্দি করে রাখতে চান। মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশ পর্যালোচনা অফিসের চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করার ব্যাপারটা কিন্তু খুবই আধুনিক ঘটনা। এটা ঠিক পুরুষেরা একসময় হান্টার ছিল, আর মেয়েরা গ্যাদারার, কিন্তু তা বলে কি এটা বলা যাবে, মেয়েরা যেহেতু একসময় গ্যাদারার ছিল, সেহেতু এখন তারা অফিসে কাজ করতে পারবে না, বা কম্পিউটারের চাবি টিপতে পারবে না?
না তা কখনোই নয়। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বলে যে, ছেলেরা গড়পড়তা স্পেসিফিক বা স্পেশাল কাজের ক্ষেত্রে (সাধারণত) বেশি দক্ষ হয়, মেয়েরা সামগ্রিকভাবে মাল্টিটাস্কিং-এ। আমাদের আধুনিক সমাজ বহু কিছুর সংমিশ্রণ। এখানে সফল হতে ‘স্পেসিফিক’ দক্ষতা যেমন লাগে, তেমনি লাগে ‘মাল্টিটাস্কিং’ও। কাজেই কোনোভাবেই ‘ব্যাক টু দ্য কিচেন’ আর্গুমেন্ট গ্রহণযোগ্য নয়। আসলে নারী-অধিকারকে বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর খুব বড় কোনো যুক্তি নেই বলে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন[৩৩৭]।
সম্প্রতি গ্রিট ভ্যান্ডারম্যাসেন (Griet Vandermassen) নামের এক নারীবাদী লেখিকা সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন, ‘কারা চার্লস ডারউইনকে ভয় পাচ্ছে?’ শিরোনামে[৩৩৮]। বইটি নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। ভ্যান্ডারম্যাসেন মূলত তার একাডেমিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন একজন নারীবাদী বিশেষজ্ঞ হিসেবেই। চারিদিকে নারীবাদীদের দ্বারা বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের বিরূপ সমালোচনা লক্ষ্য করে তিনি বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের মূল গবেষণাপত্রগুলো একটু পরখ করে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন। সেই আগ্রহ থেকেই তার নিরন্তর গবেষণা। তার সেই গবেষণায় শেষ পর্যন্ত যা বেরিয়ে এল তা রীতিমতো বিস্ময়কর।
তিনি দেখলেন বহু নারীবাদীরা বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের মূল অনুসিদ্ধান্তগুলোকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিকৃত করে উপস্থাপন করেছেন। শুধু তাই নয়, তার গবেষণার উপসংহার হলো, নারীবাদীরা অনেক ক্ষেত্রে না বুঝে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের বিরোধিতা করলেও, বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের মধ্যে অনেক মণিমানিক্য লুকিয়ে আছে, আর এটি আসলে প্রকারন্তরে নারীবাদকে অবদমন নয়, বরং অনেক সমৃদ্ধ করতে পারে। জীববিজ্ঞানী হেলেনা ক্রনিন যেমন নিজেকে এখন ‘ডারউইনিয়ান ফেমিনিস্ট’ বলেন[৩৩৯], সেরকমভাবে অনেকেই ইদানীং নিজেকে পরিচিত করছেন।
গ্রিট ভ্যান্ডারম্যাসেনের কথা তো আগেই বলা হয়েছে, পাশাপাশি আছেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বারবারা স্মুট[৩৪০], ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাট্রিশিয়া গোয়াটি[৩৪১] কিংবা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা ব্ল্যাফার হার্ডি[৩৪২]। এরা সবাই খ্যাতনামা নারী বিজ্ঞানী, এবং এরা নির্ভয়ে ডারউইনীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নারীবাদকে বিশ্লেষণ করেন। ভবিষ্যতের পৃথিবীতে এ ধরনের নারীবাদীদের সংখ্যা অনেক বাড়বে বলে আশা করা যায়।
আবার উলটো ব্যাপারও আছে। নারী এবং পুরুষে যে দৈহিক, মানসিক, সামাজিক এবং সর্বোপরি জৈববৈজ্ঞানিক বিবর্তনীয় পটভূমিকায় পার্থক্য আছে সেটাই অনেক প্রগতিশীল নারীবাদীদের অস্বীকার করতে দেখেছি। তাদের অনেকে ভাবেন, পার্থক্য মানলেই বুঝি সাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। মুক্তমনা ব্লগে আমি লিখতে গিয়ে এমনও দেখেছি গড়পড়তা পুরুষের শক্তি যে নারীর চেয়ে বেশি সেটা মানতেও অনেকের অনীহা। মুক্তমনায় একবার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল ‘পুরুষশাসিত সমাজ ও নারীর অবস্থান’ নিয়ে। অনেকেই দেখলাম সন্দেহ পোষণ করেছেন যে, পুরুষের শক্তিমত্তা নারীর চেয়ে বেশি এটার সত্যতা নিয়ে।
জনৈক ব্লগ সদস্য তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এক লিকলিকে লোকের উদাহরণ হাজির করেছেন যার ছিল সুঠামদেহী বউ। তিনি ভেবেছিলেন এই উদাহরণ দিলে পুরুষের চেয়ে নারীর শক্তি বেশি এই অনুকল্প ভুল প্রমাণিত হয়। কিন্তু সত্যিই কি এই উদাহরণ “অন এভারেজ” পুরুষের শক্তি যে নারীর চেয়ে বেশি তার সত্যতা ক্ষুণ্ণ করে? না মোটেই করে না। “অন এভারেজ” ব্যাপারটার উপর বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা গুরুত্ব দেন। কারণ জনপুঞ্জে শক্তিমত্তার পরিমাপক মাপকাঠি ধরতে হলে গড়পড়তা বিষয়টিকেই বিবেচনা করতে হবে।
এক্সট্রিম বা ব্যতিক্রমীগুলোকে নয়। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। পুরুষেরা গড়পড়তা নারীর চেয়ে লম্বা। এটা কিন্তু প্রমাণিত সত্য। বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান হাজির করেই সেটা দেখানো যেতে পারে। যেমন, আর্জেন্টিনায় পুরুষদের গড়পড়তা উচ্চতা হচ্ছে ১.৭৪৫ মিটার (পাঁচ ফুট সাড়ে আট ইঞ্চি), সেখানে নারীদের ১.৬১০ মিটার (৫ ফুট সাড়ে তিন ইঞ্চি)। একইভাবে অস্ট্রেলিয়ায় পুরুষদের গড়পড়তা উচ্চতা ১.৭৪৮ মিটার (পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি), সেখানে মেয়েদের ১.৬৩৪ মিটার (পাঁচ ফুট সাড়ে চার ইঞ্চি)। ভারতে পুরুষদের উচ্চতা ১.৬৪৫ মিটার (পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি), আর মেয়েদের ১.৫২০ মিটার (পাঁচ ফুট)। বাংলাদেশেও প্রায় একই রকমেরই ফলাফল পাওয়া যাবে পরিসংখ্যান চালানো হলে।
এখন কেউ যদি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, পুরুষের উচ্চতা মেয়েদের চেয়ে বেশিতা অবৈজ্ঞানিক হবে না, যদিও ব্যতিক্রমী উদাহরণ খুঁজলেই পাওয়া যাবে। যে কেউ বলে বসতে পারেন, আরে ভাই উচ্চতা নিয়ে এত কথা বলছেন, আপনার উচ্চতার চেয়ে তো জার্মানি বা রাশিয়ার মেয়েদের উচ্চতা তো বেশি। হ্যাঁ কথা হয়তো সত্য। আমি জার্মানি গেলে অনেক মেয়েরই চেয়ে উচ্চতায় নীচে পড়ে থাকব, কিন্তু তাতে করে সার্বিকভাবে পুরুষদের উচ্চতা যে মেয়েদের উচ্চতার চেয়ে বেশি এই সত্যতাকে ভুল প্রমাণ করে না।
কারণ ওই যে বললাম, আমরা যখন বলি পুরুষদের উচ্চতা মেয়েদের চেয়ে বেশি তখন গড়পড়তার হিসেবের কথাই বলি। জার্মান মেয়েদের উচ্চতা বাঙালি ছেলেদের চেয়ে বেশি হতে পারে, কিন্তু সেই জার্মান মেয়েরা উচ্চতায় জার্মান ছেলেদের চেয়ে কমই হবেন গড়পড়তা হিসেবে। এই গড়পড়তার হিসেবের ব্যাপারটা শক্তিমত্তার ক্ষেত্রেও খাটে। একজন মুষ্টিযোদ্ধা লায়লা আলীর শক্তিমত্তা আমার চেয়ে বেশি হতেই পারে, কিন্তু তা বলে পুরুষের গড়পড়তা শক্তিমত্তা যে মেয়েদের চেয়ে বেশি তা ভুল প্রমাণ করে না।
ঠিক একই কারণে, আমরা বলতে পারি, ব্যতিক্রমী বিচ্ছিন্ন উদাহরণগুলোও বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের সামাজিক প্যাটার্নগুলোকেও ভুল প্রমাণিত করে না। টম ক্রুজের উচ্চতা তার সঙ্গী কেট হোমসের উচ্চতার চেয়ে ছোট হতে পারে কিন্তু তা বলে এটি ‘মেয়েরা সঙ্গী হিসেবে তাদের চেয়ে লম্বা ছেলে পছন্দ করে’এই প্যাটার্নকে ভুল প্রমাণ করে না, ঠিক একইভাবে এস্টন কুচার তার চেয়ে ১৬ বছরের চেয়ে বড় ডেমি মুরকে বিয়ে করলেও এটি ভুল প্রমাণিত করে না যে, ছেলেরা সঙ্গী খোঁজার সময় সাধারণত বিগতযৌবনা নয়, বরং উদ্ভিন্নযৌবনা তরুণীদের প্রতিই লালায়িত হন বেশি।
অঞ্জন দত্তের গানে বেলা বোস চাকরি-বাকরিহীন বেকার লোকের প্রেমে পড়তেই পারে, কিন্তু সার্বজনীনভাবে মেয়েরা যে সঙ্গী হিসেবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে অর্থবিত্তসম্পন্ন লোককে অধিকতর প্রীতি বা অনুগ্রহ দেখায় বলে বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে তা ভুল হয়ে যায় না। কাজেই সংস্কৃতির গুরুত্ব থাকলে গুরুত্ব থেকে যাচ্ছে ‘কালচারাল ইউনিভার্সাল’ বা বিশ্বসংস্কৃতিরও। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের উপসংহার এটাই। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন সংস্কৃতি ব্যাপারটা জৈবিক নিয়মেই বিবর্তনের উপজাত হিসেবে তৈরি হয়েছে, সেজন্য সাংস্কৃতিক ভিন্নতা নয়, সাংস্কৃতিক মিলগুলোই আসলে মুখ্য।
সব সংস্কৃতিতেই অযাচিত গর্ভধারণের ঝুট ঝামেলা পোহাতে হয় মূলত মেয়েদেরই, সেজন্য কোনো সংস্কৃতিতেই অভিভাবকেরা ছেলেদের সতীত্ব নিয়ে পেরেশান করেন না, যতটুকু করে থাকেন মেয়েদের সতীত্বের ব্যাপারে (একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, মেয়েদের সতীত্ব নিয়ে রক্ষণশীল সমাজে গড়ে উঠেছে নানা ট্যাবুও)। কোনো সংস্কৃতিতেই গড়পড়তা ছেলেরা তরুণী বাদ দিয়ে বিগতযৌবনা নারীর প্রতি বেশি যৌন আকর্ষণবোধ করে না, কিংবা কোনো সংস্কৃতিতেই কেউ প্রতিসম চেহারা ফেলে অপ্রতিসম চেহারাকে সুন্দর বলে মনে করে না। কোনো সংস্কৃতিতেই কর্মঠ পুরুষ বাদ দিয়ে অলস, কর্মবিমুখ, ফাঁকিবাজ, অথর্ব পুরুষের প্রতি মেয়েরা বেশি লালায়িত হয় না। এগুলো আমরা কম-বেশি সবাই জানি।

কিন্তু মুশকিল হলো নারী-পুরুষের পছন্দের সার্বজনীন বৈশিষ্ট্য কিংবা পার্থক্যগুলোকে বস্তুনিষ্ঠভাবে উল্লেখ করলেও অনেকেই ভাবেন সমাজ থেকে সাম্য বোধহয় বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে । শুরু হয় নরক গুলজার। সেজন্য এমনকি পশ্চিমা বিশ্বেও জেন্ডার, জাতি কিংবা গায়ের রঙ নিয়ে কোনো স্পর্শকাতর গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে হলে ‘পলিটিকাল কারেক্টনেস’ এর কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হয়। নয়ত নানা ধরনের বিতর্ক এবং ঝুট ঝামেলায় পড়তে হয়। বিবর্তন মনোবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীদেরও সাম্প্রতিক কালে নানা ধরনের অযাচিত বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
নারীবাদীরা এ ধরনের গবেষণার সমালোচনা করেছেন এই বলে যে এ সমস্ত বিজ্ঞানীরা নারী-পুরুষে সাম্য নষ্ট করে প্রথাগত ‘পুরুষতান্ত্রিক’ ধ্যানধারণা উস্কে দিতে চান। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা প্রত্যুত্তরে অবশ্য বলেছেন, রাজনৈতিক বা সামাজিক ক্ষেত্রে সমানাধিকার দেয়া আর জৈবিক পার্থক্যকে অস্বীকার করা এক কথা নয়। পার্থক্য মেনে নিয়েও সমানাধিকারের জন্য লড়াই করা যায়।
গণতান্ত্রিক বিশ্বে চাকুরি ক্ষেত্রে কিংবা শিক্ষায়তনে ধর্মবৈষম্য, লিঙ্গবৈষম্য প্রভৃতি থেকে মুক্তির চেষ্টা, কিংবা যারা পিছিয়ে পড়া তাদের জন্য কোটা কিংবা বাড়তি কিছু অধিকার দেয়া, পঙ্গু কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য একটু বেশি সুযোগ করে দেয়াএগুলো দৃষ্টান্ত আমরা চারপাশেই দেখেছি। এই ধরনের ব্যবস্থা করা হয় বিভিন্ন পার্থক্য মেনে নিয়েই, পার্থক্য উঠিয়ে দিয়ে নয়। স্টিভেন পিঙ্কার সম্প্রতি তার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন[৩৪৩] ‘রাজনৈতিক সাম্যের প্রতি আনুগত্য মানে যে সবাইকে ক্লোন হিসেবে চিন্তা করতে হবে তা কিন্তু নয়’।
বিবর্তন মনোবিদ্যার বিরুদ্ধে ইদানীং কালের সবচেয়ে বড় অভিযোগটি হলো, আমাদের আধুনিক করোটির ভিতরে আদিম প্রস্তরযুগের মস্তিষ্কের বাস বলে স্বতঃসিদ্ধভাবে ধরে নেওয়ার ব্যাপারটি যেটিকে ডেভিড বুলার বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের আরেকটি হেত্বাভাস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আমাদের মস্তিষ্ক যে দীর্ঘদিনের বিবর্তনের ফসল তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু মস্তিষ্ক তো স্ট্যাটিক কোনো অঙ্গ নয়, পরিবেশের সাথে সাথে এর আচরণ বদলাতে না পারার তো কোনো কারণ নেই।
অথচ বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা এর নমনীয়তা এবং গতিশীলতা অস্বীকার করে একে প্লেইস্টোসিন যুগের একটি স্ট্যাটিক অঙ্গ বলে মনে করেন, যা (তাদের মতে) প্লেইস্টোসিন যুগের পর একদমই বিবর্তিত হয়নি। এটার কারণ হিসেবে তারা বলেন, মানুষেরা বিবর্তনীয় স্কেলে প্রায় শতকরা ৯৯ ভাগ অংশ কাটিয়েছে প্লেইস্টোসিন যুগে (Pleistocene) শিকারি-সংগ্রাহক হিসেবে।
সে সময়ই আমাদের মস্তিষ্কের মূল মডিউলগুলো তৈরি হয়ে গিয়েছিল, বস্তুত শিকারি-সংগ্রাহক জীবনের সমস্যা সমাধানের সাথে খাপ খেয়ে। প্লেইস্টোসিন যুগ শেষ হয় আজ থেকে মোটামুটি ১০, ০০০ বছর আগে। এ সময় থেকেই শুরু হয় হলোসিন যুগ (Holocene)। হলোসিন যুগ ঐতিহাসিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বিবর্তনীয় প্রেক্ষাপটে গুরুত্বহীন। দশ হাজার বছর মানে মাত্র চার’শ জেনারেশন যা নতুন অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য তৈরি করার জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। কাজেই আমরা বিবর্তিত হলেও আমাদের মস্তিষ্ক রয়ে গেছে যেই আদিম প্রস্তর যুগে, অন্তত বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের গবেষণার সাথে জড়িত একাংশের তাই অভিমত।
সেজন্যই আমরা চর্বিজাতীয় খাবারের প্রতি লালায়িত হই, তেলাপোকা দেখে আঁতকে উঠি, কিংবা পর্নোগ্রাফি দেখে উত্তেজিত হই। কিন্তু এই স্বজ্ঞাত অনুমানটিকে ইদানীং প্রশ্নবিদ্ধ করছেন কিছু বিজ্ঞানী এবং দার্শিনিকেরা। তাদের কথা হচ্ছে, মস্তিষ্কের বিবর্তনকে যতটা আদিম এবং স্থির বলে ভাবা হচ্ছে, আসলে হয়তো সেরকমটি নয়। নিঃসন্দেহে মস্তিষ্কের কিছু মডিউলের সূচনা প্লেইস্টোসিন যুগে ঘটেছিল ঠিকই, কিন্তু সবকিছু কেবল সেখানেই আটকে আছে ভাবলে বিরাট ভুল হবে।
বাউলিং গ্রিন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী জ্যাক প্যাঙ্কসেপ (Jaak Panksepp) তার গবেষণায় দেখিয়েছেন মানুষের অন্তত সাতটি আবেগ সংক্রান্ত মডিউল প্লেইস্টোসিন যুগের অনেক পরে তৈরি হয়েছে । বিজ্ঞানীরা আরও দেখেছেন যে, মানুষের ডিএনএ-এর কাঠামো পঞ্চাশ হাজার বছর আগে তৈরি হয়ে গেলেও অনেক জিন আছে যা দশ হাজার বছরের বেশি হবে না, এমনকি কিছু জিন একেবারেই আনকোরা। আর তাছাড়া প্লেইস্টোসিন যুগের পর হলোসিন যুগকে ‘বিবর্তনীয় প্রেক্ষাপটে গুরুত্বহীন’ মনে করা হলেও এটি অস্বীকার করা যায় না যে, সে সময় মানবসমাজে বহু বিদ্যমান প্যাটার্নের পরিবর্তন ঘটেছিল।
জিওফ্রি মিলার তার ‘সঙ্গমী মন’ বইয়ে দেখিয়েছেন প্লেইসটোসিন যুগের পর মানব বিবর্তন থেমে যায়নি, বরং যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমে মানবসমাজে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন ঘটে এ সময়গুলোতে। সম্পত্তির উত্তরাধিকার, প্রাতিষ্ঠানিক বিয়ে, সামাজিক ক্রমাধিকারতন্ত্র, পিতৃতন্ত্র, গণিকাবৃত্তি, একগামী সম্পর্ক, বিবাহবিচ্ছেদ, নারীবাদ, গর্ভপাত, একাকী অভিভাবকত্ব (Single-parenthood), সমকামী বিয়ে এগুলো সবই কিন্তু প্লেইসটোসিন পরবর্তীকালের সামাজিক পরিবর্তন।
আমাদের মস্তিষ্ক যদি এতোটাই অনমনীয় এবং প্লেইস্টোসিন যুগের একটি স্থবির অঙ্গই হতো, তাহলে এত কম সময়ের মধ্যে এ পরিবর্তনগুলো আমরা কখনোই দেখতে পেতাম না। সেজন্যই জিওফ্রি মিলার, ডেভিড স্লোয়ান উইলসনসহ অনেক বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীই এখন মনে করেন, আমাদের আধুনিক করোটির ভিতরে আদিম প্রস্তরযুগের মস্তিষ্কের বাস বলে প্রচলিত অনুকল্পটি এখন পরিবর্তন করার সময় এসেছে। নিঃসন্দেহে বিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়াতেই আমাদের মস্তিষ্ক তৈরি হয়েছে, কিন্তু সেটা পাথরের মতো শক্ত কিছু ভাবলে ভুল হবে, বরং এটির আচরণ অনেকটাই নমনীয় প্লাস্টিকের মতোযে কোনো ধরনের তড়িৎ পরিবর্তন গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী অভিযোজিত হবার উপযোগী।
তবে এর বিরুদ্ধ কিছু যুক্তিও আছে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীদের ঝুলিতে। সেগুলো নিয়ে আর বিস্তৃত আলোচনায় আমি যাচ্ছি না এখানে। তবে আমার ধারণা, আগামীদিনের বিবর্তন মনোবিজ্ঞান সংক্রান্ত ‘কাটিং এজ’ গবেষণাগুলো এবং আনুষঙ্গিক বৈজ্ঞানিক তর্ক-বিতর্ক থেকে উঠে আসা সিদ্ধান্তগুলো আমাদেরকে সঠিক গন্তব্যে উপনীত হতে পথ দেখাবে।
তবে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে অনেকের মধ্যে যে ভীতি আছে তাকে একেবারে অমূলক বলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। ডারউইনবাদকে সামাজিক জীবনে প্রয়োগ করার প্রচেষ্টা অতীতে সুখকর হয়নি আমাদের জন্য। সামাজিক ডারউইনবাদ, ইউজিনিক্স প্রভৃতি অপবিজ্ঞানের চর্চা গণমানুষের মনে নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ভিক্টোরিয়ান যুগে সামাজিক ডারউইনবাদের (Social Darwinism) উদ্ভব ঘটান হার্বার্ট স্পেনসার নামের এক দার্শনিক, যা ডারউইন প্রদত্ত বিবর্তন তত্ত্ব থেকে একেবারেই আলাদা।
স্পেন্সার ডারউইনকথিত জীবনসংগ্রাম (Struggle for Life)-কে বিকৃত করে তিনি ‘যোগ্যতমের বিজয় (Survival of Fittest)[৩৪৪] শব্দগুচ্ছ সামাজিক জীবনে ব্যবহার করে বিবর্তনে একটি অপলাপমূলক ধারণার আমদানি করেন। স্পেনসারের দর্শনের মূল নির্যাসটি ছিল‘মাইট ইজ রাইট’। তিনি প্রচারণা চালান যে, গরীবদের উপর ধনীদের নিরন্তর শোষণ কিংবা শক্তিহীনদের উপর শক্তিমানদের দর্প এগুলো নিতান্তই প্রাকৃতিক ব্যাপার।
প্রাকৃতিকভাবে বিবর্তনের ফলশ্রুতিতেই এগুলো ঘটছে, তাই এগুলোর সামাজিক প্রয়োগও যৌক্তিক। এ ধরনের বিভ্রান্তকারী দর্শনের ফলশ্রুতিতেই পরবর্তীতে বিভিন্ন শাষকগোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে ঔপনিবেশিকতাবাদ, জাতিভেদ, বর্ণবৈষম্যকে বৈধতা দান করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন বিভিন্ন সময়। হিটলার তার নাৎসিবাদের সমর্থনে ইউজেনিক্স নাম দিয়ে একে ব্যবহার করেন। ১৯৩০ সালে আমেরিকার ২৪ টি রাষ্ট্রে ‘বন্ধ্যাকরণ আইন পাশ করা হয়, উদ্দেশ্য ছিল জনপুঞ্জে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত এবং ‘অনুপযুক্ত’ দুর্বল পিতামাতার জিনের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
অর্থাৎ সামাজিকভাবে ডারউইনবাদের প্রয়োগ-এর মাধ্যমে ‘যোগ্যতমের বিজয়’ পৃথিবীতে নানা ধরনের নৈরাজ্যজনক প্রতিক্রিয়াশীলতার জন্ম দিয়েছিল, আর বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছিল, যা থেকে অনেকে এখনও মুক্তি পায় নি। সেই সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কথা ভাবলে, বলতেই হবে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে তাদের যুক্তিগুলো ভ্রান্ত, কিন্তু তাদের ভীতিটাকে ঐতিহাসিকতার প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করতে হবে। তাদের ভীতির অতীত-বাস্তবতাটুকু স্বীকার করে নিয়েই আমাদের এগুতে হবে।
কিন্তু এ কথাও আমাদের বলে দিতে হবে যে, আজকের বিবর্তনবাদী মনোবিজ্ঞানীরা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই তাদের গবেষণা করছেন। তারা খুব ভালোভাবেই নাৎসি ইউজিনিক্স কিংবা স্পেন্সারের সামাজিক ডারউইনবাদ থেকে নিজেদের কাজকে আলাদা করতে পেরেছেন। নাৎসিরা ডারউইনবাদকে ভুলভাবে প্রয়োগ করে ইউজিনিক্স নামে অপবিজ্ঞানের চর্চা করেছিল বলেই ভবিষ্যতে ডারউইনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আর কখনোই কোনো কিছু বিশ্লেষণ করা যাবে নাএই দিব্যি কেউ দিয়ে যায়নি।
আসলে যে ব্যাপারটা বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলা হয়েছিল, এখানেও স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রয়োজন। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান জৈববৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমাজের প্যাটার্ন অনুসন্ধান করে, কিন্তু সামাজিক জীবনে এর প্রয়োগের ‘ঔচিত্য’নিয়ে কখনোই মাথা ঘামায় না। আজকের দিনের বিজ্ঞানীরা আগেকার সময়ের ‘সামাজিক ডারউইনিজম’ সংক্রান্ত জুজুর ভয় কাটিয়ে উঠে ডারউইনীয় বিবর্তনের আলোকে বিভিন্ন মডেল বা প্রতিরূপ নির্মাণ করেছেন। বিশেষত গত শেষ দশকে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে খুব ভালো কিছু কাজ হয়েছে।
প্রতি বছরই বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন গবেষণার আলোকে ফলাফল হাজির করেছেন এবং এর প্রেক্ষিতে শাখাটি সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হয়ে উঠছে। সমাজবিজ্ঞানের প্রচলিত মডেলে যেভাবে এতদিন সামাজিক বিজ্ঞান এবং প্রকৃত বিজ্ঞানকে কৃত্রিম একটা দেওয়াল দিয়ে আলাদা করে রাখা হয়েছিল, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নামে নতুন শাখার আগমন এই কৃত্রিম দেওয়ালকে সরিয়ে দিতে সফল হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা আজ বলছেন, ডারউইনীয় মডেলকে গোনায় ধরে কাজ শুরু করায় বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা হয়ে উঠেছে মনোবিজ্ঞানকে বিশ্লেষণের প্রথম বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান “Evolutionary Psychology is the first natural science of psychology”। অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক বিজ্ঞানের শাখাগুলোর চেয়ে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের সাহায্যে আরও বস্তুনিষ্ঠভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা করতে পেরেছেন গবেষকেরা। এটি নিঃসন্দেহএকটা সময় পর ‘বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান’ বলে আলাদা কিছু আর থকবে না। পুরো শাখাটিকে স্রেফ ‘মনোবিজ্ঞান’ নামেই অভিহিত করা হবে। সেই দিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়।
ভালোবাসা কারে কয়
৩৩৬.↑ Evolutionary psychology describes what human nature is like – it does not prescribe what humans should do
৩৩৭.↑ D.M. Buss & , D. P. Schmitt, Evolutionary Psychology and Feminism. Sex Roles, 64, 768-787, 2011.
৩৩৮.↑ G. Vandermassen, Who’s afraid of Charles Darwin? Debating feminism and evolutionary theory. Lanham: Rowman & Littlefield, 2005
৩৪০.↑ B. B. Smuts, The evolutionary origins of patriarchy. Human Nature, 6, 1–32, 1995
৩৪১.↑ P. A. Gowaty, Evolutionary biology and feminism. Human Nature, 3, 217–249, 1992
৩৪২.↑ S. Hrdy, The woman that never evolved. Cambridge: Harvard University Press, 1981.
৩৪৩.↑ ‘As many political writers have pointed out, commitment to political equality is not an empirical claim that people are clones’, Steven Pinker, Edge: A Biological Understanding of Human Nature