পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্ত নয় রক্ষণশীল জিহাদি (অবশ্যই পুরুষ) সৈনিকেরাও
২০১১ সালের মে মাস। আমি যখন বইয়ের এই অংশটুকু লিখছিলাম, তখন পাকিস্তানের এবোটাবাদে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে সবেমাত্র হত্যা করা হয়েছে। লাদেনকে হত্যার জন্য মার্কিন বাহিনী হঠাৎ করেই পাকিস্তানে অভিযান চালায়। লাদেন তখন ইসলামাবাদ থেকে ৩৫ মাইল দূরে এবোটাবাদ নামক একটি শহরের একটি তিন তলা বাড়িতে অবস্থান করছিল। হেলিকপ্টার দিয়ে পরিচালিত ওই অভিযানে লাদেন, লাদেনের একজন ছেলে এবং তার ২ জন সহযোগীর মৃত্যু হয়।
কিন্তু তার মৃত্যুর পর যে খবরটি মিডিয়ায় এল তা আরও চাঞ্চল্যকর। ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার পর ওসামার বাড়ি থেকে জব্দ কম্পিউটার থেকে পাওয়া গেল পর্নোগ্রাফির হরেক রকম কালেকশন। যে বিন লাদেন মেয়েদের সম্মান করে শরিয়া মোতাবেক চলাফেরা, হিজাব পরা, পর্দানশিন থাকাকে পশ্চিমা ধাঁচের অশালীন চলাফেরার চেয়ে অনেক উৎকৃষ্ট বলে মনে করতেন, সেই লাদেন পশ্চিমা মেয়েদের পর্নোগ্রাফি তার কম্পিউটারে সংগ্রহ করে রাখতেন, এবং সম্ভবত উৎসাহের সাথে সেগুলো তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতেন। এ খবরটি প্রকাশিত হয়েছে রয়টার, সিএনএন, ইয়াহু নিউজ, ফক্স নিউজ, এবিসি নিউজ, গার্ডিয়ান, হাফিংটন পোস্টসহ বহু নিউজ মিডিয়াতেই[১৭১]।
এর মানে হচ্ছে, মরহুম বিন লাদেন চমৎকার একটি ইসলামি জীবন অনুসরণ করেছেন। যেখানে তিনি তার বিপ্লবী আদর্শে বলিয়ান উম্মতদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্ররোচিত করেছেন, নাইন-ইলেভেনের মতো আরও ঘটনা পুনর্বার ঘটানোর ডাক দিয়েছেন, কাফির নাসারাদের সমূলে ধ্বংস করে ইসলামি সাম্যবাদের পতাকা তুলে ধরার হাঁকডাক পেরেছেন, সেখানে সেই বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা লাদেন ইসলামাবাদের মাত্র ৬০ মাইল দূরে সামরিক বাহিনীর অভয়ারণ্য বলে খ্যাত এবোটাবাদের একটি দূর্গতুল্য প্রাসাদে তিন স্ত্রী এবং এগারোজন সন্তানসন্ততি নিয়ে নিরাপদে জীবনযাপন করতেন, কাফির নাসারাদের বানানো কোকা-কোলা / পেপসি চুক চুক করে পান করতেন, শখ করে দূর্গের বাইরে মারিজুয়ানা বা গঞ্জিকার বাগান করতেন, এবং গভীর রাতে কম্পিউটারে বসে বসে পর্নোগ্রাফি দেখতেন। চমৎকার একজন ইসলামি নেতার মতোই কাজ কারবার।
যদিও হলফ করে বলার উপায় নেই যে, বিন লাদেনই সেই পর্নোগুলো দেখতেন, কিন্তু তারপরেও যখন তার পার্সোনাল কম্পিউটারেই রকমারি ধরনের ঢালাও পর্নের সংগ্রহ আবিস্কৃত হয়েছে, এবং সেই কম্পিউটারটি সুরক্ষিত ছিল কেবল বিন লাদেনের নিত্যদিনের ব্যবহারের জন্যই, তখন মন থেকে জোরালো একটা সন্দেহের তীর প্রক্ষিপ্ত হয় বৈকি! যাহা হাঁসের মতো প্যাঁক প্যাঁক করে আর যার হাঁসের মতো পালক আছে তাহা শেষ পর্যন্ত হাঁসই!
কেন পর্নোগ্রাফি বহু পুরুষদের উন্মাতাল করে?
পর্নোগ্রাফি দেখা কোনো সত্যিকার যৌনসঙ্গম নয়, এটা সবাই জানে। তারপরেও পর্নোভিডিও কেন পুরুষদের উত্তেজিত করে, কামার্ত করে তুলে? বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানে এর উত্তর পাওয়া গেছে। সাভানা অনুকল্পের কথা আমরা প্রথম অধ্যায়ে জেনেছি; যে কারণে আমরা তেল চর্বিযুক্ত খাবারের প্রতি লালায়িত হই, যে কারণে আমরা সাপ আর বিষধর কীটপতঙ্গ দেখলেই ভয় পাই, পর্নোগ্রাফির প্রতি বহু পুরুষদের আসক্তির কারণও মূলত একই জায়গায়।
সাভানা অনুকল্প বলছে, আমরা আধুনিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও আমাদের মস্তিষ্ক রয়ে গেছে প্রস্তর যুগে আমাদের করোটির ভিতর বাস করে আদিম প্রস্তর যুগের মস্তিষ্ক। কারণ মানব মস্তিষ্কের মূল মডিউলগুলো তৈরি হয়ে গিয়েছিল আমরা যখন আফ্রিকার সাভানা তৃণভুমিতে শিকারি সংগ্রাহক হিসেবে জীবন কাটাতাম। ভিডিও, সিনেমা, এগুলো আধুনিক কারিগরী উৎকর্ষময়তার অবদান, কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক আধুনিক জটিলতার মাঝে সময় অতিক্রম করলেও এর প্রকৃত বাস্তবতা থেকে অপার বাস্তবতাকে পৃথক করতে অনেক সময়ই থাকে অক্ষম।
সেজন্যই গভীর রাতে ভূতের বই পড়লে বা সিনেমা দেখলে আমাদের অনেকেরই গা ছম ছম করে। যে কারণে ভূতের সিনেমা দেখে অনেকে ভয় পায়, একই কারণে পর্নোগ্রাফি দেখেও অনেকে উত্তেজিত হয়। মেয়েদের নগ্ন ছবি কিংবা পর্নোভিডিও দেখলে পুরুষদের মস্তিষ্ক বুঝে উঠতে পারে না যে, এগুলো সত্যি নয় এগুলো আসলে কৃত্রিমভাবে তৈরি পণ্যমাত্র। এই অত্যাধুনিক পণ্যগুলোর কোনো অস্তিত্ব আমাদের পূর্বপুরুষদের সাভানা পরিবেশে ছিল না। তাদের কাছে সে সময় কোনো নগ্ন মেয়ের সাথে সঙ্গম কিংবা সঙ্গম করার জন্য উত্তেজক পরিস্থিতি তৈরি হওয়া সবসময়ই ছিল সে সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রকৃত বাস্তবতার নিয়ামক।
কাজেই আধুনিক মানুষ কম্পিউটারে বসে কোনো মেয়ের নগ্ন ছবি দেখলে কিংবা পর্নো ভিডিও দেখলে ‘প্রস্তর যুগে’ তৈরি পুরুষের মস্তিষ্ক অনুধাবন করতে পারে না যে উপকরণগুলো আসলে কৃত্রিম, বরং মস্তিষ্কে সেই সমস্ত সঙ্কেতই পাওয়া যায় যার মাধ্যমে মনে হয় সত্যি সত্যিই ওই মেয়েদের সাথে যৌনসঙ্গমের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ সময় পুরুষদের জননেন্দ্রিয় শক্ত হয়ে যায়, রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাদের দৃষ্টি ফোকাস হয়ে উঠে ভিডিওতে দেখা মেয়ের দেহের বিবিধ যৌনাঙ্গে।
এগুলোই ঠিক একইভাবে ঘটে সত্যিকার এবং সফল যৌনসঙ্গমের প্রাক্কালে। মস্তিষ্ক যদি বুঝতে পারত ভিডিওতে দেখা কিংবা কম্পিউটারে ব্রাউজ করা মেয়েগুলো ভার্চুয়াল, তাদের সাথে সত্যিকার সঙ্গম করা সম্ভব হবে না, তাহলে সে দৃশ্যগুলো দেখে পুরুষাঙ্গ কখনই সঙ্গমের জন্য উত্থিত হতে শুরু করত না। কিন্তু মানব মস্তিষ্ক সেটা অনুধাবন করতে পারে না বলেই পর্নোগ্রাফি দেখলে পুরুষেরা উত্তেজিত হয়ে উঠে।
সাভানা অনুকল্পের ব্যাপারটা একইভাবে নারী মস্তিষ্কের জন্যও প্রযোজ্য। নারীদের জন্য পর্নোগ্রাফির আবেদন ভিন্নভাবে তৈরি হয়েছে বিবর্তনের যাত্রাপথে। বিবর্তনীয় পথপরিক্রমায় পুরুষদের মতো ঘন ঘন সঙ্গী বদল মেয়েদের জন্য কোনো প্রজননগত সফলতা নিয়ে আসেনি। নারীরা যৌনসঙ্গী নির্বাচনের ব্যাপারে থাকে অপেক্ষাকৃত খুঁতখুঁতে, ফলে স্বভাবগতভাবেই নারীরা অসতর্ক সঙ্গমে (Casual Sex) পুরুষদের মতো প্রলুব্ধ হয় না। কারণ, এ ধরনের অসতর্ক সঙ্গমে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভকালীন ঝামেলা পোহাতে হয়েছে নারীকেই। গবেষণায় দেখা গেছে, গড়পড়তা একটি পুরুষ কোনো নারীর সাথে পরিচয়ের এক সপ্তাহের মাথায় যৌনসঙ্গমে ইচ্ছুক হয়, সেখানে একটি নারী যৌনসম্ভোগের জন্য অপেক্ষা করতে চায় ছয় মাস[১৭২]।
ঠিক যে কারণে পুরুষের প্রস্তর যুগের মস্তিষ্ক পর্নো ভিডিও দর্শনে উত্তেজিত হয়ে ওঠে, ঠিক একই কারণে মেয়েরা হয়ে পড়ে এ ব্যাপারে সতর্ক। মেয়েদের প্রস্তর যুগের মস্তিষ্ক ভুল সঙ্কেত পাঠাতে থাকে যে, এই পর্নোগ্রাফির ফলশ্রুতিতে তারা গর্ভবতী হয়ে যেতে পারে। তাই অধিকাংশ মেয়েই পর্নোগ্রাফির প্রতি নিস্পৃহ কিংবা নিরাসক্ত থাকে, এদের মধ্যে অনেকেই দারুণভাবে বীতশ্রদ্ধও। বিবর্তনীয় যাত্রাপথে নারী পুরুষের যৌনতার ভিন্ন স্ট্র্যাটিজির কারণেই পর্নোগ্রাফির প্রতি ভিন্ন আবেদন দেখা যায়।
বিন লাদেনের পর্নো দেখা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা ছিল না। মুক্তমনায় প্রকাশিত প্রবন্ধে আমি সেটা পরিষ্কার করে বলেছিলামও যে, আমি পর্নোবিরোধী কেউ না। কে নিশিরাত জেগে পর্নোগ্রাফি দেখছে আর না দেখছে সেটা আমার বিবেচ্য ছিল না কখনোই, এই লেখার মাধ্যমে পর্নোগ্রাফির বিলুপ্তির কোনো পিটিশনও হাজির করছি না আমি, যার ইচ্ছে হয় দেখুক, আমার কী বলার আছে! কিন্তু আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুটি হলো যে বিন লাদেন পাশ্চাত্যে অশ্লীলতা, পর্নোগ্রাফি, হোমোসেক্সুয়ালিটি আর পতিতাবৃত্তিসহ বহুকিছুতে সোচ্চার, সকল ধরনের ‘পশ্চিমা বেলেল্লাপনার’ বিরুদ্ধেই তার নিরঙ্কুশ জিহাদ, সেই নীতি নৈতিকতার চূড়ামণি বিধ্বংসী জিহাদি নেতা লাদেন বসে বসে পর্নোগ্রাফি দেখতেন ব্যাপারটা অভিনব না? সর্ষের মধ্যেই যখন ভুত থাকে, তখন আর কী বা বেশি বলার থাকে।
শুধু পর্নোগ্রাফি নয়, বিন লাদেনের দূর্গ থেকে এভেনার মতো বিভিন্ন ‘সেক্সুয়াল স্টিমুলেটর’ও পাওয়া গেছে। তার চেয়েও মজার ব্যাপার হলো, নিজে আয়েশ করে বাহারি ধরনের পর্নো দেখলেও তার মৃত্যুর পরে তার স্ত্রীরা যেন কোনোক্রমেই পুনর্বার বিয়ে না করতে পারেন এ নিয়ে একটি উইল করে গেছেন ‘মহানুভব লাদেন’। অবশ্য এগুলো কোনোটাই আমার কাছে খুব একটা বিস্ময়কর কিছু মনে হয়নি। কাগজে কলমে মৌলানারা তোতাপাখির মতো ‘ইসলামে পর্নোগ্রাফি হারাম’ জাতীয় বুলি আউরালেও কিংবা বোরখা আর হিজাবের জয়গান গাইলেও আরব বিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোই সবচেয়ে ‘সেক্স স্টার্ভড’ জাতি সেটা অনেক আগে থেকেই মুখে মুখে প্রচলিত ছিল।
হিন্দি নাচ গানের সেক্সুয়াল ভিডিওর জমজমাট ব্যবসা নাকি আরবেই। মধ্যপ্রাচ্যের ‘বেলি ড্যান্সিং’ কিংবা পাকিস্তানের মুজরার কথাও কমবেশি সবাই জানে। শুধু তাই নয়, সৌদি বাদশাহদের হারেম পোষা থেকে শুরু করে, দেশ বিদেশ থেকে সুন্দরী নারী ভাড়া করে নিয়ে এসে শেখদের পার্থিব লালসায় ব্যবহারের খবর প্রায়ই পত্রপত্রিকায় পাওয়া যায়[১৭৩]। আর এর মধ্যে পাওয়া গেছে আরও এককাঠি সরেস খবর। সম্প্রতি গুগলের বদৌলতে পর্নোওয়েবসাইট কারা বেশি পরিভ্রমণ করে এ সংক্রান্ত জরিপ চালানো হয়েছে, আর এ থেকে বেরিয়ে এসেছে এক মজাদার তথ্য।
২০০৬ সালে করা এ জরিপে পাওয়া ফলাফলে যে তথ্য উঠে এসেছে তা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর। সবচেয়ে বেশি পর্নসাইট ভ্রমণ করেন ইসলামি শরিয়া সমৃদ্ধ পাকিস্তানিরা[১৭৪]। শুধু ২০০৬ সালের নয়, ২০০৪ সালের পর থেকেই পাকিস্তানিরা এ ব্যাপারে শীর্ষে, এবং গত বছরের জরিপেও একই ফলাফল বেরিয়ে এসেছে[১৭৫]। জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানিরা কেবল হিউম্যান সেক্সেই আগ্রহী নয়, সেই সাথে ‘Horse Sex’, ‘Donkey Sex’, ‘Camel Sex’ প্রভৃতি সার্চেও তালিকার প্রথমে। শুধু পশুমেহনে পাকিদের আসক্তি থাকলেও না হয় কথা ছিল, সেই সাথে তারা আগ্রহী ‘Rape Sex’, ‘Child Sex’ এবং ‘Rape Video’ দর্শনেও (সাধু সাবধান)।
পর্নোগ্রাফির প্রতি এই ইসলামি রাষ্ট্রটির প্রবল আসক্তি দেখে অনেকেই বলছেন, এই দেশটাকে পাকিস্তান না ডেকে পর্নিস্তান ডাকলে কেমন হয়?[১৭৬] ঘটনা অবশ্য এখানেই শেষ নয়, আরও আছে২০০৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী যৌনতাসন্ধানী বুভুক্ষু প্রথম দশটি দেশের ছয়টিই ইসলামি দেশগুলোর দখলে। সেগুলো হচ্ছে: মিসর (দ্বিতীয়), ইরান (চতুর্থ), মরক্কো (পঞ্চম), সৌদি আরব (সপ্তম) এবং তুরস্ক (অষ্টম)। অমুসলিম দেশ চারটে হচ্ছে: ভিয়েতনাম (তৃতীয়), ভারত (ছয়), ফিলিপাইন (সপ্তম) এবং পোল্যান্ড (অষ্টম)। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, প্রথম আটটি দেশের ছ’টিই মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। দ্য ডেইলি বিস্টের কলামিস্ট আসরা নোমানী ‘Osama’s Dirty Mind : Bin Laden’s porn and Muslim hypocrisy on sex’ শীর্ষক প্রবন্ধে এজন্যই লিখেছেন[১৭৭] —
Some of the Muslim societies that are the most repressive toward women…also have some of the highest rates of pornography usage in the world.
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের টেরোরিজম বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিন ফেয়ার বলেছেন, ‘লাদেনের বাসায় পর্নো পাওয়ায় অবাক হইনি মোটেই। জিহাদিরা পর্নো ভালোবাসবে এটা তো জানা কথাই। সাধে কী তাদের জন্য পরকালে বাহাত্তুরটা হুর পরির লোভ দেখানো হয়েছে নাকি!’। রজার সিম্পসনের উদ্ধৃতি দিয়েই বলতে হয় — ‘The greater the repression the greater the revolution’. আমি মুক্তমনায় প্রকাশিত আমার ঐ প্রবন্ধে সেজন্যই কৌতুক করে বলেছিলাম, ‘আগামী বিশ্বের সেক্সুয়াল রিভলুশন সম্ভবত ইসলামি বিশ্বেই শুরু হবে, আর মরহুম বিন লাদেন হলেন সেই বিপ্লবের পথিকৃৎ। আমার তো তাই মনে হচ্ছে’।
অথচ পর্নোগ্রাফি নাকি হারাম ইসলামে[১৭৮]! এক মুখে পর্নোকে হারাম বলা হয়, অথচ ইসলামের জিহাদিদের নেতাই বসে বসে সোৎসাহে পর্নো দেখেন। হারামের কথাই যখন এল, কী হারাম আর কী হারাম নয় তা বলা সত্যই মুশকিল। অবশ্য সেক্স ম্যানিয়্যাক জীব কেবল ইসলামেই আছে তা মনে করলে বেজায় ভুল হবে। সব ধর্মেই সেটা কমে বেশি আছে বলাই বাহুল্য। ভারতে পরলোকগত সাইবাবার সেক্স স্ক্যান্ডাল পত্রপত্রিকায় এসেছে।
‘ভগবান রজনীশের’ যৌন উন্মত্ততার কথাও সর্বজনবিদিত ছিল। চার্চের বিভিন্ন পাদ্রী প্রায়ই শিশু যৌন নিপীড়ন এবং ব্যভিচারের কারণে নিত্যদিনই পত্রপত্রিকার শিরোনাম হন, তা তো আমরা এখনও হর-হামেশাই দেখছি। আসলে যেখানেই মাত্রাতিরিক্ত বাঁধার প্রাচীর তুলে দিয়ে যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে, সেখানেই তৈরি হয়েছে নানা ধরনের আসক্তি এবং আস্ফালন।
আমরা অবশ্য মনে করি যৌনতা বিবর্তনেরই ফসল। যৌনতাকে পাপ, ব্যভিচার, পশ্চিমের বেলাল্লাপনা বলে কৃত্রিম উপায়ে যে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, যায় না দমন করা কেবল হিজাব কিংবা বোরকার বুলি কপচিয়ে, সেটা মরহুম ওসামা বিন লাদেন লুকিয়ে লুকিয়ে পর্নো দেখে এবং অন্যান্য (অ)কাজ কুকাজের মাধ্যমে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের সত্যতাই পুনর্বার প্রমাণ করে দিলেন, নয় কি?
ভালোবাসা কারে কয়
১৭১.↑ মরহুম ওসামা বিন লাদেনের কম্পিউটারে পর্ণগ্রাফি – একটি জটিল দার্শনিক প্রশ্ন ↑
১৭২.↑ D. M. Buss , & D. P. Schmitt, Sexual strategies theory: An evolutionary perspective on human mating. Psychological Review, 100, 204-232, 1993
১৭৩.↑ ইরোটিক এবং পর্নোগ্রাফিক আরব কালচা নিয়ে অনেক গেবষণাও হেয়েছ, এপ্রসঙ্গে দেখুন, Adil Mustafa Ahmed, The Erotic and the Pornographic Arab Culture, British Journal of Aesthetics, Vol 34, No 3, July, 1994
১৭৪.↑ Pakistan most sex-starved, Daily Times, May 17, 2006 (এই সংবাদটি অনলাইনে খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে প্রাসঙ্গিক এই লিংকে↑ যাওয়া যেতে পারে।)
১৭৫.↑ ২০১০ সালের রিপোর্টের ফলাফল দেখুন এখােনে- Google ranks Pakistan No. 1 for pornographic
search terms; (এই সংবাদটি অনলাইনে খুঁজে পাওয়া যায় নি।)
১৭৬.↑ ফক্স নিউজে এ সংক্রান্ত একটি নিউজ হেডিং ছিল – No. 1 Nation in Sexy Web Searches? Call it
Pornistan; (এই সংবাদটি অনলাইনে খুঁজে পাওয়া যায় নি।)
১৭৭.↑ Asra Q. Nomani, Osama’s Dirty Mind; (এই সংবাদটি অনলাইনে খুঁজে পাওয়া যায় নি।)
১৭৮.↑ এ প্রসঙ্গে ইউটিউবে দেখুনক ডায়রেকটর ফর দা সেন্টার ফর ইসলািমক ডেভলপমেন্ট মৌলানা
জিয়াউল্লাহ খানের ফতোয়া – Islam forbids pornography।