ভালোবাসা কারে কয়

অভিজিৎ রায়

০২. স্বার্থপরতা থেকে সহযোগিতা

প্রকৃতিতে প্রতিযোগিতা আছে, আছে নিষ্ঠুরতা-এ কথা বোধ হয় আমরা সবাই জানি। কিন্তু কতটুকু নিষ্ঠুরতা? প্রকৃতি যে আসলে ঠিক কী পরিমাণ নিষ্ঠুর তা বোধ হয় অনেক সময় আমাদের চিন্তাতেও আসে না। হোরাস সম্প্রতি প্রাণিজগতে নিষ্ঠুরতার বেশ কিছু নমুনা মুক্তমনা ব্লগে হাজির করেছেন[২৭৮]। সেই লেখাটি থেকেই কিছু উদাহরণ হাজির করা যাক। মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থাতেই শিশু হাঙরেরা একজন আরেকজনকে আক্রমণ করে হত্যা করে এবং তাদের খেয়ে ফেলে যা তাদের পুষ্টি জোগায়।

শুরুতে ২০টির মতো শিশু হাঙর মায়ের গর্ভে বড় হতে শুরু করলেও ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে একটি মাত্র স্যান্ড শার্কের শিশু বেঁচে থাকে। মার কাছে রাখা কোলের শিশু অরক্ষিত হয়ে পড়লে পুরুষ সিফাকা লিমারেরা শিশু লিমারটিকে মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পেট দুভাগ করে মাটিতে ফেলে দেয়।

তারপর ধরুন পাখিদের মধ্যে বিদ্যমান নিষ্ঠুরতার উদাহরণগুলো। কোকিলের নিষ্ঠুরতার উদাহরণ তো আমাদের সবারই জানা। একে তো কোকিল প্রতারণা করে অন্য পাখির রাসায় ডিম পাড়ে। শুধু তাতেই সীমাবদ্ধ থাকলে না হয় কথা ছিল। কোকিল শিশু ডিম থেকে ফুটে বের হওয়ার সাথে সাথেই যে কাজটি করে তা হলো অন্য ডিমগুলোকে বাসা থেকে ফেলে দেয়া, এমনকি আশে পাশের ডিম ফুটে সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাকেও। শিশু কোকিলের পিঠে বিশেষ ধরনের একটি খাঁজের মতো থাকে যেটা দিয়ে সে ডিমগুলোকে পাখির বাসার বাইরে ফেলে দিতে সাহায্য করে।

বলা বাহুল্য, কোকিল শিশুরা এই কাজটি সহজাত প্রবৃত্তির বশেই করে থাকে। আবার, ব্লু ফুটেড বুবিস নামক পাখিরা খাদ্যস্বল্পতার সময় (যখন বাচ্চাদের ওজন স্বাভাবিকের চাইতে ২০ ভাগের বেশি কমে যায়), বড় বাচ্চাটি তখন অন্য সহোদরদের ঠোকর দিয়ে মেরে ফেলে অথবা বাসা থেকে বের করে দেয়। ফলশ্রুতিতে ছোট বাচ্চাটি খাদ্যের অভাবে কিংবা অন্য প্রাণীদের আক্রমণের শিকার হয়ে মারা যায়।

কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রেও নিষ্ঠুরতা প্রবল। মৌমাছিদের কথাই ধরা যাক। রানি মৌমাছি যখন লার্ভা থেকে পিউপাতে পরিণত হয়, তখন প্রথম মৌমাছিটা সাথে সাথেই সে অন্যান্য সকল প্রতিদ্বন্দী সহোদরাদের হুল ফুটিয়ে মেরে ফেলে। তার বোনদের একজনও তার হাত থেকে নিস্তার পায় না। তবে প্রকৃতির সম্ভবত সবচেয়ে চরম নিষ্ঠুরতার উদাহরণ পেয়েছিলাম যখন আমাদের মুক্তমনা সদস্য পৃথিবী একবার ইমেইল করে আমাকে ইকনিউমেন (Ichneumon) প্রজাতির একধরনের প্যারাসিটোয়েড বোলতার কথা জানিয়েছিলেন।

এরা একটি শুঁয়োপোকাকে হুল ফুটিয়ে প্যারালাইজড করে ফেলে এবং সেটার দেহে ডিম পাড়ে। অর্থাৎ, শিকারকে সরাসরি হত্যা না করে দৈহিকভাবে অবশ করে দিয়ে সেই শিকারের দেহের ভেতরে ডিম পাড়ে। এই ডিম ফুটে যে শূককীট (Larva) বের হয়, তা শিকারের দেহের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খেয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। স্ত্রী বোলতাগুলো তার শিকারের প্রত্যেকটি স্নায়ুগ্রন্থি সতর্কতার সাথে নষ্ট করে দেয় যাতে তাদের শিকার পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার এই নির্বিচারী উন্মাদনা দেখে সময় সময় বিচলিত হয়েছেন আস্তিক, নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, প্রকৃতিবাদী, মানবতাবাদী, সংশয়বাদী সকলেই। বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স এই ইকনিউমেন প্রজাতির বোলতার উদাহরণটিকে তার গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ বইয়ে উল্লেখ করেছেন। তিনি রবিন উইলিয়ামসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘এই প্যারাসিটোয়েড বোলতাগুলোর নিষ্ঠুরতা দেখলেই বোঝা যায় যে পরম করুণাময় ঈশ্বরের মতো কোনো পরিকল্পনাকারী দ্বারা এই মহাবিশ্ব তৈরি হলে তিনি একজন স্যাডিস্টিক বাস্টার্ড ছাড়া আর কিছু হবেন না’[২৭৯]

parasitic-wasps-full-width
চিত্র : ইকনিউমেন প্রজাতির বোলতা শুঁয়োপোকাকে হুল ফুটিয়ে দৈহিকভাবে অবশ করে দিয়ে সেই শিকারের দেহের ভেতরে ডিম পাড়ে, আর তার দেহকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে।

প্রকৃতির এই ঢালাও নিষ্ঠুরতা দেখে এক সময় বিচলিত হয়েছিলেন ডারউইনও। তিনি প্যারাসিটোয়েড বোলতাগুলোর বীভৎসতা দেখে পরম করুণাময় ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়েই সন্দিহান হয়ে পড়েন; তিনি মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছিলেন[২৮০]

আমি ভাবতেই পারি না, একজন পরম করুণাময় এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী কোনো ঈশ্বর এইভাবে ডিজাইন করে তার সৃষ্টি তৈরি করেছেন যে, ইকনিউমেনগুলোর খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য একটি জীবন্ত কিন্তু প্যারালাইজড শুঁয়োপোকার প্রয়োজন হয়।

ঈশ্বরের ‘ভুল ডিজাইনের’ কথা না হয় বাদ থাকুক । আমরা বরং বৈজ্ঞানিকভাবেই খুঁজে দেখার চেষ্টা করি কেন প্রকৃতিতে এই ঢালাও নিষ্ঠুরতা এমনিভাবে টিকে আছে! বলা বাহুল্য, এই প্রশ্নের একটি সর্বজনগ্রাহ্য বিজ্ঞানভিত্তিক উত্তর খুঁজে পেয়েছিলেন চার্লস ডারউইনই, ১৮৫৯ সালে প্রস্তাবিত বিবর্তন তত্ত্বের মাধ্যমে। ডারউইন বুঝেছিলেন যে, প্রকৃতিতে প্রতিটি জীবের বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা যত, সে পরিমাণ খাদ্যের যোগান প্রকৃতিতে কখনোই থাকে না।

শুধু খাদ্য নয়, আশ্রয়, বাসস্থান এমনকি প্রজনন সঙ্গীরও ঘাটতি থাকে। এ সব নিয়ে প্রতিনিয়ত অন্তঃপ্রজাতি (Intra-Species) এবং আন্তঃপ্রজাতি (Intra-Species) প্রতিযোগিতা চলে। জীবজগতে সবাইকেই বেঁচে থাকার, অধঃবংশ রেখে যাওয়ার অর্থাৎ এক কথায় টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম চলে। তিনি এর নাম দেন জীবনের জন্য সংগ্রাম বা জীবন-সংগ্রাম (Struggle of Existence)। ডারউইন বুঝতে পেরেছিলেন জীবন সংগ্রামের কারণেই প্রকৃতির জীবজগৎকে কিছু ক্ষেত্রে চরম নিষ্ঠুর হতে হয়েছে।

এখন ডারউইন প্রস্তাবিত বিবর্তনীয় পটভুমিকায় প্যারাসিটোয়েড বোলতার নিষ্ঠুরতার ব্যাপারটা আরেকবার চিন্তা করা যাক। উত্তর খুঁজে পাওয়া খুব একটা কঠিন হবে না। শুঁয়োপোকার জীবন্ত দেহ নিঃসন্দেহে শূককীটের জন্য খুব ভালো আশ্রয় এবং নিরাপদ খাদ্যের যোগান। কাজেই বিবর্তনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এমন কোনো জীব খুঁজে পেলে নিশ্চয় আমরা অবাক হব না যে কি না খাদ্যের চালান এবং আশ্রয় বজায় রাখার জন্য শুঁয়োপোকাকে নিস্তেজ করে তার দেহকে ব্যবহার করার সুযোগ নিতে চাইবে। প্যারাসিটোয়েড বোলতাগুলো সেই সুযোগেরই সফল সদ্ব্যবহারকারী মাত্র।

ডারউইইন যখন বিবর্তন তত্ত্ব প্রস্তাব করেছিলেন তখন তিনি জিনের ব্যাপার-স্যাপারগুলো মোটেই জানতেন না। জানবেনই বা কী করে? জেনেটিক্সের তখন জন্মই হয়নি। এমনকি মেন্ডেলের সমসাময়িক হওয়া সত্ত্বেও মেন্ডেলের জিন নিয়ে প্রাথমিক কাজগুলো তার দৃষ্টির অগোচরে থেকে গিয়েছিল। শুধু ডারউইনই নন, সে সময়কার সমসাময়িক কোনো বিজ্ঞানীই মেন্ডেলের কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন নি, তার কাজ মূলত হারিয়েই গিয়েছিল বিস্মৃতির অন্তরালে।

মেন্ডেলের মৃত্যুর ১৬ বছর পরে সেগুলো পুনরাবিষ্কৃত হয় ইউগো দ্য ফ্রিস, কার্ল করেন্স এবং এরিখ ফন শেরমাখ-সেসেনাগ প্রমুখ বিজ্ঞানীদের দ্বারা। তারপর থেকে বিশেষত আধুনিক বংশগতিবিদ্যার উন্মেষের পর থেকে আমরা জিন সম্বন্ধে সম্যক ধারণা অর্জন করেছি। চল্লিশের দশকে জনপুঞ্জ বংশগতিবিদ্যার অভ্যুদয়ের পর প্রাকৃতিক নির্বাচনের সাথে বংশগতির সম্মিলন ঘটে। জনপুঞ্জে জিন কীভাবে বংশাণুসৃত হয়, তা ব্যাখ্যা করেছিলেন গণিতবিদ জি এইচ হার্ডি এবং জার্মান চিকিৎসক ভিলহেল্ম ওয়েইনবার্গ। পরে পরিসংখ্যানবিদ ইউল দেখিয়েছিলেন যে ডারউইনের অবিচ্ছিন্ন পরিবৃত্তি যে মেন্ডেলবাদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, পরিসংখ্যান দিয়ে তা প্রমাণ করা যায়।

জীববিদ নিলসনের গবেষণায় ইউলের প্রকল্পের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক ইনফ্লুয়েনশিয়াল ছিল ১৯৩৭ সালে ডবজাবনস্কির ‘জেনেটিক্স এন্ড অরিজিন অব স্পিশিজ’ নামক বইটির প্রকাশ। এই বইয়ের মাধ্যমেই আসলে আধুনিক বংশগতিবিদ্যার সাথে ডারউইনবাদের সমন্বয় ঘটে। রঙ্গমঞ্চে আসে বিবর্তনের সংশ্লেষণী তত্ত্ব তথা আধুনিক বিবর্তনের তত্ত্ব, যা এখনও বিবর্তনের স্বীকৃত তত্ত্ব হিসেবে জীববিজ্ঞানের পরিমণ্ডলে রাজত্ব করে চলেছে।

সেই আধুনিক বিবর্তন তত্ত্ব আমাদের খুব ভালোভাবে দেখিয়েছে জিনগত স্তরে এক ধরনের স্বার্থপরতা কাজ করে[২৮১]। আমরা সবাই অবগত যে, মানুষসহ যে কোনো প্রাণীর মধ্যেই সন্তানদের প্রতি অপত্য স্নেহ প্রদর্শন কিংবা সন্তানদের রক্ষা করার জন্য মা বাবারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে। অর্থাৎ, নিজের দেহকে বিনষ্ট করে হলেও পরবর্তী জিনকে রক্ষা করে চলতে সচেষ্ট হয় জীবজগতের প্রায় সকল সদস্যরাই। কারণ, ‘পরবর্তী জিন’ রক্ষা না পেলে নিজের দেহ সুন্দর, কিংবা সুরক্ষিত হোক না কেন, বিবর্তনের দিক থেকে কোনো অভিযোজিত মূল্য নেই।

সেজন্যই নেকড়ে যখন আক্রমণ করে, গোত্রের ছোট বাচ্চাদের রক্ষা করার জন্য বুনো মোষেরা বাচ্চাদের চারিদিকে ঘিরে শিং উঁচিয়ে নেকড়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করে হলেও। এভাবেই জীব নিজেকে বিবর্তনের পথ ধরে এমনভাবে নিয়ে চলে যাতে তার জিন-বিস্তারে কিংবা ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষায় উদ্যোগী হয়, টিকে থাকার প্রয়োজনেই। আসলে যার সাথে সে বেশি জিন বিনিময় করবে, যত ঘনিষ্ঠতা বাড়াবে, তত বাড়বে নিজের জিন বিস্তারের সম্ভাবনা, সেজন্যই, জীব নির্বিশেষে সন্তানের প্রতি, পরিবারের প্রতি, নিকটাত্মীয়ের প্রতি এবং গোত্রের প্রতি একধরনের জৈবিক টান উপলব্ধি করে, এবং তাদেরকে রক্ষার চেষ্টা করে। কাজেই জিনের উদ্দেশ্য যদি কেউ বলেনকেবল স্বার্থপরভাবে প্রতিলিপি করা আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করাতাহলে সেটা অত্যুক্তি হবে না মোটেই। সেজন্যই স্বনামখ্যাত বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স তার ‘সেলফিশ জিন’ গ্রন্থে অনুপম কাব্যিক ভঙ্গিমায় বলেন[২৮২]

আমরা সবাই একেকটি টিকে থাকার যন্ত্র (survival machine)- অন্ধভাবে প্রোগ্রাম করা একটি নিয়ন্ত্রিত যান্ত্রিক বাহন মাত্রযার উদ্দেশ্য কেবল স্বার্থপরভাবে এক ধরনের জৈবঅণুকে সংরক্ষণ করা। … তারা আমার ভেতরে আছে, তারা রয়েছে আপনার ভেতরেও; তারাই আমাদের সৃষ্টি করেছে, আমাদের দেহ আর আমাদের মন; আর তাদের সংরক্ষণশীলতাই আমাদের অস্তিত্বের চূড়ান্ত মৌলিকত্ব। ওই অনুলিপিকারকেরা এক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। এখন তাদেরকে জিন বলে ডাকা হয়, আর আমরা হলাম তাদের উত্তরজীবীতার যন্ত্র।

কাজেই জৈব যন্ত্র যে স্বার্থপর তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। জিনগত স্তরে স্বার্থপরতা থাকার কারণেই অনেকটা ‘টিকে থাকার যন্ত্র’ হিসেবে কাজ করে যায়। কিন্তু বিস্ময়কর যে ব্যাপারটি গবেষণায় বেরিয়ে এল তা হলো জিনের এই স্বার্থপরতা থেকেই পরার্থিতার মতো এক ধরনের বিপরীতমুখি অভিব্যক্তির উদ্ভব ঘটতে পারে। ‘দ্য এ্যান্ট এন্ড দ্য পিকক’ গ্রন্থের লেখিকা জীববিজ্ঞানী হেলেনা ক্রনিন তার ‘দ্য বেটেল অব সেক্সেস রিভিসিটেড’ নামের প্রবন্ধে বলেন[২৮৩]

Among genes all is selfishness, every gene out for its own replication. But from conflict can come forth harmony; the very selfishness of genes can give rise to cooperation. For among the potential resources, that genes can exploit is the potential for cooperation with other genes. And if it pays to cooperate, natural selection will favor genes that do so.

স্বার্থপর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরার্থিতার উদ্ভবের ব্যাপারটি শিক্ষায়তনে গবেষণার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো তুলে ধরেন বিজ্ঞানী জর্জ উইলিয়ামস এবং উইলিয়াম হ্যামিলটন[২৮৪]। পরবর্তীতে ধারণাটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন রিচার্ড ডকিন্স তার উপরে উল্লিখিত ‘সেলফিশ জিন’ বইয়ের মাধ্যমে[২৮৫]। তারা দেখালেন, স্বার্থপর জিন যেমন আত্মত্যাগ কিংবা পরার্থিতা তৈরি করে, ঠিক তেমনি আবার প্রতিযোগিতামূলক জীবন সংগ্রাম থেকেই জীবজগতে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের পারস্পরিক সহযোগিতা, মিথোজীবীতা কিংবা সহ-বিবর্তন। টিকে থাকার প্রয়োজনেই কিন্তু এগুলো ঘটে।

clown-fish
চিত্র : ক্লাউন মাছ আর এনিমোনের সহবিবর্তন গড়ে উঠে তাদের নিজেদের স্বার্থের কারণেই।

এমনি একটি চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে ‘কালারফুল ক্লাউন’ মাছের সাথে এনিমোনের সহবিবর্তন। এ ধরনের মাছ তার গাঢ় রঙের কারণে সহজেই অন্যের শিকারে পরিণত হতে পারে, আত্মরক্ষার জন্য গাঢ় রঙের সামুদ্রিক এনিমোনের শুঁড়ের ভিতর প্রায়শই আত্মগোপন করে। এভাবে ক্লাউন মাছগুলো শিকারি মাছের দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে সমর্থ হয়। আবার অন্যদিকে এনিমোনগুলোও ক্লাউন মাছের কারণে উপকৃত হয়। কারণ ক্লাউন মাছগুলো এনিমোনভোগী ছোট মাছকে তাড়িয়ে দেয়।

এনিমোন এবং ক্লাউন মাছের সহবিবর্তনের ফলে উপকৃত হচ্ছে দুই প্রজাতিই। নিঃস্বার্থ ভাবে একে অপরের সেবা করার জন্য তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠেনি, বরং বন্ধুর প্রকৃতিতে আত্মরক্ষা আর টিকে থাকার প্রয়োজনেই তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক। এ ধরনের অনেক সম্পর্কই প্রকৃতিতে আছে। হামিং বার্ডের সাথে অর্নিথোপথিলাস ফুলের সহবিবর্তন, এংরাকোয়িড অর্কিডের সাথে আফ্রিকান মথের সহবিবর্তন এগুলোর প্রত্যক্ষ উদাহরণ।

অত্যন্ত স্বার্থপর কারণেই তাদের মধ্যে সহমর্মিতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে; আর সেই নিতান্ত স্বার্থপর কারণটি হলোসফলভাবে টিকে থাকার ইচ্ছে। স্বার্থপরতার কারণেই কীভাবে সহযোগিতার গুণাবলি প্রকৃতিতে বেড়ে উঠে সেটি বিশ্লেষণ করতে গিয়েই বিজ্ঞান লেখক ম্যাট রিডলী তার ‘নৈতিকতার উৎস’ বইয়ে উল্লেখ করেছেনউই কোঅপারেট ইন অর্ডার টু কম্পিট বেটার। ব্যাপারটা খুব নির্জলাভাবে সত্য।

আমরা ছোটবেলায় কামিনী রায়ের অনেক পরার্থিতামূলক কবিতা পড়েছি —

পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি, এ জীবন মন সকলই দাও
তার মতো সুখ কোথাও কি আছে? আপনার কথা ভুলিয়া যাও। …

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ‘আপনার কথা ভুলিয়া পরের কারণে স্বার্থ বিলিয়ে’ দেয়ার মতো করে প্রকৃতিতে জীবজগৎ কাজ করে না। ডারউইন অনেক আগেই ধারণা করেছিলেন যে, তার বিবর্তন তত্ত্ব সত্যি হলে, প্রকৃতিতে এমন কোনো জীব পাওয়া যাবে না যে শুধু নিঃস্বার্থভাবে অন্য প্রজাতির সেবা করার জন্য বেঁচে থাকে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়মেই সে বিলুপ্ত হয়ে যেতে বাধ্য। ডারউইন তার ‘অরিজিন অব স্পিশিজ’ বইতে তার পাঠকদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এ ধরনের একটা প্রজাতি খুঁজে বের করার জন্য, এবং স্বাভাবিক কারণেই আজ পর্যন্ত কেউ সে চ্যালেঞ্জের উত্তর দিতে পারেনি।

এই সহজ ব্যাপারটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। আমাদের দেহের ভিতরেই অসংখ্য উপকারী ব্যকটেরিয়া বাস করে, এগুলো আমাদের দেহে থাকার ফলে আমরা যেমনতাদের দিয়ে উপকৃত হচ্ছি, তেমনি আবার ব্যাকটেরিয়াগুলোও বেঁচে থাকার নানা রসদ খুঁজে পাচ্ছে আমাদের দেহে। এমন কিন্তু নয় যে, আমরা ব্যাকটেরিয়াগুলোকে সেবা করার পশরা সাজিয়ে বসে আছি তাদের উপকার করার জন্য।

কিংবা উল্টোভাবে ব্যাক্টেরিয়াগুলো সাহায্যের দোকান খুলে বসে আছে মানবসমাজকে নিঃস্বার্থ সেবা দেয়ার লক্ষ্যে। বরং দুইপক্ষের স্বার্থসিদ্ধি হচ্ছে বলেই এই সহযোগিতার সম্পর্কগুলো টিকে রয়েছে। অর্থাৎ, পরার্থিতা কিংবা সহযোগিতা যাই বলি না কেন এর মূলে কিন্তু রয়ে যাচ্ছে সেই মোটা দাগে লোভাতুর স্বার্থপরতাই। বিজ্ঞানী জর্জ উইলিয়ামস সেজন্য খুব চাঁছাছোলাভাবেই বলেছেন[২৮৬]

যখন একজন জীববিজ্ঞানী দেখেন কোনো প্রাণী অন্য কারো উপকার করে চলেছে, তিনি সহজাত নিয়মেই ধরে নেন যে, প্রাণীটিকে উপকারের নামে আসলে তাকে কাজে লাগানো হচ্ছে, কিংবা এর পেছনে রয়েছে কোনো প্রচ্ছন্ন স্বার্থপরতা।

একই ব্যাপার চোখে পড়েছিল বিজ্ঞানী হ্যামিলটানেরও। তিনি পিঁপড়ে, মৌমাছি সহ বিভিন্ন সামাজিক কীট-পতঙ্গের কাজ এবং আচার ব্যবহার বহুদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে আসেন যে, তাদের পরার্থিতামূলক কাজগুলো আসলে ঢালাওভাবে পরার্থিতামূলক নয়, বরং তাদের বিভিন্ন কাজের পেছনে আসল অভিসন্ধি হচ্ছে খুব স্বার্থপরভাবে জিনের রক্ষা আর বহুপ্রতিলিপি রেখে যাওয়ার পথ সুগম করা। পিঁপড়েরা একসাথে খাদ্যের অন্বেষণ করে, সঙ্ঘবদ্ধভাবে বিরাট কলোনি গড়ে তুলে।

মৌমাছিরাও তাই। তাদের মধ্যে আছে এমনকি বন্ধ্যা সৈন্যের (Sterile Worker) উপস্থিতিও, যারা পুরো জীবন ব্যয় করে দেয় রানির সেবা যত্নে, নয়তো গোত্রকে রক্ষা করে শত্রুর আক্রমণ থেকে। জৈবিকভাবে চিন্তা করলে এরা তো পরার্থিতার চূড়ান্ত! কারণ নপুংসক এই বন্ধ্যা সৈন্যদের কখনো কোনো সন্তান হয় না। তারা কেবল খোঁজা প্রহরীর মতো হেরেম পাহারা দেয়! সাদা চোখে দেখলে জৈবিকভাবে এদের নিজের জিন রক্ষার তাগিদ একেবারে শূন্য। তাহলে ? কলুর বলদের মতো বেগার খাটা এই সৈন্যরা বিদ্রোহ করছে না কেন?

এই ধাঁধাই সমাধান করলেন ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী উইলিয়াম ডোনাল্ড হ্যামিলটন। তিনি তার গবেষণায় দেখালেন যে মৌমাছি কিংবা পিঁপড়েদের সমাজ খুব জটিল। সেখানে রানি মৌমাছির সাথে কর্মী মৌমাছির (যার অধিকাংশই নিজের সন্তান) সম্পর্কের এক জটিল টানাপোড়েন চলে প্রতিনিয়ত। দেখা গেছে, রানি মৌমাছি দিনে প্রায় আড়াই হাজার ডিম পাড়ে। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই কলোনিতে ডিমের সংখ্যা তিন লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। সেই ডিমের কিছু অংশকে রানি নিষেক ঘটায় পুরুষ মৌমাছির শুক্রাণু দিয়ে, আবার বহুসংখ্যক ডিম নিষেক ছাড়াই পড়ে থাকে। নিষেক ঘটানো ডিমগুলো থেকে জন্ম হয় কেবল নারী মৌমাছির।

এরা ডিপ্লয়েড। এদের ক্রোমজোমে থাকে যুগল বন্ধন। এই যুগল সেটটির অর্ধেক আসে বাবার কাছ থেকে আর অর্ধেক মায়ের। কিন্তু অন্যদিকে পুরুষ মৌমাছিরা হ্যাপ্লয়েড, তাদের জন্ম হয় অনিষিক্ত ডিম থেকে জন্ম । এদের কেবল একটিই ক্রোমোজম থাকে, যা সরাসরি তাদের মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। ফলে কর্মী নারী মৌমাছিরা তাদের বোনদের সাথে এমনকি শতকরা ৭৫ ভাগ সদৃশ জিনের অংশ বিনিময় করে, যেখানে তার মার সাথে কিংবা তার নিজের সন্তানের সাথে জিনের সাদৃশ্য তাকে শতকরা ৫০ ভাগ, এবং তার ভাইদের সাথে মাত্র ২৫ ভাগ।

অর্থাৎ, একটি কর্মী মৌমাছি যদি নিজের বংশ রক্ষার চেয়ে যদি তার সহোদর বোনদের প্রজননে পরোক্ষভাবে সুবিধা করে দেয়, কিংবা তার রানি মৌমাছির সন্তানদের রক্ষা করায় সচেষ্ট হয়, তবেই তার অধিকতর জেনেটিক সাফল্য থাকবে। হিসেব কষলে কিন্তু তাই পাওয়া যাচ্ছে। পিঁপড়া, মৌমাছি কিংবা উইপোকা যাদের এ ধরনের জটিল সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে, তাদের সবার মধ্যেই এ ধরনের জটিল সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু এই সহযোগিতা ‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়ে বলি’ টাইপের সহযোগিতা নয়, বরং এই সহযোগিতার মূলে থাকে সেই একই স্বার্থপরতাই জিনের আত্মপরায়ণতা। সেজন্যই ম্যাট রিডলী তার ‘দ্য অরিজিন অব ভার্চু’ বইয়ে বলেন[২৮৭]

In the world of biology, an ant slaves away celibate on behalf of its sisters not out of goodness of its little heart, but out of the selfishness of genes.

চিত্র : পিঁপড়েদের মধ্যে বিদ্যমান জটিল জেনেটিক সম্পর্কের কারণেই তাদের মধ্যে এক ধরনের সামাজিক সহযোগিতা গড়ে উঠে। বিজ্ঞানী হ্যামিলটন দেখিয়েছেন এই সহযোগিতার মূলে থাকে জিনকেন্দ্রিক স্বার্থপরতাই।
চিত্র : পিঁপড়েদের মধ্যে বিদ্যমান জটিল জেনেটিক সম্পর্কের কারণেই তাদের মধ্যে এক ধরনের সামাজিক সহযোগিতা গড়ে উঠে। বিজ্ঞানী হ্যামিলটন দেখিয়েছেন এই সহযোগিতার মূলে থাকে জিনকেন্দ্রিক স্বার্থপরতাই।

কীভাবে পরার্থিতামূলক অভিব্যক্তি গড়ে উঠে তা নির্ণয়ের জন্য হ্যামিলটন একটি নিয়ম প্রস্তাব করেন, যা জীববিজ্ঞানে এখন হ্যামিলটনের সূত্র হিসেবে পরিচিত। সূত্রটির গাণিতিক সংজ্ঞায়ন এরকম[২৮৮]

ফিগার

যেখানে,

c হচ্ছে পরার্থিতার ব্যয় (cost of altruism)
b হচ্ছে গ্রাহকের পাওয়া উপযোগিতা (benefit received by recipient)
r হচ্ছে সম্পর্কের গুণাঙ্ক (coefficient of relationship)

অর্থাৎ, সোজা বাংলায়, যখন কোনো প্রজাতির মধ্যে সহযোগিতার উপযোগিতা তার ব্যয়কে অতিক্রম করে যায় তখনই পরার্থিতা উদ্ভূত হবে। হ্যামিলটনের এই নীতিটিকেই বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী মায়নার্ড স্মিথ নামকরণ করেছিলেন স্বজাতি নির্বাচন (Kin Selection) হিসেবে। স্বজাতি নির্বাচনের মোদ্দা কথা হলো, জিনের নৈকট্য (অর্থাৎ হ্যামিলটনের সূত্রে r-এর মান) যত বেশি হবে, তত বেশি হবে পরার্থিতাসূচক মনোভাব।

সেজন্যই দেখা যায় সবাই নিজের সন্তান এবং পরিবারের প্রতি সবার আগে পরার্থিতা প্রদর্শন করে। পরিবারের কেউ বিপদে পড়লে সবার আগে চিন্তিত হয় সবচেয়ে কাছের জেনেটিক সদস্যরাই, তারপরে একটু দূরের আত্মীয়-স্বজন, পরে পাড়া-পড়শী, বন্ধুবান্ধব। সেজন্যই সন্তানের প্রতি বাবা মার আত্মত্যাগের ব্যাপারটি সব সংস্কৃতিতেই পাওয়া যায়, আসলে যা কি না জীববিজ্ঞানীদের চোখে স্বজাতি নির্বাচনের মাধ্যমে জিনপুল রক্ষার প্রয়াস। একইভাবে ছোট ভাইকে ছিনতাইকারীর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে বড় ভাইয়ের আত্মত্যাগের নানা ঘটনাও বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকাগুলোতে পাওয়া যায়।

‘স্বজাতি নির্বাচন’ প্রকৃতিতে খুব চমৎকারভাবে কাজ করে বলেই আমরা দেখি কোনো হিংস্র শিকারি পাখি যখন কোনো ছোট পাখিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করে, তখন অনেক সময় দেখা যায় যে, গোত্রের অন্য পাখি চিৎকার করে ডেকে উঠে তাকে সতর্ক করে দেয়। এর ফলশ্রুতিতে সেই শিকারি পাখি আর তার আদি লক্ষ্যকে তাড়া না করে ওই চিৎকার করা পাখিটিকে আক্রমণ শুরু করে। এই ধরনের পরার্থিতা এবং আত্মত্যাগ কিন্তু প্রকৃতিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই দেখা যায়।

এই ব্যাপারগুলো স্বজাতি নির্বাচনের মাধ্যমেই উদ্ভূত হয়েছে। হ্যামিলটন বা মায়নার্ড স্মিথের গবেষণার অনেক আগে থেকেই জীববিজ্ঞানীরা ‘কমন সেন্স’ হিসেবে জানতেন। যেমন ১৯৩০ সালে একবার বিজ্ঞানী জে বি এস হালডেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি তার ভাইয়ের জন্য জীবন বিপণ্ণ করবেন কি না। তিনি রসিকতা করে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘না একটিমাত্র ভাইয়ের জন্য নয়; কিন্তু দুটি ভাই কিংবা আটটি কাজিনের জন্য হলে আমি আছি’। বলা বাহুল্য, হালডেন মনে মনে স্বজাতির নৈকট্য হিসেব করেই তার এই বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন।

এবারে আরেকটু গভীরে ঢুকি। হ্যামিলটন-স্মিথের প্রস্তাবিত স্বজাতি নির্বাচনের ব্যাপারটা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু আমাদের ব্যাখ্যা করতে হবে স্বজাতি নির্বাচন ব্যাপারটা সার্বিকভাবে জীবজগতে কাজ করে কীভাবে। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, স্বজাতি নির্বাচনের মাধ্যমে পরার্থিতা এমনি-এমনি কোথাও কাজ করে না, এটি মূলত কাজ করে হয় বিবর্তনের ক্রীড়াতত্ত্ব বা গেম থিওরির মাধ্যমে ঘটা স্থিতিশীল কৌশল রাজত্ব করার কারণে।

ক্রীড়াতত্ত্ব বা গেম থিওরির যাত্রা শুরু হয়েছিল হাঙ্গেরির প্রতিভাধর গণিতবিদ জন ফন নিউম্যানের হাত দিয়ে ১৯৪৪ সালের দিকে। পরে ১৯৫১ সালের দিকে আরও শক্ত গাঁথুনি দেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদ জন ন্যাশ[২৮৯], তৈরি করেন ন্যাশ স্থিতাবস্থার মডেল (Nash Equilibrium)। প্রথমদিকে অর্থনীতির ভিন্ন স্ট্র্যাটিজির ব্যাখ্যায় গেম তত্ত্ব ব্যবহৃত হলেও পরে দেখা গেল জীববিজ্ঞানেও এটি সমানভাবে কার্যকরী। জন মায়নার্ড স্মিথসহ অন্যান্য বিজ্ঞানীই গেম তত্ত্বের সাহায্যে দেখিয়েছেন যে, শুধু প্রতিযোগিতা কিংবা স্বার্থপরতা দেখালে জিনপুলকে সর্বোচ্চ দক্ষতায় বাঁচিয়ে রাখা যায় না, সাথে আনতে হয় সহযোগিতা এবং পরার্থিতার কৌশলও।

কিন্তু কথা হচ্ছে, কতকগুলো ভারি ভারি কথা বলে দিলেই তো হলো না। কীভাবে বিবর্তনের গেম থিওরি জীবজগতের উপর কাজ করে সেটা পরিষ্কারভাবে বোঝা চাই। এটি বুঝতে হলে আমাদের সবার প্রথমে তাকাতে হবে জেলখানায় বন্দি আসামিদের উভয়-সংকটের দিকে।


 ভালোবাসা কারে কয়


২৭৮.↑  হোরাস, পরিকল্পিত ডিজাইনঃ God Must Be Crazy, মুক্তমনা ↑

২৭৯.↑  Richard Dawkins, The Greatest Show on Earth: The Evidence for Evolution, Free Press, 2009; p 370.

২৮০.↑  Darwin’s letter to Asa Gray, 22 Mary 1860 ; Quoted in Richard Dawkins, The Greatest Show on Earth, পূর্বোক্ত, p 370.

২৮১.↑  Richard Dawkins wrote a very popular book called the Selfish Gene that explained

২৮২.↑  Richard Dawkins, The Selfish Gene: 30th Anniversary Edition, Oxford University Press, USA; 3 edition, 2006; অনুবাদের কিয়দাংশ – অনীক আন্দালিব, সেলিফশ জিন, মুক্তমনা ↑

২৮৩.↑  Helena Cronin, The Ant and the Peacock: Altruism and Sexual Selection from Darwin to Today, Cambridge University Press, 1993

২৮৪.↑  Hamilton W.D., The genetical evolution of social behaviour I and II. — Journal of Theoretical Biology 7: 1-16 and 17-52, 1964.

২৮৫.↑  Richard dawkins, The Selfish Gene. Oxford: Oxford University Press. 1976.

২৮৬.↑  Paradis, J. and G.C. Williams, T.H. Huxley’s Evolution and Ethics : with New Essays on its Victorian and Sociobiological Context. Princeton University Press, Princeton, N.J, 1989.

২৮৭.↑  Matt Ridley, The Origins of Virtue: Human Instincts and the Evolution of Cooperation, Penguin; 1998

২৮৮.↑  W. D. Hamilton, “The Genetical Evolution of Social Behavior”. Journal of Theoretical Biology 7 (1), 1964

২৮৯.↑ জনপ্রিয় বিউউিটফুল মাইন্ড ↑ সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্র – স্কিজোফ্রেনিয়া রোগী এবং পরবর্তীতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক

0 0 votes
Post Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
মন্তব্য করুনx
()
x
Scroll to Top
Scroll to Top
১ম অধ্যায়

২য় অধ্যায়

৩য় অধ্যায়

৪র্থ অধ্যায়

৫ম অধ্যায়

৬ষ্ঠ অধ্যায়

৭ম অধ্যায়

৮ম অধ্যায়