মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে

অভিজিৎ রায় ও ফরিদ আহমেদ

০২. বিজ্ঞান নাকি অপবিজ্ঞান?

পোস্ট টপিক

অনেক বিজ্ঞানীই আছেন যারা মনে করেন যে, সেটি প্রকৃত বিজ্ঞান নয় বরং অপবিজ্ঞান বা ছদ্মবিজ্ঞান (Pseudoscience)। তাদের এহেন ধারণার প্রধান ভিত্তি হচ্ছে ভুল প্রমাণেয়তা (Falsifiability) যার মাধ্যমে কার্ল পপার (Karl Popper) বিজ্ঞান এবং অপ-বিজ্ঞানের পার্থক্যের মানদন্ড করেছেন অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে। পপারের মতে, যুগে যুগে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের গ্রহণযােগ্যতা নয় বরং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলাের ভ্রান্তি প্রমাণের মধ্য দিয়ে : The criterion of the scientific status of a theory is its falsifiability, or refutability, or testability। এটাই হওয়া উচিৎ বিজ্ঞানের ছাঁকুনি। আর এই ছাঁকুনি চালনার জন্য দরকার নিগূঢ় পরীক্ষণের। পপারের ভাষায়,

বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার অস্তিত্ব ততক্ষণই থাকবে যতক্ষণ তত্ত্বগুলােকে কঠিন প্রায়ােগিক পরীক্ষণের (Empirical Testing) মধ্যে দিয়ে চালানাে যাবে। যখন কোন তত্ত্বকে পরীক্ষণের চেয়ে বরং সুরক্ষিত করে রাখার চেষ্টা করা হয়, তখন বুঝতে হবে এর মধ্যে গলদ রয়েছে।

এই মানদন্ড অনুযায়ী সেটি  কোনক্রমেই প্রকৃত বিজ্ঞান নয়, কারণ এতে ভুল প্রমাণেয়তার (Falsifiability) অভাব রয়েছে। সেটি  পরীক্ষণের ইতিবাচক ফলাফল সবিস্তারে বিভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে কিন্তু এই পরীক্ষণের সংজ্ঞায়িত ব্যর্থতার শর্তসমূহ কি তা সুস্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে না। ১৮৫৩ সালে বহির্জাগতিক প্রাণ অনুসন্ধানের এক মূখ্য চরিত্র উইলিয়াম ওয়েহেল মন্তব্য করেছিলেন,

যে (এলিয়েন সংক্রান্ত) বিতর্কে আজ আমরা নিয়ােজিত তা বিজ্ঞানের রাজ্যের এমন এক প্রান্তসীমায় রয়েছে যেখানে জ্ঞানের শেষ আর অজ্ঞতার শুরু।

কার্ল স্যাগানও তার বহুল বিক্রিত গ্রন্থ The Demon Haunted World: Science as a Candle in the Dark -এ ভুল প্রমাণেয়তার উপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন। তিনি যুক্তি। (Argument) যাচাই এবং ভ্রান্ত ও খুঁত যুক্ত যুক্তি উদঘাটনের জন্য বেশ কিছু উপায়ও বাতলে দেন যা Baloney Detection Kit   নামে পরিচিত, বাংলায় আমরা এর নামকরণ করতে পারি -‘মিথ্যা নির্ণায়ক যন্ত্র হিসেবে। এগুলাের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেঃ

ক) কর্তৃপক্ষ বা ‘গুরু’র যুক্তি খুব সামান্যই গুরুত্ব পাবে (বিজ্ঞানে এ ধরনের কোন ‘গুরু’র অস্তিত্ব নেই)।

খ) অক্কামের ক্ষুর (Occam’s razor)- যদি একই ধরনের দুটি অনুকল্প উপাত্তকে সমানভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে তবে এদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত সহজটিকে গ্রহণ করতে হবে।

গ) দেখতে হবে অনুকল্পটিকে ভ্রান্ত প্রমাণ করা সম্ভব কিনা। অন্য কথায় হাইপােথেসিস পরীক্ষণযােগ্য কিনা। অন্যরা একই ধরনের পরীক্ষা করলে সম ধরনের ফলাফল পাবে কিনা-এটি হতে হবে বিবেচ্য বিষয়।

মজার বিষয় হচ্ছে, স্যাগানকেই তার প্রদত্ত প্রকৃত বিজ্ঞান গবেষণার নির্দেশনা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করা যায়। স্যাগান নিজে কর্তৃপক্ষ হয়েও সেটি   গবেষণার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণা থেকে প্রাপ্ত সকল উপাত্তই রায় দিয়েছে যে, আমাদের ছায়াপথে এখনাে কোন বুদ্ধিসত্ত্বার পরিচয় মেলেনি। ফলে সেটি এমন একটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করছে যা এখনাে পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয় হয়ে ওঠার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে নি।

সেটি  সমর্থকরা অবশ্য এই সমালােচনাকে পাশ কাটিয়ে গেছেন এই বলে যে, মূলধারার কোন বিজ্ঞানীই আজ পর্যন্ত মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্বের দাবী করেননি। বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব থাকতে পারে বা থাকার সম্ভাবনা আছে এমন কথাই শুধু বলা হয়েছে মাত্র, আর সে সম্ভাবনার নিরিখেই চলছে তাদের ‘বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান

মহাজাগতিক বুদ্ধিমত্তার অনুসন্ধান : এক বর্ণাঢ্য জুয়াখেলা

মহাজাগতিক বুদ্ধিমত্তা খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা বিজ্ঞানের জগতের সবচেয়ে বড় জুয়াখেলা। কেউই জানে না এই গবেষণার ফলাফল কি হবে। হয়তাে এই মহাবিশ্ব প্রাণশূন্য, আমরা ছাড়া আর কোন প্রাণীর অস্তিত্বই হয়তাে নেই কোথাও। আমরা যদি সেটি  অনুসন্ধান চালিয়ে যাই এবং ক্রমান্বয়ে উন্নতি করতে থাকি যেমন দিন দিন যদি চ্যানেল সংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলে হয়তাে একদিন আমরা বর্তমানের চেয়ে আরাে দক্ষ অনুসন্ধান চালাতে পারবাে।

কয়েক শত বছর পরেও যদি দেখা যায় যে কোন সঙ্কেতই পাওয়া যাচ্ছে না, তা হলে মােটামুটি নিশ্চিত হওয়া যাবে যে এই মহাবিশ্বে আমরাই একমাত্র বুদ্ধিমান সত্তা। তবে সেই আবিষ্কারও মহাজাগতিক প্রাণী আবিষ্কারের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা তখন আমরা উপলব্ধি করতে পারবাে যে এই মহাবিশ্বে পৃথিবী নামক আমাদের এই প্রিয় গ্রহটি অনন্য সাধারণ এবং সেই সাথে জীবনও মহাবিশ্বে দুর্লভ কাজেই এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা আমাদেরই কর্তব্য। এখন পর্যন্ত অনন্ত মহাবিশ্বের মাত্র ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে পরিচালনা করা হয়েছে অনুসন্ধান। বিশাল মহাবিশ্বের প্রায় পুরোটাই বলা যায় রয়ে গেছে মানুষের বােধ ক্ষমতার বাইরে। সেখানে কি আছে আর কি নেই, সে সম্পর্কে মানুষের ধারণা খুবই অপ্রতুল।

অনেকে আবার বলছেন এতাে অর্থ অপচয় করে বহির্জাগতিক সভ্যতার সাথে যােগাযােগের চেষ্টা করার আদৌ কি কোন প্রয়ােজন আছে? আর তা ছাড়া সে সমস্ত সভ্যতা যদি আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত আর শক্তিশালী হয় তবে তারা আমাদের খোঁজ পেয়ে ধ্বংস করে ফেলতে পারে। এই ধরনের অভিযােগের উত্তরে কার্ল স্যাগান বলতেন, একটি উন্নত সভ্যতা থেকে আমরা যদি কোন বার্তা সত্যই পাই তাহলে দার্শনিক অন্তদৃষ্টির মতাে পরশ পাথর’ খুঁজে পাওয়ার যে সম্ভাবনা রয়েছে তা বিশাল। কিন্তু এই সুবিধা নির্ভর করছে প্রাপ্ত বার্তা কতাে বিস্তারিত হবে তার উপর। এ সম্পর্কে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। অবশ্য এই বার্তা পেলে একটি বিষয় স্পষ্ট হবে যে, উন্নত সভ্যতার অস্তিত্ব রয়েছে এবং ওই সভ্যতা আত্মধ্বংস এড়িয়ে যাওয়ার মতাে কৌশলও রপ্ত করে ফেলেছে।

carlsagan
চিত্র ৯.৩: কার্ল স্যাগান : যিনি স্বপ্ন দেখতেন এই মানব সভ্যতা একদিন পৌঁছে যাবে আন্তঃনাক্ষত্রিক মিলনমেলায়।

যে আত্মধ্বংস আমাদের মত প্রযুক্তিগতভাবে স্বল্প উন্নত সভ্যতার জন্য সমূহ বিপদ বলে। মনে হয়, এবং যে বিপদের ভিতর আমরা প্রতিনিয়ত অবস্থান করছি : বিশ্বায়নের ফলে শক্তিশালী জাতিগুলাের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, জাতি-উপজাতিগুলাের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ বিগ্রহ, পরিবেশ দূষণ, সব কিছুর ঢালাও বাণিজ্যিকরণ, ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি। এই ধরনের আন্তঃ নাক্ষত্রিক বার্তা হয়ত আমাদের জন্য এমন একটি বাস্তব সুবিধা এনে দিতে পারে যাকে গণিত শাস্ত্রের ভাষায় বলে অস্তিত্বের তত্ত্ব (Existence theorem)। এর অর্থ হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তি করায়ত্ব করেও আমরা হয়ত আত্ম ধ্বংসের পথ পরিহার করার উপায় সম্বন্ধে জানতে পারব এবং শান্তির সাথে বসবাস করতে পারব।

আর খরচের কথা উঠলে এ কথা তাে অবশ্যই বলা যায় যে, আধুনিক একটি যুদ্ধ জাহাজ যেমন ডেস্ট্রয়ার তৈরি করার খরচ দিয়ে বহির্জাগতিক প্রাণ অনুসন্ধানের খরচ অন্ততঃ দশ বছর চালিয়ে নেওয়া সম্ভব। এই গবেষণায় অর্থ ব্যয় করা দরকার শুধুমাত্র এই আশায় যে, সত্যিই যদি সাফল্য অর্জন করা যায় তবে তা হবে মানবজাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। সাফল্য অর্জন না করলেও খুব একটা সমস্যা নেই, কেননা এই গবেষণার ফলশ্রুতিতে বিজ্ঞানের এবং প্রযুক্তির যে অবিশ্বাস্য উন্নতি হচ্ছে তার সুফলও ভােগ করবে শেষ পর্যন্ত মানুষই।

মানুষের মহাজাগতিক ঠিকানা: দ্বিতীয় পৃথিবীর সন্ধানে

আরেকটি কারণেও এই ধরণের মহাজাগতিক গবেষণা চালিয়ে যাওয়া প্রয়ােজন। আমাদের প্রযুক্তিভিত্তিক সভ্যতা এখন পুরােপুরি দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর ব্যবহার্য শক্তি আহরণের উপর।

কিন্তু যত দিন যাচ্ছে পৃথিবীর অব্যবহৃত শক্তির উৎস কমে আসছে, এমন একদিন আসবে যখন পৃথিবীতে ব্যবহার উপযােগি কোন শক্তিই হয়ত আর পাওয়া যাবে না। জীবাশ্ম জ্বালানীর মজুদ যাবে ফুরিয়ে। তখন আমাদের উত্তরসূরীদের হাত বাড়াতে হবে মহাজাগতিক সামগ্রিক উৎসের দিকে। পৃথিবীতে ব্যবহার্য শক্তির প্রধানতম উৎস হল সূর্য। চারশ কোটি বছর পার করে দিয়ে আজও সূর্য যেন ‘প্রেটি ইয়ং, শক্তির এক অফুরন্ত ভান্ডার’ যেন! কিন্তু তারপরও সূর্য কিন্তু চিরঞ্জীব নয়। বিজ্ঞানীরা সূর্যের মত কম ভরের একটি মাঝারি মানের নক্ষত্রের মৃত্যুর চুড়ান্ত সময় নির্ধারণ করেছেন : আর সেটি এখন থেকে পাঁচশ কোটি বছরের মধ্যে।

নক্ষত্র সৃষ্টির প্রথম যুগে ভর আর তাপমাত্রা যখন যথেষ্ট বেশি থাকে, তখন খুব বেশি বেগ সম্পন্ন হাইড্রোজেন পরমাণু পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ফিউশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হিলিয়াম পরমাণুতে রূপান্তরিত হয়। এটি ঘটে ‘ত্রি-ধাপীয় তাপ-নিউক্লিয় ফিউশন’ প্রক্রিয়ায়, যা ‘হাইড্রোজেন দহন নামে পরিচিত। এই হাইড্রোজেন দহনই আমাদের শক্তির মূল উৎস। কিন্তু আগামী পঞ্চাশ কোটি বছরের মধ্যে ‘সােলার কোর’-এর সমস্ত হাইড্রোজেন ফুরিয়ে যাবে। এরপর সূর্য প্রসারিত হয়ে একটি ক্ষুদ্র দৈত্যে পরিণত হবে। নামে ক্ষুদ্র হলেও এর আকৃতি হবে বর্তমান সূর্যের প্রায় তিনগুণ আর এর উজ্জ্বলতা হবে এখনকার উজ্জ্বলতার প্রায় দ্বিগুণ।

সঙ্গত কারণেই পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। ফলে, সমুদ্রের সমস্ত পানি তখন বাষ্পে পরিণত হবে। এ সময় যদি কোন প্রাণীকে টিকে থাকতে হয়, তবে অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রাকে মােকাবেলা করে টিকে থাকতে হবে। পরবর্তী কয়েকশ কোটি বছরের মধ্যে সূর্য পরিণত হবে ‘লােহিত দৈত্যে’। তখন সূর্যের ব্যাস হবে বর্তমান ব্যাসের শতগুণ, আর উজ্জ্বলতা হাজারগুণেরও বেশি। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে লােহিত দৈত্যে পরিণত হওয়ার পূর্বেই হিলিয়াম গ্যাসের স্ফুরণ ঘটবে। হিলিয়াম পােড়ার এই কাল হবে কয়েক কোটি বছর। হিলিয়াম পােড়ার শুরু থেকে সূর্য কিছুটা সঙ্কুচিত হলেও শেষ দশ লক্ষ বছরে সূর্য আবার প্রসারিত হতে থাকবে। এর তাপমাত্রা তখন দাঁড়াবে কয়েক হাজার কেলভিন, আর এর উজ্জ্বলতা বর্তমান উজ্জ্বলতার কয়েক হাজার গুণ।

এরপর সূর্য তার বহিস্তর ত্যাগ করবে, এর ফলে সূর্যের বহিরাবরণ থেকে উৎক্ষিপ্ত উপাদান নিয়ে ‘প্ল্যানেটরি নেবুলা’ তৈরি হতে পারে। তখনও যদি পৃথিবী ধ্বংপ্রাপ্ত না হয়, তবে এর পােড়া পৃষ্ঠদেশ হবে গাঢ় অন্ধকার এবং শীতল। স্বভাবতই এটি হবে প্রাণহীন ও শুস্ক। সাদা বামনে বিবর্ণ রূপ ধারণ করবে আমাদের আজকের মহাপ্রতাপশালী নক্ষত্র সূর্য।

স্বভাবতই সূর্যের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানব সভ্যতার অবলুপ্তিকে অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। নিঃসন্দেহে যে কোন নৈরাজ্যজনক পরিণতি’কে অতিক্রম করাই বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সভ্যতার বৈশিষ্ট্য। সেজন্যই মানুষ হাজারাে পার্থিব সমস্যার মধ্যে থেকেও আন্তঃনাক্ষত্রিক পরিভ্রমণের স্বপ্ন দেখে, যদিও এ প্রযুক্তি শৈশবও অতিক্রম করেনি। কিন্তু যত দিন যাবে এ প্রযুক্তি তত পরিণত হবে, এটি আশা করা যায়। এ ধরনের গবেষণায় রাষ্ট্রীয় বাজেট উত্তরােত্তর বেড়েই চলেছে। এমনকি পুরােমানব সভ্যতাকেও এর অন্তর্ভুক্তির সচেতন প্রয়াস চলছে বিভিন্ন ভাবে।

কাজেই আন্তঃনাক্ষত্রিক পরিভ্রমণের মাধ্যমে মানবসভ্যতা স্থানান্তরকে আজ কিছু অলস মনের ‘স্বপ্ন বিলাস’ মনে হলেও আগামীতে এটি দেখা দিতে পারে ‘বাস্তবতা’ হিসেবে। বিখ্যাত বিজ্ঞান লেখক আর্থার সি ক্লার্ক মনে করেন যে, ২০৫৭ সালের মধ্যে চাঁদ, মঙ্গল কিংবা ইউরােপাতে মানব বসতি স্থানান্তর সম্ভব হতে পারে। জ্যোতির্পদার্থবিদ পল ডেভিসও অদূর ভবিষ্যতে মঙ্গলে বসতি স্থাপনের ব্যাপারে আশাবাদি। বিখ্যাত পদার্থবিদ এবং গণিতজ্ঞ ফ্রিম্যান ডাইসন মনে করেন কয়েক শতকের মধ্যে মাহাকাশের ‘কুইপার বেল্টে’ মানব বসতি স্থাপন সম্ভবপর হতে পারে।

যেভাবে আমাদের পূর্বপূরুষেরা দুই লাখ বছর আগে একটা সময় আফ্রিকার গহীন অরণ্যে উদ্ভূত হয়ে ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল আহার আর বাসস্থানের তাগিদে, ঠিক তেমনিভাবে আমাদের উত্তরসূরীরা হয়ত পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে একটা সময় পা রাখবে আন্তঃনাক্ষত্রিক পরিমন্ডলে, খুঁজে নেবে এ অনন্ত মহাকাশের বুকে লুকিয়ে থাকা কোন এক দ্বিতীয় পৃথিবী। মহাজাগতিক উপনিবেশের জন্য নয়, হয়ত অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই।

 

সমাপ্ত


 মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে

0 0 votes
Post Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
মন্তব্য করুনx
()
x
Scroll to Top
Scroll to Top
১ম অধ্যায়

২য় অধ্যায়

৩য় অধ্যায়

৪র্থ অধ্যায়

৫ম অধ্যায়

৬ষ্ঠ অধ্যায়

৭ম অধ্যায়

৮ম অধ্যায়

৯ম অধ্যায়

গ্রন্থ আলোচনা/সমালোচনা