মােটামুটিভাবে যে ধাপগুলাে অনুসরণ করে এই পৃথিবীতে প্রাণের নান্দনিক বিকাশ ঘটেছে, তা নিয়ে এবার একটু ধারাবাহিকভাবে আলােচনা করা যাক। আমরা তাে গত কয়েকটি পর্ব ধরে অনবরত বলেই যাচ্ছি যে, আমাদের এই মলয় শীতলা নান্দনিক পৃথিবীটা একটা সময় এত উত্তপ্ত ছিল যে, সেই আবহাওয়াতে হাইড্রোজেন, মিথেন, এমােনিয়া, কার্বন মনােক্সাইড, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি ছাড়া অন্য কোন জৈব পদার্থ ছিল না। ছিল না সেখানে মুক্ত অক্সিজেন। কাজেই সেই বিজারকীয় পরিবেশে প্রাপ্ত অজৈব পদার্থগুলাে থেকে জৈব পদার্থের উৎপত্তিই হচ্ছে জীবনের প্রাথমিক ধাপ। ধাপগুলােকে ধারাবাহিকভাবে লিখলে দাড়াবে অনেকটা এরকম :
ধাপ-১: জৈব যৌগের উৎপত্তি :
☛ হাইড্রোকার্বনের অক্সি ও হাইড্রক্সি-উপজাতের উৎপাদন (বাষ্প ও হাইড্রোকার্বনের বিক্রিয়ায় এলডিহাইড, কিটোন উৎপাদন)
☛ কার্বোহাইড্রেট উৎপাদন (গ্লুকোজ, ফুকটোজ আর ঘনীভবনের ফলে চিনি, স্টার্চ, গ্লাইকোজেন)
☛ ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলের উৎপত্তি (ফ্যাট বা চর্বির ঘনীভবন)
☛ অ্যামাইনাে এসিড গঠন (হাইড্রোকার্বন, অ্যামােনিয়া আর পানির বিক্রিয়া)
ধাপ-২:জটিল জৈব অণুর উৎপত্তি (পলিমার গঠন)
☛ কো-এসারভেট
ধাপ-৩:পলিনিউক্লিয়ােটাইড বা নিউক্লিক এসিড গঠন
ধাপ-৪:নিউক্লিয়ােপ্রােটিন গঠন
ধাপ-৫: আদি কোষ বা ইউবায়ােন্ট গঠন (কো-এসারভেটের ভিতরে নিউক্লিয়ােপ্রােটিন আর অন্যান্য অণু একত্রিত হয়ে লিপােপ্রােটিন ঝিল্লি দিয়ে আবদ্ধ প্রথম কোষ; প্রথম জীবন)।
ধাপ-৬: শক্তির উৎস ও সরবরাহ (শক্তির সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায়, প্রকৃতিতে টিকে রইল তারাই যারা প্রােটিনকে এনজাইমে রূপান্তরিত করে সরল উপাদান থেকে জটিল বস্তু তৈরী করতে পারত, আর সেসব দ্রব্য থেকে শক্তি নির্গত করতে পারত)
ধাপ-৭: অক্সিজেন বিপ্লব (অক্সিজেনহীন বিজারকীয় আবহাওয়া অক্সিজেনময় জারকীয় আবহাওয়ায় রূপান্তরিত হল – আজ থেকে দু’শ কোটি বছর আগে)
ধাপ-৮:প্রকৃত কোষী জীবের উৎপত্তি (প্রােক্যারিওট থেকে ইউক্যারিওট)
ধাপ-৯:জৈব-বিবর্তন বা Biogeny (জীব থেকে জীবে বিবর্তন)।

এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, উপরে উল্লিখিত রাসায়নিক পরিবর্তনের এই ধাপগুলাে কিন্তু একদিনে সম্পন্ন হয়নি। প্রােটিন এবং নিউক্লিক এসিড স্বতঃস্ফূর্তভাবে নানা ধরনের ভিন্ন ভিন্ন সমাবেশে সংঘবদ্ধ হয়েছে লক্ষ কোটি বছর ধরে। প্রকৃতি নিজেই নিজের উপর আকস্মিকতার পরীক্ষা (Chance experiment of nature) করেছে বিস্তর। ফলে অজৈব পদার্থ থেকে একসময় উদ্ভুত আদি কোষগুলাে নিউক্লিয়িক এসিডের সমন্বয়ে অনুলিপির ক্ষমতা অর্জন করেছে, আর সময়ের সাথে সাথে বিবর্ধিত করেছে। আসলে সহজ কথায় সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে জটিলতা। এই জটিলতা বৃদ্ধিই জীবন বিকাশের এক অত্যাবশ্যকীয় শর্ত।
জটিলতার অর্থ সংবাদ বা তথ্যের বৃদ্ধি। যে অণু যত সরল ও ছােট, তার ভিতরকার সংবাদ ও তথ্য তত কম। অণু যত দিনে দিনে বৃহৎ আকার অর্জন করেছে, এক থেকে বহুত্ব অর্জন করেছে, ছােট কণা থেকে বড় কণায় রূপান্তরিত হয়েছে- বৃদ্ধি করেছে জটিলতার। তাই সংক্ষেপে বলা যায়, জীবন বিকাশের আগে দরকার ছিল জটিলতা বৃদ্ধির। জটিলতা বাড়তে বাড়তে যখন জীবনােপযােগী পরিবেশ তৈরী হল, অর্থাৎ তথ্যের পাহাড় জমল, তখনই শুরু হল প্রকৃত জীবন। প্রকৃত জীবন পারল স্বপুনরাবৃত্তির ক্ষমতা অর্জন করতে; শিখল বহিঃস্থ তথ্যকে ব্যবহার করতে। কাজেই বলা যায়, জটিলতাই হচ্ছে জীবনের ভিত্তি। উপরে একটি প্রবাহচিত্রের সাহায্যে আরেকটু সহজভাবে জীবনের উৎপত্তির প্রক্রিয়াটিকে তুলে ধরা হয়েছে (চিত্র ৫.২)।
জটিলতা বৃদ্ধির ব্যাপারটি আরাে পরিস্কার হবে আজকের দিনের কোষগুলাের সাথে আদি কোষ বা ‘প্রটোসেল’-এর তুলনা করলে। আদি কোষগুলােতে কোন জেনেটিক তথ্য ছিল না; অর্থাৎ ছিল না কোন ডিএনএ এবং আরএনএ, যা আজকের দিনের কোষগুলাের একটি অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য। কিভাবে তাহলে একসময় উৎপন্ন হল এই ডিএনএ এবং আরএনএ-এর?
এ প্রসঙ্গে দু’চার কথা বলা যাক। আমরা আজ জানি যে, সমস্ত জীবিত বস্তু, সে উদ্ভিদই হােক। আর প্রাণিই হােক, তার প্রকৃতি নির্দেশিত হয় বংশগতির বাহক – ‘জীনের’ কতকগুলাে জটিল রাসায়নিক অণুর অঙ্গুলি হেলনে। জীনের এই রাসায়নিক অণুগুলাে হল ডিএনএ এবং আরএনএ; এই দুই হারমােনিয়াম আর সেতারের সমন্বিত সংযােগেই রচিত হয়েছে আমাদের জীবন-সঙ্গীতের সুর। ডিএনএ হচ্ছে ডিঅক্সিরাইবােনিউক্লিয়িক এসিড এবং আরএনএ হল রাইবােনিউক্লিয়িক এসিডের সংক্ষিপ্ত রূপ।
প্রতিটি ডিএনএ-তে থাকে চার রকমের নাইট্রোজেনাস বেসের সরল অণু – A, G, C, T। আবার প্রত্যেক আরএনএ অণুতেও থাকে চার রকমের বেস- A, G, C, U। T এবং U এর মধ্যে সাদৃশ্য আছে বটে, কিন্তু বৈসাদৃশ্যও কম নয়। আর জীবনের রসায়নে সামান্য তফাতের পরিনামও কিন্তু হতে পারে বিশাল। এই ডিএনএ এবং আরএনএ যেমন নির্ধারণ করছে আমার মাথায় কোকরানাে চুল কেন, আর ফুটবলার জিদানের মাথায় টাক কেন, তেমনিভাবে বলে দিচ্ছে চিতাবাঘের গায়ে কালাে ফুটকি কেন, আর কেনই বা তাল গাছ এত লম্বা! হাজার হাজার কোষ দিয়ে তৈরি হয়েছে আমাদের দেহ।
জটিলতার পথ বেয়ে এমনভাবে কোষগুলাে বিবর্তিত হয়েছে যে সামান্য অতিক্ষুদ্র একটা কোষে জীবনের সমস্ত জটিল তথ্যগুলাে সন্নিবেশিত থাকে। এই জটিল তথ্যগুলােকেই বিজ্ঞানীরা বলছেন – ব্ল প্রিন্ট অব লাইফ।

যদিও এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় যে এই ব্লু প্রিন্টের রহস্য বিজ্ঞানীরা অনেকটাই সমাধান করে ফেলেছেন, তারপরও একটি সমস্যা নিয়ে তারা বরাবরই হিমশিম খেয়েছেন। কিভাবে আদি কোষে আরএনএ এবং ডিএনএ-এর মত বংশাণুসৃত দ্রব্যের অভ্যুদয় ঘটলাে? প্রােটিন অণুগুলাের অভ্যুদয় আগে ঘটেছিলাে, নাকি নিউক্লিয়িক এসিডের (আরএনএ / ডিএনএ)? এ অনেকটা যেন ‘ডিম আগে নাকি মুরগী আগে’ ধরণের সমস্যা। কারণ, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন আজকের প্রােটিন অণু তৈরী করতে নিউক্লিক এসিডের প্রয়ােজন। আবার নিউক্লিক এসিড তৈরী করতে দরকার এনজাইম – যেগুলাে মূলতঃ প্রােটিন ছাড়া আর কিছু নয়। তাহলে কোনটির অভ্যুদয় আগে ঘটেছিল – প্রােটিন নাকি নিউক্লিয়িক এসিডের?
এর দুটি সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে। আদিমকালে প্রােটিন তৈরী হয়েছিল আগে, তারপর সরলতর প্রােটিন থেকে যখন আরএনএ/ডিএনএ’র উদ্ভব হয়েছিল, তখন হয়ত কোন এনজাইমের সাহায্যের প্রয়ােজন হয়নি। প্রিন্সটন ইন্সটিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি’র অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ফ্রিম্যান ডাইসন। এই ‘প্রােটিন আগে’ (Protein-first) তত্ত্বের একজন জোরালাে প্রবক্তা। তত্ত্ব দিলে কি হবে, এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেননি যে কিভাবে ওই আদি প্রােটিনগুলাে প্রতিরূপায়নের (Replication) ক্ষমতা অর্জন করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি স্যান ডিয়াগাের স্ক্রিপস ইন্সটিটিউটের রেজা ঘাদিরি তার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে কিছু পেপটাইডের শিকল সত্যি সত্যি প্রতিরূপায়ন ঘটাতে পারে।
শুধু তাই নয়, প্রতিরূপায়ন ঘটাতে গিয়ে ঘটা ভুলের সংশােধনও করতে চেষ্টা করে; দেখে মনে হয় সত্যই এগুলাের ভিতর ‘মন বলে কোন কিছু আছে’ (Cohen, 1996)! এ ছাড়া ‘ম্যাড কাউ’ রােগের উৎস হিসেবে যে প্রিয়নের কথা আমরা। একটু আগে জেনেছি তারাও তাে স্রেফ প্রােটিন দিয়ে তৈরী হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের প্রতিলিপি তৈরী করে রােগ ছড়াতে পারছে। আরেকটি সম্ভাব্য সমাধান হচ্ছে সেই যে তথাকথিত ‘আরএনএ পৃথিবীর’ ধারণা, যেটি ইদানিং বিজ্ঞানীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ছে। ষাটের দশকে কার্ল উস, ফ্রান্সিস ক্রিক এবং লেসলি অর্গেল পৃথকভাবে প্রস্তাব করেন যে, প্রােটিন এবং ডিএনএ তৈরীর আগে আরএনএ-ই প্রথম তৈরি হয়েছিল এবং গঠন করছিল সেই আরএনএ পৃথিবী (RNA world)। এ শুধু কল্পনা নয়। আজকের পৃথিবীতেও অনেক তামাকের মােজাইক এবং সরল ভাইরাস পাওয়া যায়, যাতে ডিএনএ-এর ছিটেফোঁটাও নেই, পুরােটাই আরএনএ।
আদিম পৃথিবীতে এই আরএনএ-গুলাে জীবন গঠনের জন্য প্রয়ােজনীয় সমস্ত রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করত এবং নিজেদের প্রতিরূপায়ন (Replication) ঘটাতে পারত। শুধু তাই নয়, ধারণা করা হয় যে, সে সময় আরএনএ অ্যামাইনাে এসিডের সাথে সংযুক্ত হয়ে প্রােটিনের অণুও গঠন করতে পারত। এ হতেই পারে কারণ ধারণা করা হয় যে আদিম পৃথিবীর আরএনএ-এর দুটো বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল যা আজকের পৃথিবীতে নেই : এক – প্রােটিনের সাহায্য ছাড়াই প্রতিরূপায়ন করার ক্ষমতা, এবং দুই – প্রােটিন সংশ্লেষনের প্রতিটি ধাপকে অনুঘটিত (Catalyze) করার ক্ষমতা। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন ডিএনএ অণু তৈরী হয়েছে পরে।
প্রােক্যারিওট বা আদিকোষের যখন উদ্ভব ঘটেছিল তখন তাদের বিবর্তন হচ্ছিল বিভিন্ন রূপে। কোনটার হয়তাে চলফেরা করার জন্য সুগঠিত ফ্লাজেলা ছিল, কোনটা হয়ত ছিল বাতাস থেকে অক্সিজেন নেওয়ার ব্যাপারে পারদর্শী, আবার কোনটার শরীরে হয়ত ছিল ক্লোরফিল। কোন এক সময়ে চলমান একটা প্রােক্যারিওট হয়তাে কোন একভাবে এসে মিশেছিল অক্সিজেনবাহী প্রােক্যারিওটের সাথে অথবা ক্লোরফিলবাহী একটা প্রােক্যারিওটের সাথে, কিংবা হয়ত একসঙ্গে দুটোর সাথেই।
এই রকম মেশামেশির ফলে যে জিনিসটা তৈরী হল তা পারিপার্শ্বিক অবস্থার মােকাবেলায় একক প্রােক্যারিওটের চেয়ে অনেক দক্ষ হবে। সংঘবদ্ধ হলে যে দক্ষতা বাড়ে তা তাে শুধু জৈব জগতে নয়, সামাজিক জীবনেও প্রমাণিত। পিঁপড়ের ঢেলা, উইয়ের বাসা কিংবা মৌমাছির চাকগুলাের দিকে তাকান। সংঘবদ্ধতার উৎকর্ষতা হাতে নাতে পেয়ে যাবেন। গরিলা কিংবা হাতীর মত স্তন্যপায়ী জীবেরা যে দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করে দক্ষতা বাড়িয়ে তােলে তা বলাই বাহুল্য। আর সংঘবদ্ধতার শ্রেষ্ঠতম নমুনা তাে আমাদের মানব সমাজ। কাজেই সংঘবদ্ধতার কারণেই প্রােক্যারিওটদের উপনিবেশগুলােই টিকে থাকলাে আর বাড়বাড়ন্ত হলাে এদের।
এ ধরনের মেশামিশি করতে গিয়েই আজ থেকে ১৪০ কোটি বছর আগে বিভিন্ন রকমের প্রােক্যারিওটের সংমিশ্রনে ইউক্যারিওট বা প্রকৃতকোষী জীবের উদ্ভব ঘটে। ইউক্যারিওটীয় কোষগুলাে যে বহু প্রােক্যারিওটীয় কোষের সমষ্টি তা লিন্ মাগাের্লিস (১৯৩৮-) খুব জোরের সাথে সমর্থন করেন। ধারণা করা হয় প্রােক্যারিওটরা একে অপরের সাথে জুড়ে জুড়ে যখন ক্রমশ বড় থেকে আরাে বড় কোষ তৈরী করেছিল, তখন তাদের আয়তন ও জেনেটিক পদার্থের পরিমানও গেল বেড়ে।
দেখা গেল ক্রোমােজোমগুলাে গােটা কোষের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে কোষ বিভাজন ঘটা মুশকিল। তাই যে সব মিশ্রিত-প্রােক্যারিওটগুলাের ক্রোমাটিন ছােট নিউক্লিয়াসে কেন্দ্রীভূত ছিল প্রকৃতি তাদের বাড়তি সুবিধা দিল-ফলে তারাই সে সময় ভালভাবে টিকেছে এবং কালের ধারাবাহিকতায় একসময় মিশ্রিত-প্রােক্যারিওটগুলাে পরিণত হয়েছে। ইউক্যারিওটে।
১৯৫৪ সালে মার্কিন জীবাশ্মবিদ এলসাে স্টেরেনবার্গ বার্গহন উত্তর আমেরিকার অন্টারিও প্রদেশের দক্ষিণ দিকে প্রাচীন পাথরের বুকে সর্বপ্রথম এই ধরণের আদি ইউক্যারিওটের খোঁজ পান। তারপর থেকে এধরণের বস্তু এত দেখা গেছে যে এগুলাে অতি আদিম ইউক্যারিওট তা নিয়ে সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন যে ইউক্যারিওট- তা এক ধরনের শৈবাল; এদের নাম দেওয়া হয়েছে আক্রিটার্ক। এদের বয়স প্রায় ১৪০ কোটি বছর।
সবচেয়ে প্রাচীন যে প্রােক্যারিওটের সন্ধান এ পৃথিবীতে পাওয়া গেছে তা সম্ভবতঃ ৩৬০ কোটি বছরের পুরােন। তার মানে পৃথিবীর বয়স যখন মােটামুটি ১০০ কোটি বছর পেরিয়েছে তখন থেকেই প্রাণের অস্তিত্ব এ পৃথিবীতে ছিল, অন্ততঃ প্রােক্যারিওট-রূপে। ২০০ কোটি বছরেরও বেশী সময় ধরে পৃথিবীতে জীব বলতে ছিল শুধু তারাই। কোষ-ওয়ালা যাবতীয় জীবের অস্তিত্ব যতদিন, এই সময়টা তার অর্ধেকেরও বেশী।
৩৬০ কোটি বছরের পুরােন প্রােক্যারিওটের সন্ধান বিজ্ঞানীরা যেখানে পেয়েছেন সেখানে তারা চ্যাপটা জটবাধা আর ভিতরে পলিপড়া নানান জৈব স্তরের সৃষ্টি করেছে। এগুলাের নাম হল স্ট্রোমাটোলাইট (গ্রীক ভাষায় এর অর্থ হল ‘বিছানার চাদর’)। নীচে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া স্ট্রোমাটোলাইটের ছবি দেখানাে হয়েছে (চিত্র ৫.৪)।

জীবনের সূচনার ধাপগুলাের দিকে আরেকটিবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক :
১) প্রথমে তৈরী হল ছােট্ট একটা একতন্ত্রী আরএনএ অণু – এনজাইমের সাহায্য ছাড়া প্রতিরূপায়ণে এবং সরল প্রােটিন অণু তৈরীর ক্রিয়ায় অণুঘটক হিসেবে সেটি কাজ করতে সক্ষম।
২) যে সব প্রােটিন অণু এই আরএনএ-এর ঘটকালিতে তৈরী হল, তাদের সংস্পর্শে এল এই আরএনএ, তাতে আরএনএ অণুর স্থায়িত্ব বেড়ে গেল। এই অণু তখন আরাে লম্বা হতে পারলাে, প্রতিরূপায়নেও আরাে দক্ষ হল।
৩) আরএনএ থেকে ডিএনএ অণুতৈরী হল, হয়ত আরএনএ-এর প্রতিরূপায়নে কিছু ভুলের কারণে। কিন্তু দেখা গেল এই অণু আরএনএ-এর চেয়ে অনেক বেশী স্থায়ী, এর বেনী অনেক লম্বা, তথ্য এতে অনেক নিরাপদে সঞ্চিত থাকে প্রতিরূপায়নে ঝামেলা এবং ভুল দুই-ই কম হয়। প্রােটিনের সাথে সহাবস্থানের কারণে ক্রমশঃ এর আকার জটিলতর হল, এবং এদের কার্যকারিতাও বাড়তে থাকল।
৪) ভাইরাসের মত সরল কোষী জীবের অভ্যুদয় ঘটল, তারপর তাদের ক্রমবিকাশের ফলে তৈরি হল প্রােক্যারিয়েট বা আদিকোষের, তা থেকে একসময় জন্ম নিল ইউক্যারিওট বা প্রকৃতকোষী জীবের। তা থেকে অন্য সমস্ত জীব।
