আমাদের মত দেশগুলােতে তাে ম্যালেরিয়া কোন নতুন বিষয় নয়। আমরা সেই ছােটবেলা থেকেই জেনে এসেছি যে এ্যনােফিলিস নামের এক ধরণের মশার মাধ্যমেই এই ম্যালেরিয়া ছড়ায়। এই রােগের জীবাণুটা এক ধরণের পরজীবী প্রটোজোয়া (Protozoa) যা রােগীর রক্তের মধ্যে বিস্তার লাভ করে। ম্যালেরিয়া রােগীকে যখন এই মশা কামড়ায় তখন তার মাধ্যমেই জীবাণুটা ছড়িয়ে পড়ে আবার আরেকজনের শরীরে। মশার দৌরত্ব কমাতে পারলেই যেহেতু এই রােগের বিস্তার থামানাে সম্ভব তাই অনেক সময়ই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত জায়গাগুলােতে কীটনাশক ডিডিটি পাউডার ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ডিডিটি হচ্ছে এক ধরণের মারাত্মক স্নায়বিক বিষ, মশার ঘাঁটিগুলােতে প্রথমবারের মত ডিডিটি ছড়ানাের সাথে সাথে মশার সংখ্যা এবং সেই সাথে ম্যালেরিয়ার প্রকোপও আশাতীতভাবে কমে যায়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কয়েক দশক আগে ভারত, বাংলাদেশসহ আমাদের এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কমিয়ে আনা গেলেও এখন আবার নতুন করে তা ফিরে আসতে শুরু করেছে।

ষাটের দশকে বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়া রােগীর সংখ্যা কমিয়ে ৭৫ মিলিয়নে নামিয়ে আনা হয়েছিলাে, অথচ এখন তা বেড়ে আবার ৩০০-৫০০ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে কেনাে আবার প্রতি বছর প্রায় বিশ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এই মারাত্মক রােগে? কেনাে আবার নতুন করে ম্যালেরিয়া রােগের প্রকোপ দেখা দিতে শুরু করেছে বিশ্বজুড়ে?
আর কিছুই নয়, এখানেও আমরা দেখছি সেই প্রাকৃতিক নির্বাচনের খেলা। যেমন ধরুণ, চল্লিশের দশকের দিকে ভারতে প্রথমবারের মত ব্যাপকভাবে ডিডিটি ব্যবহার করার পর প্রায় ১০-১২ বছর ম্যালেরিয়া রােগের প্রকোপ একেবারেই কমে গিয়েছিলাে। তারপর কি হল? তারপর এক দশক বাদে দেখা গেলাে, এতে আর কাজ হচ্ছে না, ডিডিটি ছড়ানাের সাথে সাথে, কয়েক মাসের মধ্যেই ডিডিটি প্রতিরােধক মশার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে অকল্পনীয়ভাবে। এখন অবস্থা এমনই দাড়িয়েছে যে, ডিডিটি ছড়ানাের সাথে সাথেই ডিডিটি প্রতিরােধক মশার পাল তৈরি হয়ে যায়।
১৯৫৯ সালের দিকে প্রথমবারের মত ভারতে এই ডিডিটি প্রতিরােধ ক্ষমতাসম্পন্ন মশা দেখতে পাওয়া গেলাে। কিভাবে তাহলে উৎপত্তি হল এই ডিডিটি প্রতিরােধক মশার? সেই একই নিয়মে, বিবর্তনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের পথ ধরেই। সব জীবের মতই মশার মধ্যেও বিভিন্ন ধরণের বৈশিষ্ট্য এবং প্রকারণ রয়েছে। সাধারণ অবস্থায় মশকপুঞ্জের মধ্যে ডিডিটি প্রতিরােধক মশা সংখ্যায় খুব কম থাকে, কোন একধরণের মিউটেশন থেকেই হয়তাে এক সময় এই প্রকারনটির উৎপত্তি হয়েছিলাে।
সাধারন অবস্থায় ডিডিটি প্রতিরােধে অক্ষম অংশটিই প্রকৃতিতে বেশী যােগ্য হিসেবে পরিগণিত হয়, তাই তাদের সংখ্যাও থাকে অনেক বেশী। ডিডিটি ব্যবহার করার সাথে সাথেই এই অংশটি মরে যায় কিন্তু বেঁচে থাকে শুধু সেই সংখ্যালঘু মশাগুলাে যাদের মধ্যে ডিডিটি প্রতিরােধক ক্ষমতা রয়েছে। আর তার ফলে যা হবার তাই হয় – গুটিকয়েক এধরণের মশাগুলােই শুধু প্রাণে বেঁচে যায় যাদের জিনের মধ্যে রয়েছে ডিডিটি প্রতিরােধক ক্ষমতা। এরাই শুধু বংশ বৃদ্ধি করে পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি করে এবং সংখ্যায় ফুলে ফেপে উঠতে থাকে। বেশ কিছু সময় পর স্বভাবতই দেখা যায় যে, মশার নতুন জনপুঞ্জের বেশীরভাগের মধ্যেই ডিডিটি প্রতিরােধক ক্ষমতা রয়েছে এবং যতই ডিডিটি ছড়ানাে হােক না কেনাে তাতে আর কোন কাজ হচ্ছে না।
একই রকম উদাহরণ দেখা যায় জমিতে কীটনাশক ওষুধ প্রয়ােগের ক্ষেত্রেও। বারবার একই ওষুধ জমিতে দিতে থাকলে বেশীরভাগ দূর্বল পােকাগুলাে মরে যায় কিন্তু কীটনাশকের ক্রিয়া প্রতিরােধে সক্ষম কিছু শক্তিশালী পােকা-মাকড় রয়ে যায় বংশবৃদ্ধি করার জন্য। ব্যাকটেরিয়ার মত জমির এই পােকাগুলােও দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। অন্যদিকে ওষুধের কোম্পানীগুলােও দিন দিন আরও কড়া ওষুধ বের করতে থাকে এদেরকে দমন করার জন্য। এর ফলে একসময় দেখা যায় যে, জমিতে খুব বেশী কড়া ওষুধ প্রয়ােগ করা ছাড়া আর কোন কাজই হচ্ছে না। আর অন্যদিকে যত তাড়াতাড়ি আমরা আরও জোড়ালাে কীটনাশক ব্যবহার করি না কেন দেখা যায় তারা খুব কম সময়ের মধ্যেই বিবর্তিত হয়ে প্রতিরােধ ক্ষমতা তৈরি করে ফেলছে।
একটা মজার উদাহরণ দেওয়া যাক এখানে। নিউ ইয়র্কে প্রথমবারের মত যখন আলুর মধ্যে একধরনের গুবড়েপােকা কোলারাডাে পটেটো বিটেল-কে (Leptinotarsa Septemlineata) মারার জন্য ডিডিটি ব্যবহার করা হয় তখন পােকাগুলাের লেগেছিলাে ৭ বছর এর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ ক্ষমতা তৈরি করতে। তারপর তাদেরকে দমন করার জন্য আরও শক্তিশালী Azinphosmethyl যখন জমিতে ছড়ানাে হল তখন তারা একে প্রতিরােধ করার ক্ষমতা অর্জন করে ফেললাে পাঁচ বছরে। এর পরে আরও শক্তিশালী Carbofuran-এর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ ক্ষমতা অর্জন করতে সময় লেগেছিলাে দুই বছর, আর সম্প্রতি অত্যন্ত কড়া কীটনাশক ওষুধ Pyrethroids এর বিরুদ্ধে লেগেছে মাত্র এক বছর।
এভাবে দিনের পর দিন শক্তিশালী কীটনাশক তৈরি করে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের এবং পরিবেশের কি পরিমাণ ক্ষতি করে চলেছি তা বােধ হয় ভেবে দেখার সময় হয়েছে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই পােকা মাকড়, ব্যাকটেরিয়াগুলাে প্রকৃতিতে যেন রাজার হালে রাজত্ব করেছে, কোন ধরনের প্রতিরােধের শিকার হয়নি, তাই তাদের বিবর্তন ঘটেছিলাে অন্য নিয়মে প্রকৃতির খেয়াল খুশী মত। এখনি গত অর্ধ শতাব্দী ধরে বিভিন্ন ধরণের ওষুধ এবং কীটনাশকের সামনে টিকে থাকার দায়ে তারা আমাদের চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে মানুষের সৃষ্ট কৃত্রিম কারণে।
ব্যাকটেরিয়াজনিত অসুখ সারানাের জন্য আমাদের প্রজন্ম আন্টিবায়ােটিককে একধরণের অপ্রতিরােধ্য অস্ত্র হিসেবেই ধরে নিয়েছিলাে, কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার ক্রমাগত বিবর্তনের ফলে তা আজকে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে তা একটু ঝালিয়ে নিলে কিন্তু মন্দ হয় না। যথেচ্ছ ওষুধের ব্যবহারের পরিনতি কি হতে পারে তার এক মােক্ষম উদাহরণ হচ্ছে আমাদের চোখের সামনে ঘটা এই ব্যাকটেরিয়ার বিবর্তন।
ব্যাকটেরিয়ার বিবর্তন, অ্যান্টিবায়ােটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার এবং অপ্রতিরােধ্য ‘সুপার বাগ’
একজন ভাল ডাক্তার অ্যান্টিবায়ােটিক দেওয়ার সময় রােগীকে পই পই করে বলে দেন ওষুধের সবকটি ডােজ যেনাে সে শেষ করে এবং সতর্ক করে দেন তিন চার দিন পর একটু ভালাে লাগলেই ওষুধটা খাওয়া যেনাে ছেড়ে না দেয়। তিন চার দিনের মধ্যে অ্যান্টিবায়ােটিক শরীরের ভিতরের বেশীরভাগ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে বলেই আমরা এত তাড়াতাড়ি সুস্থ বােধ করতে থাকি। এখন যদি হঠাৎ করে কেউ ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেয় তাহলে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী এবং অ্যান্টিবায়ােটিকের প্রতি অনেক বেশী প্রতিরােধ ক্ষমতাসম্পন্ন বাকী ব্যাকটেরিয়াগুলাে আমাদের শরীরের ভিতরে রয়ে যাবে।
এরাই তারপর বংশবৃদ্ধি করবে এবং পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাকটেরিয়ায় তাদের জিনই প্রবাহিত হবে (ব্যাকটেরিয়া কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বংশবৃদ্ধি করে)। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই দেখা যাবে যে সেই রােগী আবার নতুন করে অনেক বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং এইবার আগের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী ওষুধেও আর কাজ হচ্ছে না। প্রথমবার সবটুকু ওষুধ খেলে হয়ত সবগুলাে ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলা সম্ভব হত, এখন হঠাৎ করে ওষুধটা খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার ফলে শুধুমাত্র ওষুধ প্রতিরােধকারী শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়াগুলােকে বাঁচিয়ে রাখা হলাে।
একই পরিণতি লক্ষ্য করা যায় যখন ফ্লু বা ঠান্ডা লাগলে আমরা ডাক্তারকে টেট্রাসাইক্লোন জাতীয় অ্যান্টিবায়ােটিক দেওয়ার জন্য জোড়াজুড়ি করতে থাকি। ইনফ্লুয়েনজা বা ঠান্ডার কারণ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া নয়; আর অ্যান্টিবায়ােটিক শুধুমাত্র ব্যকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এর কোন ভুমিকাই নেই। ফু বা ঠান্ডার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়ােটিক তাে কোন কাজে লাগেই না, বরং আমাদের শরীরের ভিতরের দুর্বল ব্যাকটেরিয়াগুলােকে মেরে ফেলে শক্তিশালী কিছু ব্যাকটেরিয়াকে জিইয়ে রাখতে সহায়তা করে।
তারপর ক্রমশঃ অ্যান্টিবায়ােটিকের প্রতি অনেক বেশী প্রতিরােধ ক্ষমতাসম্পন্ন এই ব্যাকটেরিয়াগুলাে আমাদের শরীরে বংশবৃদ্ধি করে এবং ভবিষ্যতে অসুস্থ হলে আরও কড়া অ্যান্টিবায়ােটিক ছাড়া কোন কাজ হয় না। বাংলাদেশের অনেক ডাক্তারই যে কোন অসুখের চিকিৎসায় অপ্রয়ােজনীয়ভাবে অ্যান্টিবায়ােটিক এবং একাধিক ওষুধ দিয়ে থাকেন। যেনাে ভাবটা হচ্ছে, একটা না একটা ওষুধ তাে কাজ করবেই। কিন্তু এর ফলে রােগীর শরীরে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং ভবিষ্যতে রােগ সারানাের জন্য অনেক কড়া ওষুধের প্রয়ােজন হয়।
এতাে গেলাে একটা দিক, এরই আরেকটা ভয়াবহ দিক নিয়ে বিজ্ঞানীরা আজকাল বেশ দুশ্চিন্তায়ই পড়তে শুরু করছেন বলেই মনে হয়। আপনারা সুপারম্যান, সুপার গার্লের সিনেমা দেখছেন, কিন্তু কখনও কি সুপার বাগ বা সুপার ব্যাকটেরিয়ার নাম শুনেছেন? গত অর্ধ শতাব্দী ধরে অ্যান্টিবায়ােটিকের ব্যাপক ব্যবহার যেমন লক্ষ লক্ষ লােকের প্রাণ বাঁচিয়েছে তেমনিভাবে তারই প্রতিক্রিয়া হিসেবে আজকে দেখা দিচ্ছে ‘সুপার বাগ’।
এমন কিছু ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি হয়েছে যাদের উপর আজকের সবচেয়ে কড়া অ্যান্টিবায়ােটিকটাও আর কাজ করছে না। আমরা যত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়ােটিক ব্যবহার করছি, ততই পাল্লা দিয়ে তারা বিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি ঘটে অত্যন্ত দ্রুত, তাদের মিউটেশনের হারও অত্যাধিক আর তার ফলে তাদের মধ্যে বিবর্তন ঘটতে থাকে অকল্পনীয়ভাবে দ্রুত গতিতে। মানুষের সাথে তুলনা করলে বােঝা যায় কত তাড়াতাড়ি ব্যাকটেরিয়ার বিবর্তন ঘটছে। শিকাগাে ইউনিভারসিটির প্রফেসর রবার্ট ডম একবার বলেছিলেন ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে যে বিবর্তন ঘটতে লাগে ২০ মিনিট মানুষ প্রজাতিতে সেই বিবর্তন ঘটতে লাগে ২০ বছর[৬]।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়মেই অ্যান্টিবায়ােটিকের বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য মিউটেশনের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়ে তারা আজকে এমন অবস্থায় পৌছেছে যে, তারা সব ধরনের ওষুধই প্রতিরােধ করে টিকে থাকতে পারে। জানা গেছে, Staphylococcus Aureus নামের ব্যাকটেরিয়াটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়ােটিক Vancomycin এর বিরুদ্ধেও প্রতিরােধ ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। ডিসকভারি পত্রিকার বিশেষ এক প্রতিবেদনে (Vol 27, No1) দেখা যাচ্ছে যে, ইরাকে যুদ্ধরত প্রায় ৩০০ আমেরিকান সৈন্যের মধ্যে ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশন দেখা দিয়েছে যা কোন প্রচলিত ওষুধ দিয়েই সারানাে যাচ্ছে না, এই ব্যাকটেরিয়াগুলাে বিবর্তিত হয়ে অ্যান্টিবায়ােটিকের বিরুদ্ধে এতখানিই প্রতিরােধ গড়ে তুলেছে যে ডাক্তাররা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন এদের চিকিৎসা করতে। ইতিমধ্যেই ৫ জন সৈন্য মৃত্যবরণ করেছে এই রােগে। ডাক্তাররা ভয় পাচ্ছেন যে জীবাণুগুলাের খুব দ্রুত বিবর্তনের কারণে হয়তাে খুব তাড়াতাড়িই আমরা এদের মােকাবিলা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবাে।
যে টিবি রােগকে পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে গিয়েছিলাে বলে আমরা ধরে নিয়েছিলাম তা এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পুরাে দমে ফিরে এসেছে, রাশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় এখন নতুন করে টিবি রােগের উৎপাত শুরু হয়েছে, যার উপর আগের কোন অ্যান্টিবায়ােটিকই আর কাজ করছে না। ডাক্তাররা এখন রােগীর ফুসফুসের আক্রান্ত টিস্যুগুলােকে কেটে ফেলে দিয়ে রােগ নিরাময়ের চেষ্টা করছেন। আজকে আমেরিকার বিভিন্ন হাসপাতালে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া দেখা দিয়েছে যাদের মধ্যে সবচেয়ে কড়া অ্যান্টিবায়ােটিকের বিরুদ্ধেও প্রতিরােধ ক্ষমতা দেখা দিয়েছে। হাসপাতালগুলােতে স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়ােটিক ব্যবহার করা হয়, ফলে সেখানে ব্যাকটেরিয়াগুলােও বিবর্তিত হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ ক্ষমতা অর্জন করতে থাকে। আজকে হাসপাতালগুলােতে রােগীরা এক রােগ নিয়ে আসছেন আর হাসপাতাল থেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন আরেক ধরনের এই অপ্রতিরােধ্য ব্যাকটেরিয়া দিয়ে।
বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন কামানের গোলার মত অ্যান্টিবায়ােটিককে অস্ত্র হিসেবে যত্রতত্র ব্যবহার না করে বরং এখনি আমাদের প্রয়ােজন বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং অন্যান্য জীবাণুর বিবর্তনের গতিটাকে ঠিক মত বােঝা এবং বিশ্লষণ করা। তার উপর ভিত্তি করে পরিবেশের দূষণ কমানো, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলােতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করা ইত্যাদির মাধ্যমে একসময় হয়তাে আমরা এদের বিবর্তনের গতিটাকেই ঘুড়িয়ে দিতে সক্ষম হতে পারি। তখন হয়তো দেখা যাবে এই জীবাণুগুলাের ক্ষতিকর দিকটা বিবর্তিত হয়ে এতখানিই কমে গেছে যে, এরা আর মানুষের প্রাণহানির কারণ হতে পারছে না[৭]।