আমি এ বইয়ে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নামের নতুন বিজ্ঞানের শাখাটির সাথে বাঙালি পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিতে চেষ্টা করেছি। কতটুকু সফল হতে পারলাম বলা মুশকিল। বিচারের ব্যাপারটা পাঠকদের কাছেই ছেড়ে দিতে চাই; তবে আমি যা করতে চেয়েছি তা হলো আলোচনার একটা সূচনা। আর সেই আলোচনার সূত্র ধরেই বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান সংক্রান্ত আধুনিক গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলো পাঠকদের সামনে নিয়ে আসার প্রয়াস পেয়েছি যথাসম্ভব নির্মোহ দৃষ্টিকোণ থেকে।
কিছু কিছু ব্যাপার বিতর্কিত মনে হতে পারে, মনে হতে পারে এখনও ‘প্রমাণিত’ কোনো বিষয় নয়। আমি তারপরও চেষ্টা করেছি বৈজ্ঞানিক সাময়িকী এবং প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীদের (যারা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ) লেখা থেকে সর্বাধুনিক তথ্যগুলো বস্তুনিষ্ঠভাবে পাঠকদের সামনে হাজির করতে। প্রান্তিক গবেষণালব্ধ জিনিস গ্রন্থাকারে সাধারণ পাঠকদের কথা ভেবে হাজির করলে একটা ভয় সবসময়ই থাকে যে, পরবর্তীতে অনেক কিছুই ভুল হয়ে যেতে পারে। তারপরও এই প্রান্তিক জ্ঞানগুলো আমাদের জন্য জরুরি।
অধ্যাপক স্টিভেন পিঙ্কার তার ‘হাউ মাইন্ড ওয়ার্ক্স’ বইয়ের ভুমিকায় যেমনিভাবে বলেছিলেন — ‘Every idea in the book may turn out to be wrong, but that would be progress, because our old ideas were too vapid to be wrong!’ – আমিও সেকথাই বলার চেষ্টা করব। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বিজ্ঞানের নতুন শাখা। নতুন জিনিস নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রেএর কিছু প্রান্তিক অনুমান যদি ভুলও হয়, সেটাই হবে পরবর্তী বিজ্ঞানীদের জন্য ‘প্রগ্রেস’। আর সেই সংঘাত সংঘর্ষ থেকেই ঘটবে হবে নতুন অজানা জ্ঞানের উত্তরণ।
যে প্রশ্নগুলোর উত্তর মেলেনি
বিবর্তন মনোবিজ্ঞান কোনো আলাদিনের প্রদীপ নয়, তাই এটি সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছে ভাবলে কিন্তু ভুল হবে। যদিও মানবসমাজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্যাটার্নের ব্যাখ্যায় অত্যন্ত সফল অবদান রেখেছে বিবর্তন মনোবিজ্ঞান, কিন্তু আবার সেই সাথে উন্মুক্ত করেছে অজস্র প্রশ্নের ঝাঁপিও। একটি সার্থক বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ধরনই এমন। একটি সার্থক বৈজ্ঞানিক ধারণা কিংবা তত্ত্ব কেবল সমস্যার সমাধানই করে না, সেই সাথে জন্ম দেয় অনেক আকর্ষণীয় প্রশ্নেরও।
বিগ ব্যাঙের ধারণা, আপেক্ষিক তত্ত্বের ধারণা, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা পদার্থবিজ্ঞানের সমস্যাই কেবল সমাধান করেনি, তারা জন্ম দিয়েছে নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নেরও। ভবিষ্যত বিজ্ঞানীরা সেই সব প্রশ্নের সমাধান বের করবেন। কিন্তু তাদের সমাধানও নিঃসন্দেহে জন্ম দিবে অনেক আকর্ষণীয় প্রশ্নের, যেগুলো হবে ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানীদের জন্য গবেষণার অমূল্য খোরাক। এটি চলমান একটি প্রক্রিয়া। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানও সেই পথেই এগুচ্ছে, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে, আবার সূচনা করছে আরও বিস্তৃত কিছু প্রশ্নের প্রেক্ষাপটও।
১৯৯৪ সালে রবার্ট রাইটসের রচিত ‘মরাল এনিম্যাল’ বইটি বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের উপর লেখা অন্যতম একটি ক্লাসিক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত[৩১১]। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজকে বিশ্লেষণ করার পরেও বইটির পরিশিষ্টে এসে রাইটস স্বীকার করেছেন যে, বিবর্তন মনোবিজ্ঞান ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। রাইটসের তৈরি করা ছয়টি প্রশ্ন ছিল এরকম —
১. কেন মানবসমাজে সমকামিতার অস্তিত্ব রয়েছে?
২. কেন ভাই-বোনেরা (এমনকি যমজ সন্তানেরাও) একে অন্যের চেয়ে ভিন্ন আচরণ করে?
৩. কেন অভিভাবকেরা অনেক সময়েই কম সন্তান নেন, এমনকি নিঃসন্তান থাকাকেও শ্রেয় মনে করেন?
৪. কেন মানুষ আত্মহত্যা করে? ৫. কেন মানুষ তার সন্তানকে হত্যা করে? ৬. কেন সৈন্যরা দেশের জন্য প্রাণ দেয়?
রাইটস এ প্রশ্নগুলো করেছিলেন ১৯৯৪ সালে। তারপর থেকে (যখন ২০১১ সালে এ বইটি লিখছি) প্রায় ১৭ বছর পার হয়ে গেছে। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের গবেষণাও এর মধ্যে এগিয়েছে অনেক। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নেরই উত্তর মিলেছে, যদিও কোনো কোনো ব্যাপার এখন রয়ে গেছে রহস্যের বাতাবরণেই। সমকামিতার ব্যাপারটি দিয়েই শুরু করা যাক।
কেন মানবসমাজে সমকামিতার অস্তিত্ব রয়েছে?
১৯৯৪ সালে রাইটস সমকামিতার অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করতে অক্ষম বলে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু তার বইটি প্রকাশের পর থেকে আজ পর্যন্ত সমকামিতার জৈববৈজ্ঞানিক উৎস সন্ধানে বিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু অগ্রগতি সাধন করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ডারউইনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমকামিতাকে ব্যাখ্যা করে[৩১২]। আমি নিজেও সমকামিতার বিবর্তনীয় উৎস অনুসন্ধান করে একটি বই লিখেছি‘সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্বিক অনুসন্ধান’ শিরোনামে[৩১৩]।
বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়টির নামই ছিল ‘বিবর্তনের দৃষ্টিতে সমকামিতা’। অধ্যায়টির ‘ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব কি সমকামিতাকে ব্যখ্যা করতে পারে?’ শিরোনামের একটি অংশে বিবর্তন তত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে সমকামী প্রবৃত্তিকে ব্যখ্যা করার এবং এ সংক্রান্ত আধুনিক গবেষণাগুলোর সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। যেমন, মানুষের মস্তিষ্কে হাইপোথ্যালমাস নামে একটি অঙ্গ রয়েছে, যা মানুষের যৌন প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে।
বিজ্ঞানী সিমন লিভের শরীরবৃত্তীয় গবেষণা থেকে জানা গেছে এই হাইপোথ্যালমাসের Interstitial Nucleus of the Anterior Hypothalamus, বা সংক্ষেপে INAH3 অংশটি সমকামীদের ক্ষেত্রে আকারে অনেক ভিন্ন হয়। আরেকটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ডিন হ্যামারের সাম্প্রতিক তথাকথিত ‘গে জিন’ সংক্রান্ত গবেষণা থেকে। ডিন হ্যামার তার গবেষণায় আমাদের ক্রোমোজমের যে অংশটি (Xq28) সমকামিতা ত্বরান্বিত করে তা শনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন[৩১৪]।
শুধু তাই নয়, ডিন হ্যামারের গবেষণা থেকে জানা গেছে সমকামী প্রবণতা খুব সম্ভবত মায়ের দিক থেকেই জেনেটিকভাবে প্রবাহিত হয়[৩১৫]। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীদের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও বেরিয়ে এসেছে, যে জেনেটিক প্রভাব মেয়েদের উর্বরা শক্তি বাড়ায়সেই একই জিন আবার ছেলেদের মধ্যে সমকামী প্রবণতা ছড়িয়ে দেয়বিবর্তনের উপজাত হিসেবে[৩১৬]। তার মানে জৈববৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমকামিতার অস্তিত্বের রহস্য হয়তো খুব একটা জটিল কিছু নয়, যার ব্যাখ্যা ডীন হ্যামার দিয়েছেন সহজ একটি বাক্যে[৩১৭] —
The answer is remarkably simple : the same gene that causes men to like men, also causes women to like men, and as a result to have more children
যদিও এ সংক্রান্ত গবেষণার বেশ কিছু জায়গা এখনও বিতর্কিত এবং অমীমাংসীত, কিন্তু তারপরেও সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো থেকে পাওয়া ফলাফল থেকে রহস্যের জট ক্রমশ খুলে যাচ্ছে বলেই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
কেন ভাই-বোনেরা (এমনকি যমজ সন্তানেরাও) একে অন্যের চেয়ে ভিন্ন আচরণ করে?
রাইটসের দ্বিতীয় প্রশ্নটি সন্তানেরা একই জেনেটিক উৎস থেকে আসার পরেও কেন ভিন্ন আচরণ করে এটিও ১৯৯৪ সালে ছিল একেবারেই অমীমাংসিত একটি প্রশ্ন । কিন্তু এখন এ প্রশ্নের উত্তর অনেকটাই জানা হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত ফ্র্যাঙ্ক জে. সালওয়ের লেখা ‘বিদ্রোহের জন্য জন্ম’[৩১৮] (১৯৯৪) এবং পরবর্তীতে জুডিথ হ্যারিসের লেখা ‘পরিবেশ অনুজ্ঞা – ‘কেন সন্তানেরা তাদের মতো করেই বেড়ে উঠে’[৩১৯] (২০০৯) শিরোনামের বই দুটো এ ব্যাপারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
সালওয়ে তার বইয়ে দেখিয়েছেন, ‘পিতা মাতার চোখে সব সন্তানই সমান’এই আপ্তবাক্য খুব সাধারণভাবে সমাজে আউড়ে যাওয়া হলেও জৈবিকভাবে ব্যাপারটি কিন্তু এত সরল নয়। প্রথম সন্তান আগে জন্মানোর ফলশ্রুতিতে পিতামাতার যত্ন (Parental Care) অনেক বেশি উপভোগ করে, তার পরবর্তী ভাই বোনদের তুলনায়। অর্থাৎ অগ্রজের সম্পদের আহরণ এবং ব্যাবহারের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই অনুজদের চেয়ে বেশি হয়। তার প্রভাব পড়ে অগ্রজ-অনুজের অর্জিত ব্যবহারে।
সেজন্য প্রায়ই দেখা যায় বড় সন্তানেরা হয় বাধ্য এবং অনুগত; সংসারের হাল ধরার জন্য কিংবা সংসারের ভিত্তি হিসেবে সবার বড় ছেলে বা মেয়ের উপরেই বাবা মা বেশি নির্ভর করেন, আর অন্যদিকে সহজাত কারণেই পরবর্তী সন্তানদের থেকে বাবা মার একটা অলিখিত দূরত্ব এমনিতেই তৈরি হয়ে যায়। আর সেজন্য প্রথম সন্তান সময়ের সাথে সাথে সাধারণত প্রথাগত, এবং সব দিক রক্ষা করে চলা সমঝদার ব্যক্তিত্ব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং একই সংসারের পরবর্তী সন্তানদের অনেকে হয়ে উঠে ‘বিদ্রোহী’।
সালওয়ে তার বইয়ে ইতিহাস থেকে অজস্র দৃষ্টান্ত তুলে এনে দেখিয়েছেন সংসারের প্রথম সন্তান আত্ম প্রকাশ করেছে পুরনো রীতি বা প্রথা মানা ‘কনজারভেটিভ ভ্যানগার্ড’ হিসেবে, অন্যদিকে বিভিন্ন নতুন বিপ্লবের কিংবা সমাজ পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন সংসারের অনুজ সন্তানেরা। কাজেই একই জেনেটিক উৎস থেকে আসা সত্ত্বেও কেবল জন্মের ক্রমের পার্থক্যের কারণে কালক্রমে বিভিন্ন সন্তানের ভিন্ন ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়।
অন্যদিকে জুডিথ হ্যারিস তার ‘পরিবেশ অনুজ্ঞা- কেন সন্তানেরা তাদের মতো করেই বেড়ে উঠে’ নামক বইয়ে ‘সন্তানের বেড়ে উঠার পেছনে পিতামাতাই কেবল দায়ী’ সামাজিকভাবে প্রচলিত ধারণাটি পদ্ধতিগতভাবে খণ্ডন করেছেন। হ্যারিসের মতো হলো শিশুর বেড়ে ওঠার পেছনে পিতামাতার দেয়া বাড়ির পরিবেশের চেয়ে বন্ধুবান্ধব সঙ্গী সাথীদের পরিবেশই জোরালো ভূমিকা রাখে।
পিতামাতার দেয়া পরিবেশ যা একটি শিশু অন্য ভাইবোনদের সাথে মিলিতভাবে উপভোগ করে, তাকে বলা হয় বণ্টিত পরিবেশ (Shared Environment), আর স্কুলে, আড্ডায়, খেলার মাঠে কিংবা মহল্লা এবং অন্যত্র সঙ্গীসাথীদের কাছ থেকে যে পরিবেশ শিশুটি পেয়ে থাকে তাকে বলে অবণ্টিত পরিবেশ (Non Shared Environment)। হ্যারিসের মতে শিশুটির মানসজগৎ তৈরিতে বণ্টিত পরিবেশের চেয়ে অবণ্টিত পরিবেশই মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
হ্যারিসের বইটি স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতিবিদ এবং সমাজবিদদের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হলেও আচরণ বংশগতিবিদ্যা থেকে পাওয়া বেশ কিছু সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল হ্যারিসের অনুকূলেই গিয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন[৩২০]। অবণ্টিত পরিবেশ অনেক সময়ই যে বণ্টিত পরিবেশের চেয়ে বড় হয়ে যায় তা আমার জীবনেই স্পষ্ট। আমার নিজের জীবনের দিকে তাকালে এখন মনে হয় মানস জগৎ গঠনে আমি মনে করি আমার বাবা মার দেয়া পরিবেশের চেয়ে বাইরের পরিবেশের অবদানই বেশি ছিল।
একটা ছোট উদাহরণ দেই। আমার মা বড় হয়েছিলেন কুমিল্লায়, আর আমার বাবা দিনাজপুরে। বাসায় গ্রাম থেকে আত্মীয় স্বজন যে কম আসতেন তা নয়। অথচ আমার উচ্চারণে কুমিল্লা বা দিনাজপুরের কোনো ছোঁয়া ছিল না কখনোই। আমি ঢাকায় বড় হবার কারণে, এবং স্কুলে বাসায় আড্ডায় ঢাকার বন্ধুদের সাথেই মেলামেশার কারণে সেই ভাষাটিই আমি রপ্ত করে ফেলেছিলাম ছোটবেলা থেকে। আমার স্ত্রী বন্যারও তাই। বন্যার বাবার কথায় ময়মনসিংহের টান থাকলেও বন্যার সেটা ছিল না। এ ব্যাপারগুলো সবাই মোটামুটি জানেন- ভাষা উচ্চারণ বাচনভঙ্গির ব্যাপারগুলো মানুষ অভিভাবকদের থেকে শেখে না, শেখে কাছের বন্ধুবান্ধবদের সাথে মেলামেশা করে।
এ ব্যাপারটা আরও ভালো করে আমি বুঝেছি আমাদের মেয়ে তৃষার ক্ষেত্রে। আমেরিকায় বড় হবার কারণে তৃষা ছোটবেলা থেকেই পরিষ্কার আমেরিকান ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছে, আমাদের মতো বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী অভিভাবকদের উচ্চারণগত সীমাবদ্ধতাকে এক ফুঁ দিয়ে অতিক্রম করেই।
হ্যারিস মনে করেন, শিশুদের এই ভাষা এবং বাচনভঙ্গি শেখার ব্যাপারে যেটা সত্য, সেই সত্যতা আছে প্রায় সবকিছুতেই। এই অবণ্টিত পরিবেশ বা ‘নন-শেয়ার্ড এনভায়রনমেন্ট’ হচ্ছে আরেকটি কারণ, যার ফলে আমরা বুঝতে পারি ছেলেমেয়েরা একই পারিবারিক পরিবেশে বড় হবার পরেও কেন তারা চিন্তায় চেতনায় প্রায়শই ভিন্নতর হয়ে থাকে। অবশ্য মিডিয়ায় যেভাবে হ্যারিসের বইয়ের সমালোচনা করে দেখানো হয়েছে যে হ্যারিস সন্তানের পরিচর্যায় পিতামাতার ভূমিকা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন-ব্যাপারটা ঠিক সেরকম ছিল না।
পিতামাতার ভূমিকা অবশ্যই আছে, এবং সেটি কেবল বাসার পরিবেশের জন্য নয়, সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ জেনেটিক কারণেও। শিশু তার পিতামাতার কাছ থেকেই শতভাগ জিন পেয়ে থাকে। জেনেটিক তথ্য হিসেবে পিতামাতার কাছ থেকে যে তথ্য সে পেয়ে থাকে তা জৈবিক কারণেই তা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হ্যারিস যেটা বলতে চেয়েছেন, তা হলো পিতামাতা যে অবণ্টিত পরিবেশ তার সন্তানদের জন্য বরাদ্দ করেন, তার চেয়ে শিশুটি যে অবণ্টিত পরিবেশ খুজে পায় সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে বেশি।
ভালোবাসা কারে কয়
৩১১.↑ Robert Wright, The Moral Animal: Why We Are, the Way We Are: The New Science of Evolutionary Psychology, Vintage, 1994)
৩১২.↑ সাম্প্রতিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই
৩১৩.↑ অভিজিৎ রায়, সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান, শুদ্ধস্বর, ২০১০
৩১৪.↑ Dean Hamer and Peter Copeland, The Science of Desire: The Search for the Gay Gene and the Biology of Behavior, Touchstone, 1991
৩১৫.↑ Simon Levay and Dean H. Hamer, Evidence for a Biological Influence in Male Homosexuality, Scientific American, May 1994.
৩১৬.↑ Corna, F., A. Camperio-Ciani and C. Capiluppi, 2004. Evidence for maternally inherited factors favouring male homosexuality and promoting female fecundity. Proceedings: Biological Sciences 271: 2217-2221.
৩১৭↑, ৩১৮.↑ Frank J. Sulloway, Born to Rebel: Birth Order, Family Dynamics, and Creative Lives, Vintage , September 2, 1997
৩১৯.↑ Judith Rich Harris, The Nurture Assumption: Why Children Turn Out the Way They Do, Free Press; Rev Upd edition , 2009
৩২০.↑ David C. Rowe, The Limits of Family Influence: Genes, Experience, and Behavior, The Guilford Press;, 1995