ইন্দোনেশিয়ার ছোট্ট দ্বীপ ফ্লোরস (Flores)। এখানকার অধিবাসীরা অন্যান্য সব জাতির মতই কাজ করে, খায় দায়, ফুর্তি করে আর অবসর সময়ে গল্পগুজব করে। এখানকার বুড়ােবুড়িরা আমাদের দাদী-নানীদের মতই ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ সাজিয়ে বসে নাতি-নাতনীদের কাছে – হাজার বছরের মুখে মুখে চলে আসা উপকথাগুলােকে বলে যায় তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। কিন্তু এদের ঠাকুরমার ঝুলিগুলাে যেন কেমনতর অদ্ভুত! লালকমল-নীলকমল আর দেও-দৈত্য নেই ওতে, আছে কতকগুলাে ক্ষুদে বামনদের গল্প।
মাত্র এক মিটারের মত লম্বা বেটে লিলিপুটের মত একধরনের মানুষ অনেক অনেকদিন আগে তাদেরই আশে পাশে নাকি বাস করতাে, যা সামনে পেতাে তাই মুখে দিতাে, তাদের ফসল নষ্ট করতাে, নিজেদের মধ্যে ফিস ফিস করে কথা বলতাে আর যা শুনতাে তাই নাকি নকল করার চেষ্টা করতাে। এমনি একজন ক্ষুদে বামনের নাম ছিল এর গােগাে (এবু মানে নানী আর গােগাে মানে এমন কেউ যে যা সামনে পায় তাই খায়), তাকে খেতে দিলে সে খাওয়ার বাসনটা পর্যন্ত খেয়ে ফেলতাে, সুযােগ পেলে নাকি মানুষের মাংসও খেতে দ্বিধা করতাে না [১]……
দ্বীপবাসীদের বলা গল্পগুলাে শুনলে মনে হয় যেনাে এই সেদিনই তারা সবাই একসাথে বসবাস করতাে। নিছক রূপকথা ভেবেই বেঁটে-বাটুলদের গল্পগুলাে সবাই উড়িয়ে দিয়েছিলাে এতদিন। অবাক এক কান্ড ঘটলাে ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে। বিজ্ঞানীরা ফ্লোরদ্বীপেরই মাটি খুড়ে পেলেন এক মিটার লম্বা এক মানুষের ফসিল-কঙ্কাল; প্রথমে সবাই ভেবেছিলাে হয়তাে কোন বাচ্চার ফসিল হবে বুঝি এটা। কিন্তু তারপর ঠিক ওটারই কাছাকাছি জায়গায়ই পাওয়া গেলাে আরও ছয়টি একই রকমের অর্ধ-ফসিলের কঙ্কাল।
বিজ্ঞানীরা আরও পরীক্ষা করে বুঝলেন এগুলাে আসলে পূর্ণাংগ মানুষেরই কঙ্কাল, কার্বন ডেটিং থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জানা গেলাে, মানুষের এই নব্য আবিষ্কৃত প্রজাতিটি (প্রজাতি হল এমন কিছু জীবের সমষ্টি যারা শুধু নিজেদের মধ্যে প্রজননে সক্ষম, যেমন ধরুন আমরা অর্থাৎ আধুনিক মানুষ বা Homo sapiens একটি প্রজাতি যারা আর কোন প্রজাতির জীবের সাথে প্রজননে অক্ষম – আরও অন্যান্য প্রজাতির মানুষের ফসিল পাওয়া গেলেও আমরা একটাই প্রজাতি যারা এখনও টিকে আছি) মাত্র ১২,০০০-১৪,০০০ বছর আগেই এই দ্বীপটিতে বসবাস করতাে। ১২,০০০ বছর আগে এই দ্বীপে এক ভয়াবহ অগ্নৎপাত ঘটে, বিজ্ঞানীরা মনে করছেন হয়তাে দ্বীপের অন্যান্য অনেক প্রাণীর সাথে এরাও সে সময়ে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিলাে।
বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে তারা আমাদের হােমিনিড (মানুষ এবং নরবানর বা Ape man কে Hominid গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ধরা হয়) গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত হলেও তাদের চোয়াল এবং মস্তিষ্কের মাপ আমাদের মত আধুনিক মানুষের মত নয়। উচ্চতায় মাত্র ১ মিটার কিন্তু হাতগুলাে অপেক্ষাকৃতভাবে বেশ লম্বাটে যা থেকে মনে হয় তারা তখনও অনেকটা সময় হয়তাে গাছে গাছেই কাটাতাে। তাদের মাথার মাপ আবার খুবই ছােট – মাত্র ৩৮০ সিসি (কিউবিক সেন্টিমিটার), যেখানে আমাদের বা আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের মাপ হচ্ছে গড়ে প্রায় ১৩৩০ সিসি। এত ছােট মগজ নিয়ে। আধুনিক মানুষের মত অস্ত্র বানিয়ে শিকার করে খাবার সংগ্রহের মত বুদ্ধি কি ছিলাে তাদের, নাকি গাছের ডালে ঝুলে ঝুলেই তারা সময় কাটাতে বানর আর শিম্পাঞ্জিদের মত? এই প্রশ্নেরও উত্তর মিললাে যখন তাদের ফসিলের পাশে ১২,০০০-৯৫,০০০ বছরের পুরনাে বেশ কিছু পাথুরে অস্ত্র পাওয়া গেল যা কিনা শুধুমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণীর পক্ষেই বানানাে সম্ভব।

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন সম্ভবত অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মানুষের আরেকটি প্রজাতি Homo erectus এর একটি দল এই দ্বীপে এসে বসবাস করতে শুরু করে। হাজার হাজার বছর ধরে অত্যন্ত ছােট এই দ্বীপটিতে বিচ্ছিন্নভাবে বাস করার ফলে তারা বিবর্তিত হতে হতে একসময় ভিন্ন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। তাদের ফসিলের আশে পাশে এক ধরনের বামন হাতি এবং কমডাে ড্রাগন সহ অন্যান্য বেশ কিছু প্রাণীর ফসিলও পাওয়া গেছে[২]।
এই নব্য আবিস্কৃত ক্ষুদে বামনগুলাে (Hobbit) বিজ্ঞানীদেরকে বেশ অবাক করেছে। এদের কারণে মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে তারা আবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। এই যে এতদিন ধরে আমরা ভেবে এসেছি যে সাম্প্রতিক কালে আমরা ছাড়া মানুষের আর কোন প্রজাতি পৃথিবীতে ছিল না – সেটা তাে আর তাহলে সত্যি নয়। ইউরােপের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাওয়া নিয়ান্ডারথালদের (Neanderthal) ফসিল দেখে প্রথমে বিজ্ঞানীরা তাদেরকে আমাদের একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, কিন্তু তারপর বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিশেষ করে ডিএনএ (DNA)র পরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে তারাও আসলে আমাদের Homo sapiens প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত নয় [৩]।
প্রায় ১৫০ থেকে ৩০ হাজার বছর আগে পর্যন্ত তারা একটি ভিন্ন প্রজাতি হিসেবে বিচরণ করেছে পৃথিবীর বুকে। হয়তাে আমাদের পূর্বপুরুষেরাই ইউরােপ দখল করে নেওয়ার সময় তাদেরকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে বাধ্য করেছিলাে। কিন্তু সে তাে হল ৩০-৪০ হাজার বছর আগের কথা, তারপর তাে মানুষের আর কোন প্রজাতির সাথে আমাদেরকে এই পৃথিবী ভাগ করে নিতে হয়নি। কিন্তু এই বামন মানুষদের এতাে সাম্প্রতিক কালে টিকে থাকার প্রমাণ মেলার পর বিজ্ঞানীরা ভাবতে শুরু করেছেন তাহলে হয়তাে আরও কাছাকাছি সময়েও মানুষের একাধিক প্রজাতি টিকে ছিলাে[৩]।
বানর, বিড়াল, কুকুর বা অন্যান্য প্রাণীর মত মানুষেরও আরও প্রজাতি ছিলাে, ভাবতেও অবাক লাগে এই পৃথিবীর বুকে প্রায় আমাদের মতই দেখতে একাধিক প্রাণী হেটে বেড়িয়েছে একই সাথে। শুধু তাই তাে নয়, জীববিজ্ঞান, অনুজীববিজ্ঞান সহ। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার অভুতপুর্ব উন্নতির ফলে বিজ্ঞানীরা মানুষের পূর্বসুরী প্রজাতিগুলােকেও সনাক্ত করতে পেরেছেন, তারা আজকে সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন যে এক ধরনের নর বানর বা এপ থেকে আসলে মানুষের বিবর্তন ঘটেছে, এদের সাথে আমাদের ডিএনএ’র প্রায় ৯৮.৬% মিল রয়েছে।
এ তাে গেলাে আমদের নিজেদের কথা, এবার চোখ ফিরানাে যাক আমাদের প্রিয় বাসভুমির দিকে। আমাদের মহাবিশ্বের উদ্ভব ঘটেছিল প্রায় ১৩-১৫ শ কোটি বছর আগে, আর পৃথিবীসহ আমাদের সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহের উৎপত্তি ঘটে সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে। তারপর আরও একশ কোটি বছর লেগেছে আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহটির মহাপ্রলয়ঙ্করী উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরির মত অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে প্রাণের উৎপত্তির জন্য উপযুক্ত একটা পরিবেশ তৈরী করতে। এখন পর্যন্ত পাওয়া সব বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্য প্রমাণ অনুযায়ী বলা যায় পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি হতে শুরু করেছে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি বছর আগে।
আমরা আজকে আমাদের চারপাশে প্রাণ বলতে যা বুঝি বা দেখি তার সাথে সেই আদিমতম প্রাণের কিন্তু কোন মিলই ছিল না – প্রাণ বলতে ছিল অতি সরল আনুবীক্ষণিক এবং আদিম একধরনের অকোষীয় জীবন। গঠনের দিক থেকে এরা আজকের দিনের ব্যাকটেরিয়ার থেকেও অনেক বেশী সাধারণ এবং সরল। দেখতে যেমনই বা যত আনুবীক্ষনিকই হােক না কেন এদেরকে জীবন্ত বলে। স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া কোন উপায়ও নেই! এরা তাে জীবের মৌলিক দুটো বৈশিষ্ট্যই ধারণ করে যা কোন জড় পদার্থের মধ্যে থাকা সম্ভব নয় – এরা একদিকে যেমন বাইরের পরিবেশ থেকে সক্রিয়ভাবে শক্তি সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে, বড় হয় এবং বদলায়, তেমনিভাবে আবার বংশবৃদ্ধি করে নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধিও করতে পারে। আর সাড়ে তিনশ কোটি বছর আগে এই আদিম এবং সরলতম জীবগুলাে থেকেই শুরু প্রাণের বিকাশ এবং বিবর্তনের ইতিহাস। কোটি কোটি বছর ধরে ঘটে আসা বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সরলতম এক কোষী প্রাণ থেকেই উদ্ভব ঘটেছে আমাদের চারপাশের মানুষ সহ অন্যান্য সব জীবের।
বিবর্তনের এই দীর্ঘ ইতিহাসের বইয়ের কোন পাতায় তাহলে মানুষের দেখা মিললাে? এক্কেবারে শেষের দিকের পাতায় এসে আমরা খুঁজে পাই মানুষ নামের আমাদের এই আধুনিক প্রজাতিটির এবং তার পূর্বপুরুষদের সন্ধান। ৪০-৮০ লাখ বছর আগে এক ধরনের বানর প্রজাতি দুই পায়ের উপর ভর করে দাঁড়াতে শিখলেও তার থেকে আমাদের অর্থাৎ আধুনিক মানুষের উদ্ভব ঘটেছে মাত্র এক লাখ বছর আগে। ভূতাত্ত্বিক নিয়মে হিসাব করলে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বের ব্যাপারটা এক্কেবারে আনকোরা। ধরা যাক, পৃথিবীর বয়স একদিন বা ২৪ ঘন্টা, তা হলে মানুষ নামের এই তথাকথিত ‘সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিটির’ জন্ম হয়েছে ২৪ ঘন্টা ফুরানোর মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে!
তাহলে এখন স্বভাবতই আমাদের মনে প্রশ্ন আসে, এই যে ছােটবেলা থেকে আমাদের মুরুব্বী, প্রচারযন্ত্র, ধর্ম প্রতিষ্ঠানগুলাে মানুষের উৎপত্তি নিয়ে যে সব গাল-গল্প শিখিয়ে এলাে তার সাথে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত আমাদের উৎপত্তি এবং বিবর্তনের তত্ত্বের কোন মিল নেই কেনাে? কারণ, কদিন আগেও মহাবিশ্ব বা প্রাণের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে তা বােঝার জন্য যে বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ প্রয়ােজন তা মানুষের জানা ছিলাে না, ছিল না কোটি কোটি বছরের ইতিহাসকে বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা। কিন্তু নিজের ‘সৃষ্টি-রহস্য নিয়ে কৌতুহলের তাে কোন অন্ত ছিল না সেই সময়ের আদি থেকেই।
তাই এই ‘সৃষ্টি-রহস্য’ নিয়ে প্রত্যেক জাতির মধ্যে সেই প্রাচীন কাল থেকেই রচনা করা হয়েছে নানা ধরনের কল্প-কাহিনী, ইংরেজীতে যেগুলােকে বলে ‘Myth’। ধর্মগ্রন্থগুলােসহ বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতাগুলাে প্রত্যেকে তাদের তদানীন্তন স্থানীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস, সময় এবং জ্ঞানের স্তর অনুযায়ী একেক ধরনের গল্পের অবতারণা করেছে। হিন্দু পুরাণ বলছে, মহাপ্রলয়ের শেষে এই জগৎ যখন অন্ধকারময় ছিল, তখন বিরাট মহাপুরুষ পরম ব্রহ্ম নিজের তেজে সেই অন্ধকার দূর করে জলের সৃষ্টি করেন, সেই জলে সৃষ্টির বীজ নিক্ষিপ্ত হয়। তখন ওই বীজ সুবর্ণময় অন্ডে পরিণত হয়। অন্ড মধ্যে ওই বিরাট মহাপুরুষ স্বয়ং ব্রহ্মা হয়ে অবস্থান নিতে থেকেন।
তারপর ওটিকে বিভক্ত করে আকাশ ও ভূমন্ডল আর পরবর্তীতে প্রাণ সৃষ্টি করেন। বাইবেল এবং কোরাণ বলছে, সৃষ্টিকর্তা ছয় দিনে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরী করেছিলেন। বাইবেলের (জেনেসিস) ধারণা অনুযায়ী ছয়দিনের প্রথম দিনটিতেই ঈশ্বর আমাদের এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেন। এর তিনদিন পর তিনি সূর্য, চন্দ্র আর তারকারাজির সৃষ্টি করেন – আর এ সব কিছুই তিনি তৈরী করেছিলেন মাত্র ছ’হাজার বছর আগে। আবার প্রাচীন চৈনিক একটি কাহিনী থেকে আমরা জানতে পারি, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির শুরুতে একটা কালাে ডিমের মত ছিল। প্যান গু নামের একজন দেবতা তাঁর কুড়ালের কোপে ডিমটিকে দ্বিখন্ডিত করেন এবং মহাবিশ্বকে প্রসারিত হবার সুযােগ করে দেন। প্যান গুর শরীরের মাছি আর উকুন থেকেই নাকি পরবর্তীতে মানব সভ্যতার জন্ম হয়েছে।
আবার আ্যাপাচি মিথ অনুযায়ী, সৃষ্টির শুরুতে আসলে কিছুই। ছিল না – না ছিল এই পৃথিবী, আকাশ কিংবা কোন সূর্য -চন্দ্র-তারা। এই তমসাচ্ছন্ন নিকষ অন্ধকার থেকে হঠাৎ করেই একটি পাতলা চাকতির অভ্যুদয় ঘটে, যেখানে আসীন ছিলেন এক ‘দাঁড়ি ওয়ালা ভদ্রলােক’ – যিনি এ জগতের মালিক, আমাদের বিশ্বপিতা! তিনিই নিজের ইচ্ছায় জগৎ থেকে শুরু করে প্রাণ পর্যন্ত সব কিছুই সৃষ্টি করেন ……মানুষের উৎপত্তি নিয়ে এমনতর হাজারাে গল্পের সন্ধান পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় এবং ধর্মগ্রন্থে [৯]।
আসলে আঠারাে শতকের শেষভাগ থেকেই মানুষ বুঝতে শুরু করে এই কল্পকাহিনীগুলাে নিয়ে পড়ে থাকলে আর চলবে না, কারণ বৈজ্ঞানিকভাবে পাওয়া তথ্য-প্রমাণগুলাে ইতিমধ্যেই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে শুরু করেছে যে, মহাবিশ্বের অন্য সব কিছুর মতই আমাদের এই পৃথিবীও ক্রমাগতভাবে পরিবর্তিত হতে হতে অবশেষে আজকের জায়গায় এসে পৌঁছেছে। এই কোটি কোটি বছরের ইতিহাস হচ্ছে ছােট, বড়, ধীর, ক্রমাগত থেকে শুরু করে অত্যন্ত নাটকীয় এবং অকস্মাৎভাবে ঘটা পরিবর্তন, বিকাশ আর বিবর্তনের ইতিহাস, যা আসলে আজও আমাদের চারপাশে ঘটে চলেছে অনবরত।
পৃথিবীর মাটির বিভিন্ন স্তরে জমে থাকা বিভিন্ন প্রাণী এবং উদ্ভিদের ফসিল থেকে আমরা এই পরিবর্তনের নিদর্শন দেখতে পাই। জীবের ডিএনএ বিশ্লেষণ করেও পাওয়া যাচ্ছে একই তথ্য। মানুষসহ পৃথিবীতে অন্যান্য প্রাণের উৎপত্তি, অস্তিত্ব, টিকে থাকার ইতিহাস বুঝতে হলে এই সুদীর্ঘ পরিবর্তনের ইতিহাসকে বৈজ্ঞানিকভাবে বুঝতে হবে; অজ্ঞতা, কুসংস্কার, প্রাচীন এবং অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে পৃথিবীকে বিশ্লেষণ করতে শিখতে হবে।
বিবর্তনের পথ ধরে
১.↑ Villagers speak of the small, hairy Ebu Gogo, 2004, The Telegraph ↑
২.↑ Q&A: Indonesian hominid find, BBC News, 2004 ↑
Flores Man, Nature online news ↑
‘Hobbit’ joins human family tree, BBC News ↑
Moris D, Eton or the zoo? BBC News, 2004 ↑
৩.↑ Rincon P, Neanderthals not close family, BBC News, 2004 ↑
৯.↑ আইডি নিয়ে কূটকচালি, পড়শী মাসিক পত্রিকা ,অভিজিৎ রায়, মুক্তমনা, ২০০৫ ↑