বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে ল্যাবরেটরিতে কি কখনও প্রাণ তৈরি করতে পারবে? এই প্রশ্নের সঠিক জবাব দেওয়া আজকের দিনের বিজ্ঞানীদের জন্য একটি মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের জবাব দিতেই ওপারিন ও হালডেন প্রস্তাবিত জীবনের রাসায়নিক বিবর্তনের অনুকল্পটির সত্যতা যাচাই করা বেশ জরুরী একটি ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল একটা সময়।
ইউরে-মিলারের ঐতিহাসিক পরীক্ষাটি নিঃসন্দেহে জীবনকে বৈজ্ঞানিকভাবে বুঝবার ক্ষেত্রে একটি বড় অর্জন। এই পরীক্ষার ফলাফল থেকেই আমরা জেনেছি কৃত্রিমভাবে কোন জীবন বা জীবকোষ তৈরী করা এখনও সম্ভব না হলেও অনেক সরল অজৈব অণু (H,, NH3, CH4, H,0, HCN প্রভৃতি) থেকে কোষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদানসমূহ তৈরী করা সম্ভব হয়েছে, ল্যাবরেটরীতেই। পাঠকদের মনে থাকবার কথা যে, মিলারের পরীক্ষায় বিক্রিয়া ঘটানাের জন্য সরবরাহ করা হয়েছিল বিদ্যুৎ প্রবাহ, অতিবেগুনী আলাে, উচ্চ শক্তির বিকিরণ আর তাপ (চতুর্থ অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।
এগুলাে সবই কিন্তু আদিম পৃথিবীতে ছিল। কাজেই আদিম বিজারকীয় পরিবেশে অজৈব পদার্থ থেকেই জৈবপদার্থ উন্মেষের ধারণাটিকেই প্রাণ সৃষ্টি প্রাথমিক ধাপের ক্ষেত্রে সবচাইতে গ্রহণযােগ্য ব্যাখ্যা হিসেবে বিজ্ঞানীরা গ্রহন করে নিয়েছেন, যদিও মহাকাশ থেকে অন্য কোন উপায়ে পৃথিবীতে প্রাণের আগমন ঘটার সম্ভাবনাকে (যেটিকে প্যানস্পারমিয়া নামে অভিহিত করা হয়) তারা বাতিল করে দেন নি ✪ । এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী মিলারের ১৯৯৬ সালের অক্টোবর মাসের একটি সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা মনে হয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না। সাক্ষাৎকারে ডঃ মিলার বলছেন (Henahan, 1996) :
আমরা সত্যই জানিনা আমাদের পৃথিবী তিনশ বা চারশ কোটি বছর আগে ঠিক কেমন ছিল। কাজেই সেখানে নানা ধরনের অনুমান আর কল্পনার অবকাশ থাকতে পারে। বড় অনিশ্চয়তা হচ্ছে সে সময়কার পৃথিবীর পরিবেশ নিয়ে। মূল বিবাদটা এখানেই। পঞ্চাশ দশকের প্রথমার্ধে হ্যারল্ড ইউরে অভিমত দিলেন যে, আদি পৃথিবীর পরিবেশ সম্ভবত বিজারকীয় ছিল। কারণ, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুনসহ সৌরজগতের অন্যান্য সকল গ্রহের পরিবেশই এরকম।
যদিও ওই আদি পরিবেশের গাঠনিক উপাদান নিয়ে বিতর্ক আছে, কিন্তু আমরা দেখিয়েছি যে হয় আপনাদের হাতে আদিতে বিজারকীয় পরিবেশ থাকতে হবে, নতুবা আপনি জীবন গঠনের জন্য কোন জৈব যৌগ পাবেন না। যদি আপনি ওগুলাে পৃথিবীতে তৈরী না করেন, আপনাকে তাহলে ধুমকেতু, উল্কা কিংবা ধূলিকণার উপর নির্ভর করতে হবে। কিছু পদার্থ যে ওগুলাের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছিল তা সত্যি। কিন্তু আমার মতে এ ধরনের উৎস হতে পাওয়া পরিমাণ এতােই কম যে তা জীবনের উৎপত্তি ঘটানাের জন্য যথেষ্ট নয়।
ইউরে-মিলারের পরীক্ষাটি নিঃসন্দেহে একটি বড় মাইল ফলক, জীবনকে বুঝবার জন্য, জীবনের বস্তুবাদী ধারণাটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবার জন্য। কিন্তু এ পরীক্ষার ফলাফলই শেষ কথা নয়। কারণ, জৈব অণুগুলাে জীবন গঠনের প্রথমিক উপাদান হতে পারে, কিন্তু কোন ভাবেই ‘জীবন’ নয়। জীবনকে বুঝবার জন্য, মানে জীবনের প্রক্রিয়াটিকে উপলব্ধি করবার জন্য বিজ্ঞানীরা তাই ল্যাবরেটরীতে বিভিন্ন পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন, যেগুলােকে ইংরেজীতে বলে ‘সিমুলেশন এক্সপেরিমেন্ট’।
এই সিমুলেশন এক্সপেরিমেন্টগুলাে আমাদের সামনে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষনীয় সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে; যেমন, জাগিয়ে তুলেছে নিউক্লিয় এসিডের উপাদান কিংবা এডেনােসাইন ট্রাইফসফেট (এটিপি) তৈরি হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনাকে – যেগুলাে আসলে কাজ করে জীবজগতে শক্তির আধার হিসেবে। অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন যে, জীবন বা জীবনের ভিত্তিপ্রস্তর আসলে প্রকৃতির বিভিন্ন ধরনের সিমুলেটেড পরীক্ষারই ফলাফল। তারা মনে করেন, যে বিক্রিয়াগুলাের মাধ্যমে অজৈব পদার্থ থেকে জীবনের সরল অণু গঠিত হয়েছিল, সেগুলাে সম্পন্ন হয়েছিল আসলে সমুদ্রের গভীর তলদেশে, বিজ্ঞানী হালডেন যাকে বলেন, ‘উত্তপ্ত লঘু অ্যাপ’ (Hot dilute soup)।
তবে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা আরেকটি সম্ভাবনার কথাও বেশ জোরেসােরে বলছেন। সেটি হল, জৈব অণুগুলাে সমুদ্রের স্যুপে গঠিত হয়নি, বরং তৈরী হয়েছিল পানিতে ডুবে থাকা এক ধরনের পাথুরে খনিজে; আর নয়ত জটিল, আধানযুক্ত কাদামাটির পিঠে। কাদা মাটির কথা বলা হল বটে, তবে এটি মনে রাখতে হবে, আজকের দিনে মাটি বলতে আমরা যা বুঝি, সেসময়কার মাটি ছিল এ থেকে ভিন্ন। জৈব ধ্বংসাবশেষ মিশ্রত জটিল সিলিকেট, যা এখনকার মাটির উপাদান, তা তখনও বিকশিত হয়ে ওঠেনি। আসলে চুর্ণ সিলিকেট, কোয়ার্জ, বা অন্যান্য আকরিকের ভগ্নস্তুপের জলীয় আবরণে আদি বিক্রিয়াগুলাে সম্পন্ন হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
অনুমান করা হয়, শুধু অ্যামাইনাে এসিড তৈরীতেই নয়, অ্যামাইনাে এসিডগুলাে পরস্পর বিক্রিয়া করে (ডিহাইড্রেশন) যে পলিপেপটাইড বা প্রােটো-প্রােটিন গড়েছিল, তার পেছনে প্রাচীন কাদা-মাটি আর খনিজ পদার্থগুলাে একটা অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিল। অন্যান্য বৃহৎ বায়ােপলিমারগুলােও প্রায় একইরকম অনুঘটক দিয়ে প্রভাবিত হয়ে উৎপন্ন হয়েছিল। ব্যাপারটা মােটেই অসম্ভব বা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আজকের দিনেও আমরা দেখি রাসায়নিক শিল্পকারখানাগুলােতে জৈব পদার্থ তৈরীর জন্য অহরহই নানা ধরনের খনিজ ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইউরে-মিলারের পরীক্ষায় বিজারকীয় পরিবেশে অজৈব পদার্থ থেকে জৈব অণু সফলভাবে উৎপন্ন করার পর বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা শুরু হয় জীবনের পরবর্তী ধারাবাহিকতাগুলাে জানবার, বুঝবার। এ প্রসঙ্গে আমেরিকার মায়ামি ইউনিভার্সিটির সিডনি ফক্সের গবেষণার কথা একটু পাঠকদের বলা যাক, কারণ তার গবেষণা থেকেই আদি জীবকোষ তৈরীর একটা স্পষ্ট ধারণ পাওয়া যাবে। মিলারের পরীক্ষায় পাওয়া অ্যামাইনাে এসিড, অ্যাসপারটিক আর গ্লুটামিক এসিডগুলােকে নিয়ে অধ্যাপক ফক্স উত্তপ্ত করলেন – ১৩০ থেকে ১৫০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রায়; ফলে প্রােটিনের মত একটি দ্রব্য উৎপন্ন হল। এর নাম দেওয়া হল তাপীয় প্রােটিনয়েড।
এটি অনেক দিক দিয়েই প্রকৃতিতে পাওয়া প্রােটিনের মত। অধ্যাপক ফক্স, এইসব প্রােটিনয়েডকে পানিতে সিদ্ধ করে ঠান্ডা করে পেলেন অনেকটা আদি কোষের মত দেখতে ঝিল্লিবদ্ধ প্রােটিনয়েড মাইক্রোস্ফিয়ার। অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখলে এগুলােকে একেবারে আদি কোষের মত দেখায়; শুধু তাই নয় – ল্যাবরেটরীতে উৎপন্ন এই মাইক্রোস্ফিয়ার গুলােকে কৃত্রিমভাবে জীবাশ্মে পরিণত করেও দেখা গেছে প্রায় তিনশো কোটি বছর আগেকার প্রাথমিক জীবাশ্ম গুলাের সাথে এর অবিকল মিল!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই মাইক্রোস্ফিয়ারগুলাে কি জীবিত? মানে এদের কি সত্যই কোন প্রাণ আছে? প্রশ্নটি অধ্যাপক ফক্সকে করেছিলেন টিম বেরা (Berra, 1990)। এমনতর বেয়ারা প্রশ্ন করবার কারণও আছে। এই প্রােটিনয়েড মাইক্রোস্ফিয়ারগুলাে প্রােটিনের দুটি স্তরে বিন্যস্ত, এরা বৈদ্যুতিকভাবে সক্রিয়, এর বহির্ভাগটি দেখতে অনেকটা কোষের ঝিল্লির মতই। এদেরকে যদি দ্রবণের মধ্যে বাঁধাহীনভাবে বিচরণের সুযােগ দেওয়া হয়, এরা একই রকমের প্রােটিনয়েড শােষণ করে ‘বৃদ্ধি প্রাপ্ত’ হয়। এরা ঈষ্ট বা ব্যাকটেরিয়ার মতই নড়াচড়া করে, অঙ্কুরিত হয়। কোষ বিভাজনের মত একধরণের বিভাজনও ঘটে এদের।
এটিপি সরবরাহ করা হলে এদের বিচলন ক্ষমতাও বেড়ে যায়। মাইক্রোস্ফিয়ারগুলাে আস্রবণীয় (Osmotic) আর নির্বাচিত বিশােষণমূলক (Selective difussion) ধর্ম প্রদর্শন করে, যা কিনা জীবিত কোষের মধ্যেই কেবল দেখা যায়। তার পরেও এই মাইক্রোস্ফিয়ার গুলাে জীবিত কিনা, টিম বেরার এই প্রশ্নের উত্তরে ফক্স বলেছিলেন, এগুলাে প্রােটো-এলিভ; মানে, ‘জীবন সদৃশ’।
অধ্যাপক ফক্স কিন্তু চাতুরী করে বেরার প্রশ্ন এড়িয়ে যান নি; তিনি এমনতর উত্তর দিয়েছিলেন, কারণ বিজ্ঞানের চোখে প্রাণ আর অ-প্রাণের সীমারেখাটা খুব স্পষ্ট আর পরিস্কার নয়। যেহেতু অজৈব জড় পদার্থ থেকেই প্রাণ বা জীবনের বিকাশ ঘটেছে, সুতরাং জড় জগৎ আর জীব জগতের মাঝামাঝি জায়গায় আমরা সাদামাঠাভাবে একটা সীমারেখা সবসময়ই আঁকতে পারি যেটা অতিক্রম করলে সমস্ত কিছুই জীবিত, আর ওই সীমা না পেরুলে সমস্ত কিছুই প্রাণহীন। আমরা সিরিজের দ্বিতীয় পর্বে ভাইরাস নিয়ে আলােচনা করতে গিয়ে দেখেছি, ভাইরাস এমনিতে ‘মৃতবৎ’, তবে তারা বেঁচে ওঠে অন্য জীবিত পােষকদেহ না জীবিত কোষকে আশ্রয় করে।
কাজেই ভাইরাস বাস করে ওই প্রাণ অ-প্রাণের সীমারেখা বা বর্ডার লাইনের ঠিক মাঝখানে। তবে ভাইরাসই যে প্রাণের সবচেয়ে সরলীকৃত রূপ, তা কিন্তু নয়। ভাইরাসের চেয়েও সরল প্রাণের সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন ভিরইডস (Viroids) এর মধ্যে। এগুলাে মূলতঃ পেঁচানে সরল জেনেটিক পদার্থ দিয়ে তৈরী, যেগুলােকে টেনে লম্বা করলে বেড়ে ৩ ফুটের মত দাঁড়ায়।
এই ভিরইডস জীবাণুর কারণে গাছপালায় ‘Avocado sun blotch’, ‘Coconut cadang cadang’ কিংবা ‘tomato bunchy top’ জাতীয় বিদঘুটে নামের নানা ধরণের রােগের সৃষ্টি হয়। ভাইরাসের মত ভিরইডসদেরও জীবিত হওয়ার জন্য ‘পােষক দেহ’ দরকার হয়, নইলে এরাও জড় পদার্থের মতই আচরণ করে। ভিরইডসই শেষ নয়, এর চেয়েও ক্ষুদ্র পরিসরে বিজ্ঞানীরা জীবনের সন্ধান পেয়েছেন। যেমন ওই প্রিয়নের(Prions) কথাই ধরা যাক।
এগুলাের আকার এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচাইতে ছােট ভাইরাসের একশ ভাগের এক ভাগ থেকে শুরু করে এক হাজার ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত। আর এগুলাে এতই সরল যে এর মধ্যে জেনেটিক উপাদানও নাই, এগুলাে স্রেফ প্রােটিন দিয়ে তৈরী। ভাইরাস আর ভিরইডসের মত এরাও জীবকোষে ঢুকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার দখল নিয়ে নেয়। গবাদি পশু বিশেষত ভেরার মধ্যে স্ক্রাগি (Scrapie) নামে একধরনের রােগের জন্য এই প্রিয়নগুলােকে দায়ী করা হয়।
এই যে কিছুদিন আগে ম্যাড কাউরােগ নিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে এত তােলপার হল, এর পেছনেও কিন্তু দায়ী ওই প্রিয়নেরা। শুধু পশু পাখি নয়, মানবদেহে ‘Multiple sclerosis’, ‘Creutzfeld-Jacob’, ‘Gerstmann-Straussler-Scheinker syndrome’, আর ‘Lou Gehrig’s’ রোগের জন্যেও এই প্রিয়নেরাই সম্ভবত দায়ী।
প্রিয়নেরা বিজ্ঞানীদের জন্য সবসময়ই একটি বিস্ময়। কারণ, জেনেটিক পদার্থ (জিনােম আর নিউক্লিয়িক এসিড) বিহীন এই অদ্ভুতুরে হতচ্ছারা জিনিসটা শুধু প্রােটিন দিয়ে তৈরী হওয়া সত্ত্বেও কোষের অভ্যন্তরে উপযুক্ত পরিবেশে প্রাণের অভিব্যক্তি ঘটাতে পারে, রােগ ছড়াতে পারে। প্রিয়নের অস্তিত্ব জীববিজ্ঞানের এতদিনকার গড়ে ওঠা ‘বিশ্বাসে’ আঘাত করেছে – যেটি বলত, প্রতিটি জীবন্ত অবয়বের অনুলিপির জন্য নিউক্লিয়িক এসিড অত্যাবশ্যক।
এখন জীব-জড়ের পার্থক্যসূচক বর্ডার লাইটি টনতে গিয়ে কিন্তু বিপদেই পড়ব আমরা। এটা কি ভাইরাসের উপর দিয়ে টানা হবে, নাকি প্রিয়নের উপর দিয়ে টানা হবে – এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। আবার, প্রিয়ন, ভিরইডস আর ভাইরাসকে ‘প্রাণ’ হিসেবে, কিংবা প্রাণের সরলতম প্রকাশ হিসেবে আভিহিত করতে অনেকেই আপত্তি তুলবেন।
কারণ, এটা তাে সত্যই যে, এদের প্রাণের নান্দনিক বিকাশ ঘটে তখনই যখন তারা উপযুক্ত জীবদেহ খুঁজে পায়। সে হিসেবে কিন্তু মাইক্রোস্ফিয়ার, যেগুলাের কথা আমরা একটু আগেই আলােচনা করেছি সেগুলােই হয়ত প্রথম জীবন বা জীবের পূর্বসুরী ছিল- একথা স্বীকার করে নিতেই হবে। কারণ মাইক্রোস্ফিয়ারের সাথে প্রােটোসেল বা আদিকোষের মিল অনেক। অধ্যাপক ফক্স যে ল্যাবরেটরীতে মাইক্রোস্ফিয়ারের সন্ধান পেয়েছিলেন, সেই প্রােটিনয়েড মাইক্রোস্ফিয়ার গুলােই আসলে আদি কোষের উৎপত্তিতে অন্তরবর্তী ধাপ ছিল। এ প্রসঙ্গে সিডনী ফক্স বলেন (Fox, 1988) :
প্রােটিনয়েড হচ্ছে জটিল প্রােটিন সদৃশ পদার্থ, এবং মাইক্রোস্ফিয়ার অনেকটা কোষ সদৃশ একক, যা তৈরী হয় প্রােটিনয়েড এবং পানি পরস্পরের সংস্পর্শে আসার ফলশ্রুতিতে। এগুলাে একেবারে আদি ধরণের কোষের ভুমিকা পালন করে, যাদের মধ্যে জীবনের নান্দনিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। জীবনের একক হচ্ছে কোষ, আর আদি জীবনের একক হচ্ছে আদিকোষ বা প্রােটিনয়েড মাইক্রোস্ফিয়ার নামের প্রােটোসেলগুলাে।