কালঃ ৫০ খৃষ্টপূর্ব
এক
সাকেত কখনও কোনো রাজার রাজধানীতে পরিণত হয়নি। বুদ্ধের সমসাময়িক কৌশল-রাজ প্রসেনজিতের একটি রাজপ্রাসাদ এখানে ছিল, কিন্তু রাজধানি ছিল ছয় যোজন দূরে অবস্থিত শ্রাবন্তীতে (সহেট-মহেট)। প্রসেনজিতের জামাতা অজাতশত্রু কৌশলের স্বাধীনতা হরণ করার সঙ্গে সঙ্গে শ্রাবন্তীরও সৌভাগ্য বিলুপ্ত হল। অতীতে সরযু তটে অবস্থিত সাকেত পূর্ব (প্রাচী) থেকে উত্তরের (পাঞ্জাব) যোগাযোগ পথে অবস্থিত থাকায় শুধু জলপথের বাণিজ্যের জন্যই নয়, স্থলপথের বাণিজ্যেরও এক বড় কেন্দ্র ছিল। বহুদিন পযণ্ত তার এই অবস্থা অটুট ছিল।
বিষ্ণগুপ্ত চাণক্যের শিষ্য মৌর্ষ মগ্ধ রাজ্যকে প্রথমে তক্ষশিলা পর্যন্ত, পরে যবনরাজ সেলুকাসকে পরাজিত করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে পশ্চিমে হিরাত এবং আমুদরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিল। চন্দ্রগুপ্ত ও তার মৌর্যবংশের শাসনেও সাকেত বাণিজ্য কেন্দ্রের বেশী কিছু ছিল না। মৌর্যবংশ-ধ্বংসকারী সেনাপতি পুষ্যমিত্র প্রথমে সাকেতকে রাজধানীর মর্যাদা দিয়েছিল, কিন্তু তাও সম্ভবত পাটলীপুত্রের প্রাধন্যকে ক্ষুণ্ণ করে নয়। পুষ্যমিত্র অথবা তার শুঙ্গবংশের শানসকালে বাল্মীকি যখন রামায়ণ রচনা করেন, তখন অযোধ্যার নাম প্রচারিত হল। এইভাবেই সাকেত অযোধ্যা বলে পরিচিত হয়।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, অশ্বঘোষ বাল্মীকির কাব্যের রসাস্বদন করেছিলেন। কালিদাস যেমন চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্যের আশ্রিত কবি ছিলেন, তেমনি বাল্মীকিও যদি কখনও শুঙ্গবংশের আশ্রিত কবি ছিলেন, তেমনি বাল্মাকীও যদি কখনও শুঙ্গবংশের আশ্রিত কবি থেকে থাকেন অথবা কালিদাস যেমন চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য এবং কুমারগুপ্ত এই দুই পিতা-পুত্রকে তাঁর ‘রঘুবংশ’-এ রঘু এবং ‘কুমারসম্ভব’-এ কুমার রুপে চিত্রিত করেছেন, তেমনি বাল্মীকি যদি শুঙ্গবংশের রাজধানীর মহিমাকে উন্নীত করবার জন্যই বৌদ্ধ জাতকের দশরথের রাজধানীকে বারাণসী থেকে সরিয়ে সাকেত বা অযোধ্যায় এনে থাকে এবং শুঙ্গসম্রাট পুষ্যমিত্র বা অগ্নিমিত্রকেই রামরুপে মহিমান্বিত করে থাকেন—তবে বিস্ময়ের কিছু নেই।
সেনাপতি পুষ্যমিত্র আপন প্রভুকে হত্যা করে সমগ্র মৌর্য সাম্রাজ্যকে অধিকার করতে সমর্থ হয়নি। সারা পাঞ্জাব যবনরাজ মিনান্দরের দখলে চলে গেল; এবং পুষ্যমিত্রের পুরোহিত ব্রাহ্মণ পতঞ্জলি-পুষ্যমিত্রের সময়ে এই নগরের নাম সাকেতই ছিল—অযোধ্যা নয়।
পুষ্যমিত্র, পতঞ্জলি এবং মিনান্দরের সময় থেকে আমরা আরও দুশ’বছর পিছিয়ে আসছি। এই সময়েও সাকেতে বড় বড় শ্রেষ্ঠী বসবাস করত। লক্ষ্মীর বসতি ফলে সরস্বতীরও অল্পবিস্তর আগমন হতে লাগল এবং ধর্ম ও ব্রাহ্মণেরা স্বভাবতঃই এসে পড়ল। এইসব ব্রাহ্মণদের মধ্যে ধন-বিদ্যা সম্পন্ন একটি কুল ছিল। এই কুলাধিপতির নাম মুছে গিয়েছে কালের প্রবাহে, কিন্তু কুলাধিপত্মীর নাম অমর করে রেখেছে তার পুত্র।
এই ব্রাহ্মণীর নাম সুবর্ণাক্ষী, তার চোখ ছিল সোনার মতো কাঁচাহলুদ রঙ-এর। তৎকালে কাঁচাহলুদ রঙ বা নীল রঙ-এর চোখ সারা ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় জাতের মধ্যেই দেখতে পাওয়া যেত। কাঁচাহলুদ রঙ-এর চোখ থাকা কোন দোষের ছিল না। ব্রাহ্মণী সুবর্ণাক্ষীর এক পুত্র তার মতোই সুবর্ণনেত্র এবং পিঙ্গল কেশধারী ছিল। তার গায়ের রঙ ছিল মায়ের মতোই সুগৌর।
দুই
সময়টা বসন্তকাল। আমের মঞ্জরী চারিদিকে আপন সুগন্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে। বৃক্ষরাজি পুরনো পত্রসমূহ ত্যাগ করে নতুন পত্রাবলীতে ভূষিত হয়েছে। চৈত্রের শুক্লানবমী তিথি। সাকেতের নর-নারী সন্তরণ প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে সাকেতবাসীরা বসন্তোৎসব পালন করে। এই সাঁতার প্রতিযোগতিরায় তরুণ-তরুণী উভয়েই একঘাটে নগ্নদেহে অংশগ্রহণ করে। তরুণীদের মধ্যে বহুসংখ্যক কর্পূরশ্বেত যবনী (গ্রীক-নারী) ছিল, যাদের সুন্দর-সুডৌল দেহ যবন শিল্পীর নির্মিত অনুপম মর্মর মূর্তির অনুরূপ।
আর ছিল সোনালী বা পীত কেশধারিণী সুবর্ণাক্ষী ব্রাক্ষণকুমারীগণ, সৌন্দর্যের দিক থেকে তারা যবনীদের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। এ ছাড়া ছিল ভ্রমরকৃষ্ণ কেশবিশিষ্টা ধূসরবর্ণা বহুসংখ্যক বৈশ্য তরুণী, তাদের তারুণ্যের মাদকতাও কম আকর্ষণীয় ছিল না। আজকের দিনে সাকেতের প্রতিটি কোণ থেকে কৌমার্যরুপরাশি সরযুতীর এসে উপস্থিত হয়েছে। তরুণীদের মতো নানা কুলের তরুণেরাও গাত্রাবরণ উম্মেচন করে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়বাড় জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল।
তাদের ব্যায়ামপুষ্ট সুডৌল সুন্দর দেহ কর্পূরশ্বেত, ধূসর প্রভূতি বিভিন্ন রঙের। তরুণ-তরুণীদের সৌন্দর্য উপভোগ করবার জন্য আজকের এই প্রতিযোগিতা মহোৎসবের চেয়ে বড় আর কোনো উৎসবেরই অনুষ্ঠান হত না। প্রতি বছর এই উৎসবের ভিতর দিয়ে কতজনেই না স্বয়স্বরা হয়ে উঠত। বাপ মায়েরা এ বিষয়ে তরুণ-তরুণীদের উৎসাহিতই করতেন। তখনকার দিনে এটাই ছিল সর্বজনমান্য শিষ্টাচার।
নৌকা থেকে প্রতিযোগী তরুণ-তরুণীরা সরযূর জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সরষূর নীল জলে কেশরাশিকে জলের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে দু’হাতে জল কেটে কেটে এগিয়ে যেত লাগল। এদের কাছে কাছে থেকে বহু ক্ষুদ্র নৌকা চলছে। নৌকার আরোহীরা প্রতিযোগী তরুণ-তরুণীদের উৎসাহ দিচ্ছে বা কেউ ক্লান্ত হয়ে পড়লে তাকে নৌকায় তুলে নিচ্ছে।
হাজার হাজার সন্তরণকারীর মধ্যে কারও পক্ষে ক্লান্ত হয়ে হার স্বীকার করাই স্বাভাবিক ছিল। সকল প্রতিযোগীই সর্বোগ্রে যাবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছিল। নদীতটে পৌঁছাবার যখন কিছুটা বাকী, তখন বহু প্রতিযোগীই শিথিল হয়ে পড়তে লাগল। পিঙ্গল এবং পাণ্ডুশ্বেতকেশী দু’জনেই সকলের আগে গিয়ে সমগতিতে পাশাপাশি চলতে আরম্ভ করেছে। তীরের দিকে আরও এগিয়ে গেল তারা-সকলেই ভাবছিল, এদের ভেতর থেকে কেউ একজন আগে বেরিয়ে যাবে; কিন্তু দেখল দু’জনেই গতিই সমান। নৌকা-রোহীদের মধ্যে কেউ কেউ এ-ও শুনল যে, ওদের মধ্যে একজন অপরকে আগে যাবার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে।
দু’জনে এক সঙ্গেই তীরে এসে পৌঁছাল। এদের মধ্যে একজন তরুণ, অপরটি তরুণী। উপস্থিত সকলেই হর্ষধ্বনি করে অভিনন্দন জানাল। ওরা দু’জন আপন আপন পোশাক পরে নিল। দর্শকরা সোৎসাহে পুষ্পবর্ষণ করেছে, তরুণ-তরুণী দু’জন পরস্পরকে কাছ থেকে দেখছিল। উপস্থিত সকলে তাদের শুধু সন্তরণ কৌশলেরই নয়, সৌন্দর্যেরও প্রশংসা করতে লাগল।
কে একজন প্রশ্ন করল,“কুমারীকে তো আমি চিনি, কিন্তু কে এই তরুণ সৌম্য?”
“সুবর্ণাক্ষীপুত্র অশ্বঘোষের নাম শোনোনি?”
“না, আমি নিজেদের পুরোহিত কুলকেই শুধু জানি। আমরা হলাম ব্যবসায়ী, এত খবর রাখবার ফুরসৎ কোথায়?”
তৃতীয়, জন বলল,“আরে সাকেত থেকে অশ্বঘোষের বিদ্যার খ্যাতি দূর-দূরান্তর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, সমস্ত বেদ এবং সকল বিদ্যাতেই পারদর্শী।”
প্রথম, “কিন্তু ওর বয়স তো চব্বিশের বেশী হবে না।”
তৃতীয়,“হ্যাঁ, ওই রকম হবে। এর কবিতা লোকে সুর করে পড়ে আর গায়।’
দ্বিতীয়, জন জিজ্ঞেস করল,“এই কি সেই কবি অশ্বঘোঘ, যার প্রেমগীতি আমাদের তরুণ-তরুণীদের মুখে মুখে ফেরে?”
তৃতীয়,“হ্যাঁ, এই সেই অশ্বঘোষ। কিন্তু কুমারীর কি নাম সৌম্য?”
প্রথম, “সাকেতে আমাদের যবন-কুল-প্রমূখ এবং কোশলের বিখ্যাত ব্যবসায়ী দত্তমিত্রের পুত্রী প্রভা।”
দ্বিতীয়,“তাই বল! এ রকম সৌন্দর্য খুব কমই দেখা যায়। দেহের গড়নে কত কোমল মনে হয়, অথচ সাঁতার কি পটু!”
প্রথম,“এর মা-বাপ দু’জনেরই চমৎকার স্বাস্থ্য, দু’জনেরই বেশ বলিষ্ঠ দেহ।”
নগরোদ্যানে গিয়ে বিশেষ সম্মানের সঙ্গে সকলের কাছে এই দুই প্র্রতিযোগীর পরিচয় দেওয়া হল, এবং দু’জন লজ্জাবনত মুখে পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হল।
তিন
সাকেতের পুষ্পোদ্যান ছিল পুষ্যমিত্রের শাসনের স্মারক। এর র্নিমাণ কাজে সেনাপতি প্রচুর অর্থ এবং শ্রম নিয়োগ করেছিলেন। যদিও এখন পুষ্যমিত্র বংশের শাসন আর নেই, সাকেতও অন্য কোনো রাজার রাজধানীতে পরিণত হয়নি, তবু নিগমকে (নগর-সভা) সাকেতের গৌরব মনে সুরক্ষিত করে রাখা হয়েছে, যেমন রাখা ছিল দুশ’বছর আগের পুষ্যমিত্রের শাসনকাল। উদ্যানের মধ্যস্থলে এক পুষ্করিণী।
পুষ্করিণীয় স্বচ্ছ নীল জলে নানা বর্ণের পদ্ম ফুটে থাকত এবং হংসমিখুনের দল সাঁতার কেটে ফিরত, চারিদিকে শ্বেতপাথরের বাঁধানো ঘাট যায় সোপানশ্রেণী স্ফাটকের মতোই স্বচ্ছ। সরোবরের ধার ঘেঁষে সবুজ দূর্বাচ্ছাদিত প্রশস্ত তটভুমি। এর ওপর কোথাও গোলাপ, জুঁই, বেল ইত্যাদি ফুলের কেয়ারি, আবার কোথাও তমাল, বকুল, অশোক বৃক্ষের ছায়া। আবার কোথাও বা লতাগুল্মে ঘেরা কুমার-কুমারীগণের ক্রীড়াক্ষেত্র। উদ্যান মধ্যে মাটি, পাথর আর সবুজে আচ্ছাদিত কয়েকটি মনোরম পাহাড়। উদ্যানের কোনো কোনো জায়গায় ফোয়ারা থেকে ঝরণা-ধারায় জল উৎসারিত হচ্ছে।
অপরাহ্ণে এক লতাগুল্মের কাছে সাকেতের তরুণ-তরূণীদিগের ভিড়, কিন্তু চারিদিকে নীরবতা। সকলেই লতাগুল্মের দিকে কান পেতে ছিল, আর লতাগুল্মের ভিতরে শিলাচ্ছাতিদ আসনে বসে সেই তরুণ, এক মাস আগে সন্তরণ প্রতিযোগিতায় যে এক তরুণীর সঙ্গে যুগ্মবিজয়ী হয়েছিল। তার দেহে মস্বণ সুক্ষ্ম কাপড়েরর পোশাক, দীর্ঘ পিঙ্হল কেশরাশি মাথায় জটার আকারে বাঁধা, হাতে বীণা—তরুণের আঙ্গুল স্বচ্ছন্দ গতিতে মনোহর সুর সৃষ্টি করে চলেছে।
অর্ধনুদ্রিত নয়নে স্বরচিত গীত গেয়ে গাওয়ার তাগিদ ছিল, কারণ গায়ক-কবি জানে, তার শ্রোতাদের মধ্যে প্রাকৃত প্রেমিকের সংখ্যাই বেশী। কবি নিজের নবরচিত ‘উর্বশী-বিয়োগ’ গেয়ে শোনাল—উর্বশী লয়প্রাপ্ত হয়ে গেল আর পুরুরবা উর্বশীকে আপ্সরা (জলবিহারিণী) বলে ডাকতে ডাকতে পর্বত, সরোবর, বন, সকল জায়গায় খুঁজে ফিরতে লাগল। অপ্সরার দর্শন সে পেল না, কিন্তু তার কণ্ঠস্বর বাতাসে ভেসে এল। গানে পুরুরবার অশ্রুবর্ষণের সময় গায়কেরও চোখের জল গড়িয়ে পড়তে লাগল এবং সমগ্র শ্রোতুমণ্ডলী ও অভিভূত হয়ে পড়ল সেই গান শুনে।
সঙ্গীত শেষ হবার পর এক এক করে সবাই চলে যেত লাগল। অশ্বঘোষ বাইরে এলে কিছু তরুণ-তরুণী তাকে ঘিরে দাঁড়াল। তার মধ্যে আর্ট্র আরক্ত-নয়না প্রভাও ছিল। একজন তরুণ এগিয়ে এসে বলল, “মহাকবি!”
“মহাকবি! আমি যে কবিই নই সৌম্য!’
“আমাকে আমার শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দাও কবি। সাকেতে আমাদের যবনদের একটি ছোট নাট্যশালা রয়েছে।”
“নাচের জন্য? আমারও নাচের সখ আছে।”
“নাচের জন্যেই শুধু নয়, ওখানে আমরা অভিনয়ও করে থাকি।”
“অভিনয়!”
“হ্যাঁ কবি, কিন্তু যবন-রীতির অভিনয়ে এক বিশেষত্ব আছে। তাদের অভিনয়ে বিভিন্ন স্থান-কালের পরিচায়ক বড় বড় চিত্রপট থাকে, আর সমস্ত ঘটনাকেই বাস্তবের রুপে দেখাবার চেষ্টা করা হয়।”
“কি পরিতাপের কথা, সৌম্য! সাকেতে জন্মগ্রণণ করেও আমি এমন অভিনয় এখনও দেখলাম না!”
“আমাদের অভিনয়ের দর্শক এখানকার যবন-পরিবার এবং কিছু ইষ্ট মিত্র—এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ, এ জন্য বহু সাকেতবাসী যবন-অভিনয়…..”
“নাটক বলা উচিত, সৌম্য!”
“হ্যাঁ, যবন-নাটক। আজ আমরা এক নাটক মঞ্চস্থ করব। আমাদের ইচ্ছা তুমিও আমাদের নাটক দেখ।”
“নিশ্চয়ই। তোমাদের মতো মিত্রগুলীর অসীম অনুগ্রহ।”
অশ্বঘোষ ওদের সঙ্গে চলল। নাট্যশালায় মঞ্চের কাছে তাকে বসতে দেওয়া হল। অভিনয় হচ্ছিল কোনো এক যবন বিয়োগান্ত নাটক প্রাকৃত ভাষায়, যবন কুলপুত্র-পুত্রীগণ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছিল। অভিনেতা এবং অভিনেত্রীগণের পোষাক-পরিচ্ছদও ছিল যবন-দেশীয়দের মতো। বিভিন্ন দৃশ্যপট যবনরীতি অনুযায়ী অঙ্কিত ছিল। নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করছিল অশ্বঘোষের পরিচিতা প্রভা।
তার অভিনয় কৌশল দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল সে। অভিনয়ের মাঝে বিরতির সময় পূর্বপরিচিত যবন তরুণ ‘উর্বশী-বিয়োগ’ গানের অনুরোধ জানাল। কোনো রকম আপত্তি না করে বীণা হাতে অশ্বঘোষ রঙ্গমঞ্চের ওপর উঠে এল। তারপর স্বরচিতা গানের গভীরতায় নিজে কাঁদল অপরকেও কাঁদাল।
নাটক শেষ হয়ে যাবার পর সমস্ত অভিনেতা, কুমার-কুমারীদের সঙ্গে কবির পরিচয় করানো হল। অশ্বঘোষ বলল, “সাকেতে থেকেও আমি এই অনুপম বলা সম্বন্ধে অজ্ঞ রয়ে গেছি। মিত্রমণ্ডলীর কাছে আমি অসীম কৃতজ্ঞ যে, তোমরা আমাকে এক অজ্ঞাত প্রভালোক দর্শন করালে।”
‘প্রভালোক’ কথাটি উচ্চারণ করার সময় কয়েকজন-তরুণী প্রভার দিকে তাকিয়ে মুখে টিপে হাসল। অশ্বঘোষ পুনরায় বলল, “আমার একটা কথা মনে হচ্ছে। তোমরা যেমন আজ যবন-নাটকের প্রাকৃত রূপান্তর অভিনয় করলে—মনে হয়, চেষ্টা করলে আমরা স্বদেশের কথা নিয়ে চমৎকার নাটক চরনা করতে পারি।”
“আমাদেরও পূর্ণ আস্থা আছে কবি, তুমি ইচ্ছা করলে মুল যবন-নাটক থেকেও ভালো নাটক রচনা করতে পার।”
“এতটা বল না, সৌম্য! যবন-নাট্যকারদের শিষ্য হওয়ার যোগ্যতাই যথেষ্ট, আমি তাই চেষ্টা করব। আচ্ছা আমি যদি ‘উর্বশী-বিয়োগ’ নিয়ে নাটক লিখি?”
“তা’হলে আমরা তার অভিনয়ও করতে প্রস্তুত, কিন্তু পুরূরবার ভুমিকায় তোমাকেই অভিনয় করতে হবে।”
“আমার আপত্তি নেই, সামান্য অভ্যাস করলে তেমন মন্দ অভিনয় করব না।”
“আমরা চিত্রপটও তৈরী করিয়ে নেব।”
“চিত্রপটের ওপর আমাদের পুরূরবার দেশের দৃশ্য অঙ্কিত করতে হবে। চিত্র অঙ্কন আমিও কিছু কিছু করি। সময় পেলে আমিও সাহায্য করতে পারব।”
“তোমার নির্দেশ মতো দৃশ্যাঙ্কন করা হবে। পাত্র-পাত্রীর বেশভূষা সম্বন্ধেও তোমাকেই নির্দেশ দিতে হবে, সৌম্য!”
“আর পাত্র-পাত্রী নির্বাচন?”
“পাত্র-পাত্রী তো এখনই ঠিক করা যাবে না, সৌম্য! তবে তাদের সংখ্যা কম রাখতে হবে।”
“কত রাখা উচিত?”
“ষোলো থেকে কুড়ি জন আমরা অনায়াসে সংগ্রহ করতে পারবে।”
“আমি ষোলো পর্যন্তই রাখার চেষ্টা করব।”
“পুরূরবা তো তুমিই সাজবে, সৌম্য! আর উর্বশী-চরিত্র আমাদের প্রভাকে দিয়ে কেমন হবে? আজ তো তুমি আর অভিনয় দেখলে।”
“আমার অনভ্যস্ত চোখে নিখুঁত মনে হয়েছে অভিনয়।”
“তা’হলে প্রভাকেই উর্বশী হতে হবে। আমাদের দলে যাকে যে কাজ দেওয়া হবে তাকে তাই করতে হয়।”
প্রভার চোখ কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হয়ে উঠেছিল, কিন্তু দলপতি তরুণের “কি প্রভা?” বলার পর প্রভা সংযত হয়ে জবাব দিল, “আচ্ছা।”
চার
অশ্বঘোষ, যবন-তরুণ বুদ্ধপ্রিয়ের সঙ্গে কয়েকটি যবন নাটকের প্রাকৃত রূপান্তর পড়ল এবং তাদের কলাকৌশল নিয়ে আলাপ-আলোচনা করল। যবন কলাবিদ্যাকে স্মরণীয় করে রাখবার জন্যে নাটকের চিত্রপট সমূহের সে নামকরণ করল যবনিকা। সংস্কৃত, প্রাকৃত,গদ্যপদ্য দু’রকমভাবেই লিখল সে। এই সময় প্রাকৃত ও সংস্কৃতের এতটা আবেদন ছিল যে, সম্ভান্ত্র পরিবারগুলোতে তা অনায়াসবোধ্য ছিল। এই ‘উর্বশী-বিয়োগ’ হল প্রথম ভারতীয় নাটক এবং অশ্বঘোষ প্রথম ভারতীয় নাট্যকার। এটাই কবির প্রথম প্রয়াস, তবু তা পরবর্তী ‘রাষ্ট্রপাল’, ‘সারিপুত্ত’ ইত্যাদি নাটক থেকে কম সুন্দর হয়নি।
রঙ্গমঞ্চ তৈরীর সময়, অভিনয় অভ্যাসকালে খাওয়া-দাওয়ার কথাও মনে থাকত না তরুণ কবির। এই সময়গুলোই সে জীবনের সুন্দরতম সময় বলে মনে করত। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রভা আর সে পরস্পরের সঙ্গ লাভ করত।
সাঁতারের প্রতিযোগিতার দিন তাদের হৃদয়ে যে প্রেমবীজ রোপিত হয়েছিল এখন তাই অঙ্কৃরিত হতে থাকল ধীরে ধীরে। যবন তরুণ-তরুণীর অশ্বঘোষকে আত্মীয়র মতোই দেখত কাজেই এ ব্যাপারে সহায়ক হওয়াই তারা সৌভাগ্য মনে করত। একদিন অশ্বঘোষ নাট্যশালার বাইরে অবস্থিত ক্ষুদ্র উদ্যানে এসে একটা আসনের ওপরে বসল। এই সময়ে প্রভাও সেখানে এসে হাজির হল। প্রভা তার স্বাভাবিক মধুর কণ্ঠে বলল, “উর্বশী-বিয়োগ’ রচনা করবার সময় তোমার মনে কি ছিল কবি?”
“উর্বশী আর পুরূরবার কাহিনী।”
“কাহিনী তো আমিও জানি, কিন্তু উর্বশীকে অপ্সরা রূপে তুমি বার-বার সম্বোধন করছিলে কেন!”
“উর্বশী যে অপ্সরাই ছিল, প্রভা!”
“তা ছাড়া তুমি উর্বশীর বিয়োগের পর নদী, সরোবর, পর্বত, বন সব জায়গাতে পুরূরবাকে বিহ্বল অণ্বেষণকারীরূপে চিত্রিত করেছ।”
“পুরূবাকে ঐ অবস্থায় ওটাই স্বাভাবিক ছিল।”
“সব শেষে ‘উর্বশী-বিয়োগ’-এর গায়ক লতাকুঞ্জে বসে অশ্রুধারাকে বীণার মতো গীতসঙ্গী করে নিয়েছিল কেন?”
“গায়ক ও অভিনেতার এমনি তন্ময়ভাবে এসে যাওয়াই স্বাভাবিক,প্রভা!”
“উহু,তুমি আমাকে সত্যি কথাটাই বলতে চাইছ না।”
“কেন? তোমান কি মনে হয়?”
“আমার মনে হয়, তুমি পুরাণের কোনো উর্বশীর গান রচনা করনি।”
“তবে?”
“তোমার উর্বশী হচ্ছে—উর-বশী (হৃদয়ের অধিষ্ঠাত্রী), আর সেই অপ্সরা ছিল—অপ অর্থাৎ সরযূর জল, সরা অর্থে সন্তরণকারিণী।”
“তারপর?”
“তোমার উর্বশীকে পুরূরবা হিমালয়ের মতো পর্বত বা কোনো বনভূমি, নদী, সরোবর, এ সব খুঁজে ফেরেনি, তোমার পুরূরবা উর্বশীকে খুঁজে ফিরছিল সাকেতের সরষু নদীতে, পুষ্পোদ্যানের ভিতরকার সরোবর, আর লতাগুল্মের ভিতরে।”
“তারপর?”
“পুরাণোল্লিখিত কোনো পুরূরবার দুঃখে বিগলিত হয়ে তোমার চোখের জল ঝরেনি, জল ঝরেছিল তোমার নিজেরই তপ্ত হৃদয়কে শান্ত করতে।”
“এ-বারে আমিও একটা কথা বলব প্রভা?”
“বল, এতক্ষণ তো আমিই অনর্গল বকে গেলাম।”
“সেদিন লতাকুঞ্জ থেকে বেরিয়ে আসবার সময় আমি তোমার এই মনোহর নীল নয়ন দুটি আমার চেয়েও আরক্ত এবং সিক্ত দেখেছিলাম।”
“তোমার গান দিয়ে আমাকে কাঁদিয়েছিলে কবি।”
“আর তোমার বিরহ দিয়ে আমাকে গীত রচনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল।”
“কিন্তু কবি, তোমার গানের উর্বশী ছিল পাষাণী! অন্তত তুমি সেইভাবেই তাকে চিত্রিত করেছিল।”
“তার কারণ, আমি নিরাশ হয়ে পড়েছিলাম।”
“কি ভেবে?”
“আমার মনে হয়েছিল এই অচিরপ্রভাকে (বিদ্যুৎ) আমি আর কখনও দেখবার সৌভাগ্য লাভ করব না—সে কবেই হয়ত ভুলে গেছে আমাকে।”
“তুমি এতটা নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলে কবি?”
“যতক্ষণ পর্যন্ত আত্মবিশ্বাসের অন্য কোনো অবলম্বন না পাওয়া যায়, ততক্ষণ নিজেকে নিঃস্ব ছাড়া আর কিছুই ভাবা যায় না প্রভা।”
“তুমি শুধু সাকেতেরই নও, এই বিস্তৃত ভূখণ্ডের মহিমান্বিত কবি। সাকেতের সন্তরণ প্রতিযোগিতায় বিজেতা বীর তুমি। তোমার বিদ্যার খ্যাতি সাকেতবাসীর মুখে মুখে। আর তোমার সম্পর্কে তরুণীদের মনোভাব বলতে গেলে বলতে হয়, সাকেতের সুন্দরীগণ তোমাকে চোখের মণি করে রাখতে চায়।”
“কিন্তু ও সবে কি হবে? আমার কাছে আমার উর্বশীই সবটুকু। সেই সন্তরণ প্রতিযোগিতার পর যখন দু’সপ্তাহ তার দখো পেলাম না, তখন আমার মনে হতে লাগল যেন এ জীবনের কোনো মূল্য নেই। সত্যি বলছি, আমার হৃদয়কে এত দুর্বল হয়ে পড়তে আর কখনও দেখিনি। আর িএক সপ্তাহ যদি তোমাকে দেখতে না পেতাম হা’হলে কি যে করে বসতাম বলতে পারি না।”
“এত স্বার্থপর হয়ো না। তুমি তোমার দেশের এক অমর কবি। দেশ তোমার কাছে কত আশা রাখে। তুমি কি জানো, তোমার এই ‘উর্বশী-বিয়োগ’ নাটকের কত খ্যাতি?”
“আমি তো কিছুই শুনিনি।”
“গত সপ্তাহে এক ব্যবসায়ী ভরূকচ্ছ (ভড়ৌচ) থেকে এখানে এসেছিল। ভরূকচ্ছে যবন নাগরিকেরা বহু সংখ্যায় বাস করে। আমরা সাকেতের যবনরা তো হিন্দু বনে গেছি, কিন্তু ভরূকচ্ছাবাসী যবনেরা আপন ভাষা বিস্মত হয়নি। যবন দেশগুলো থেকে ভরূকচ্ছতে ব্যবসায়ী এবং বিদ্বান ব্যক্তিদের আগমন হয়ে থাকে। আমার এই বন্ধুটি যবন-সাহিত্যে পণ্ডিত, সে তোমার এই নাটকের অনুলিপি পড়ে শ্রেষ্ঠ দুই যবন-নাট্যকার এমপীদোকল এবং য়ুরোপিদ্এর প্রতিভার সঙ্গে তোমার তুলনা করেছে। সে এই নাটকের অনুলিপি নিয়ে গেছে। ভরূকচ্ছ থেকে মিশরে অনবরতই জলপোত যাতায়াত করে। এইসব কথা যখন আমার কানে এল, তখন অসীম গর্বে আমার বুক ভরে উঠল।”
“তোমার হৃদয়ের এই গর্বটুকুই আমার জীবনসর্বস্ব,প্রভা!”
“তোমার নিজের মূল্য তুমি জানো না, কবি।”
“আমার এই মূল্যের উৎস তুমিই প্রভা! আর এখন তা আমার অজানা নেই।”
“না না, এটা উচিত নয়। প্রভার প্রেমিক অশ্বঘোষ আর মহান কবি অশ্বঘোষকে পৃথক দৃষ্টিতে দেখাই তোমার কর্তব্য। প্রভার প্রেমিক অশ্বঘোষের জন্য যা কিছু চাও কর, কিন্তু মহান কবিকে এর অনকে উর্ধ্বে উঠতে হবে, সমগ্র বিশ্বের দরবারে তার প্রতিভাকে ছড়িয়ে দিতে হবে।”
“তুমি যেমন বলবে আমি সেইভাবেই চলব প্রভা।”
“নিজেকে এত বড় সৌভাগ্যশালিনী রূপে কখনই কল্পনা করতে পারিনি।”
“কেন?”
“মনে হত, তুমি আমাকে ভুলে গিয়ে থাকবে।”
“এত সাধারণ ছিলে তুমি?”
“তোমার সামনে তাই ছিলাম, এখনও আছি।”
“তোমাকে দেখেই কবিতার এক নতুন উৎসের সন্ধান পেলাম আমি। আমার কবিতায় এখন নতুন প্রেরণা, নতুন আনন্দ। ‘উর্বশী-বিয়োগ’ গীত আর নাটক দুই-ই তোমার প্রেরণায় প্রাণবন্ত। নাটককে আমি স্বদেশের নিজস্ব বস্তুরূপে গড়ে তুলছি প্রভা! কিন্তু তুমি কেন ভাবলে যে, আমি তোমাকে ভুলে যাব?”
“কোনো দিক থেকেই আমি নিজেকে তোমার উপযুক্ত ভাবতে পারিনি। তারপর যখন তোমার গুণাবলীর পরিচয় পেলাম তখন তোমার আশা একবারেই ত্যাগ করলাম। সাকেতের সুন্দরীদের শুধু তোমার নামেই উণ্মাদ হয়ে উঠতে দেখতাম—এ থেকেও নিশ্চয়ই আশা করবার কিছু ছিল না। তা’ছাড়া শুনেছিলাম তুমি উচ্চ কুলের ব্রাহ্মণ। যদিও আমি ব্রাহ্মণকুলের পরবর্তী উচ্চকুলজাত যবন-রাজপুত্রের কন্যা, তবু যে ব্রাহ্মণকুল মাতা-পিতা থেকে সাত পুরুষ উর্ধ্ব পর্যন্ত সম্পর্কিতের খোঁজ-খবর না নিয়ে বিয়ে করে না তার কি করে আমাদের প্রেমকে স্বাগত জানাবে?”
“বড় দুঃখের বিষয় প্রভা, অশ্বঘোষ তোমায় এইভাবে ব্যথিত করে তুলেছিল।”
“তা’হলে তুমি…” প্রভা বলতে বলতে থেমে গেল।
প্রভার অশ্রুপূর্ণ নয়ন চুম্বন করে, তার কণ্ঠলগ্ণ হয়ে অশ্বঘোষ বলল, “ অশ্বঘোষ চিরদিন তোমরাই থাকবে প্রভা। তুমি আর তাকে পর ভাবতে পারবে না।”
প্রভার দুই চোখ বেয়ে টস্টস্করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল, আর অশ্বঘোষ তার কণ্ঠলগ্ন হয়ে সেই জল মুছিয়ে দিতে থাকল।
‘উর্বশী-বিয়োগ’ একাধিকবার অতি চমৎকারভাবে অভিনীত হল। সাকেতের সমস্ত সম্ভ্রান্ত নর-নারী এই নাটকের অভিনয় দেখল। এর আগে তারা কোনোদিন ভাবতেই পারেনি যে, নাট্যকলা এত পূর্ণ, অভিনয় এত উচ্চশ্র্রেণীর হতে পারে। শেষ দৃশ্যে যবনিকা পতনের পর কয়েকবারই অশ্বঘোষ মঞ্চে উঠে বলেছে, ‘আমি এই নাটকের সব কিছুই যবন রঙ্গমঞ্চ থেকে সংগ্রহ করেছি’, কিন্তু তার নাটক এতটা স্বদেশী প্রভাবাপন্ন ছিল যে, কেউই তার কোনোখানে বিদেশীয়ানার এতটুকুও গন্ধ পায়নি।
অশ্বঘোষের সংস্কৃত ও প্রাকৃত গীত এবং কবিতা সাকেত এবং কোশলের সীমা অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়েছিল, কিন্তু নাটক ছড়িয়ে পড়ল আরও অনেক দূর পর্যন্ত। উজ্জয়িনী, দশপুর, সুপ্পারক, ভরূকচ্ছ, শাকলা (শিয়ালকোট), তক্ষশিলা, পাটলিপুত্র ইত্যাদি মহানগরীর যেখানে বহুল সংখ্যায় যবনরা বসবাস করত এবং তাদের নাট্যশালা ছিল সে সব জায়গায় অশ্বঘোষের নাটক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। রাজা-রাজড়া, ব্যবসায়ী সকলের দ্বারা সমানভাবে সমাদৃত হল সেইসব নাটক।